লউঙ্গী ভুইয়াঁ, আনন্দ মহিন্দ্রা। ছবি: সংগৃহীত।
জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ৩০টা বছর তিনি উৎসর্গ করে দিয়েছেন তাঁর গ্রামের জন্য। বিহারের গয়া জেলার লউঙ্গী ভুইয়াঁর নাম আজ নেটাগরিকরা অনেকেই জেনে গিয়েছেন। যিনি একার হাতে তিন কিলোমিটার লম্বা খাল কেটে গ্রামের চাষের জমি, পুকুরে জলের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর সেই অসাধ্য কাজের জন্য পুরস্কার স্বরূপ একটি ট্র্যাক্টর উপহার দিলেন মহিন্দ্রা অ্যান্ড মহিন্দ্রার চেয়ারম্যান আনন্দ মহিন্দ্রা।
সংবাদমাধ্যমকে লউঙ্গী ভুইয়াঁ তাঁর এই লড়াইয়ের কাহিনি জানিয়েছেন। যৌবনে তাঁর বয়সের অন্যান্যরা যখন প্রত্যন্ত এই গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি দিয়েছেন জীবিকার আশায়, তিনি তখনও নিজের মাটিকে ভালবেসে থেকে গিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা ছিল, গ্রামে চাষের জন্য জলের যোগান ছিল না ঠিক মতো, বর্ষার জলই ভরসা। কিন্তু পাহাড় থেকে যদি সেই বর্ষার জল খাল কেটে সোজা গ্রামে নিয়ে আসা যেত তবে খুব সুবিধা হত, পুকুর ভর্তি থাকত। এই কথা ভেবেই এবার শুরু হয় তাঁর জলযুদ্ধ।
প্রতিদিন সকালে গবাদি পশুদের চরাতে সামনের জঙ্গল-পাহাড়ের দিকে চলে যেতেন, সঙ্গে নিয়ে যেতেন কোদাল, ঝুড়ি। গবাদি পশুগুলিকে বেঁধে রেখে তিনি শুরু করতেন তাঁর ‘একক যুদ্ধ’, খাল কাটা। দিনের পর দিন মাসের পর মাস ধৈর্য, জেদকে সম্বল করে কোদাল চালিয়ে গিয়েছেন পাথুরে মাটিতে। কেউ তাঁকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি।
৩০ বছরের সেই অক্লান্ত চেষ্টায় অবশেষে তিন কিলোমিটার লম্বা খাল কেটে ফেলেন লউঙ্গী ভুইয়াঁ। সেই খবর সংবাদমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেয়ে যায়। স্থানীয়রাও তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। ‘মাউন্টেনম্যান’ দশরথ মাঁঝির সঙ্গেই এবার উচ্চারণ হতে শুরু করে গয়া থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গ্রামের লউঙ্গী ভুইয়াঁর নাম।
আরও পড়ুন: এ যেন আর এক বিদ্যাসাগর, রাস্তায় মায়ের পাশে বসে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে কিশোরী
পাহাড় থেকে নেমে আসা বর্ষার জল নদী থেকে খালের মাধ্যমে এখন লউঙ্গীর কোঠিওয়ালা গ্রামে আসছে। এর ফলে চাষের কাজে যেমন সারা বছর জলে যোগান বেড়েছে। তেমন ভরা জলাশয়গুলি তেষ্টা মেটাচ্ছে গবাদি পশুদের।
আরও পড়ুন: উপহারে যেমন টাকা, তেমন খাবার, নিমন্ত্রণে অবাক ঘোষণা
সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, লউঙ্গীর এই কাহিনি শুনে তাঁকে একটি ট্র্যাক্টর উপহার দিয়েছেন শিল্পপতি আনন্দ মহিন্দ্রা। আনন্দ মহিন্দ্রা এমনিতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সক্রিয়। ফলে লউঙ্গীর খবর তাঁর চোখে পড়তেই তিনি তাঁকে ট্র্যাক্টর উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শনিবার আনন্দ মহিন্দ্রা তাঁদের কোম্পানির এরিয়া অফিসারকে বলেন লউঙ্গীকে একটি ট্র্যাক্টর পৌঁছে দিতে। সেই দিনই ট্রাক্টর তুলে দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। আনন্দ মহিন্দ্রার এমন উদ্যোগকে প্রশংসার চোখে দেখছেন নেটাগরিকরা।
দেখুন আনন্দ মহিন্দ্রার পোস্ট:
You & your team are simply the best @hsikka1 Can’t believe I proposed gifting Laungi Bhuiyan—Bihar’s ‘CanalMan”—a tractor only yesterday morning & by late yesterday evening you had delivered it to him! Well done, & my gratitude to our dealer partner as well. pic.twitter.com/EFCBsrgPq2
— anand mahindra (@anandmahindra) September 20, 2020