জনমুখী প্রকল্পে হাত উপুড় করে ভোটের বাক্সে বাজিমাত করে ফিরেছেন নীতীশ কুমার। মহিলা, যুব এবং প্রবীণ নাগরিকদেরও একাংশ বিহারে এনডিএ-কে ঢেলে সমর্থন করেছেন বলে শাসক শিবিরের মত। কিন্তু ভোটার মন জয় করতে গিয়ে কোষাগার থেকে খরচ করতে হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা! আয়ের বিশেষ কোনও সংস্থান ছাড়া এর পরে দিন গুজরান হবে কী করে, নতুন সরকার গঠনের আগেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শিবিরের অন্দরে।
বিহারে ভোটের বাজারেই ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা’য় ১০ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দিয়েছে নীতীশের সরকার। সরকারি একটি সূত্রের বক্তব্য, রাজ্যের ২৪৩টি বিধানসভা কেন্দ্রে এই সুবিধা মহিলাদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। এর সঙ্গেই ঘোষণা হয়েছে নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য ১২৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের খরচে ছাড়। বয়স্ক-ভাতার অঙ্ক মাসে ৭০০ থেকে ১১০০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। ঠিকা কর্মীদের বেতনও শ্রণি অনুযায়ী দ্বিগুণ ও তিন গুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে নীতীশের বিদায়ী মন্ত্রিসভা। সূত্রের খবর, অর্থ দফতরের আধিকারিকদের একাংশ সরকারের কাছে আগেই আর্জি জানিয়ে রেখেছেন, এই ধরনের নানা প্রকল্পে টাকার সংস্থান দীর্ঘ মেয়াদে কী ভাবে হবে, তার জন্য আলোচনা করে পথ সন্ধান করা হোক।
নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে বিরোধীরাও কোষাগারের টাকায় ভোট টানা নিয়ে সরব হতে শুরু করেছে। প্রশান্ত কিশোরের দল জন সুরাজের অভিযোগ, বিশ্বব্যাঙ্কের কাছ থেকে পাওয়া ঋণের মধ্যে থেকেও ১৪ হাজার কোটি টাকা বিহার সরকার নগদ সহায়তা দিতে কাজে লাগিয়েছে। তাদের দাবি, জন সুরাজের তরফেই প্রথম ঘোষণা করা হয়েছিল, ক্ষমতায় এলে বাধর্ক্য ভাতা বাড়িয়ে তারা মাসে দু’হাজার টাকা করবে। তার পর থেকেই সক্রিয় হয়ে ওঠে নীতীশের সরকার। জন সুরাজের জাতীয় সভাপতি উদয় সিংহের বক্তব্য, ‘‘এনডিএ-র বিপুল জয়ের জন্য আমরা তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। জনমুখী প্রকল্প দেশের নানা জায়াগাতেই আগে হয়েছে এবং এখনও চলছে। কিন্তু বিহারে ভোটের মধ্যে যে ভাবে সরকারি টাকা খরচ করা হয়েছে, সেটা নজিরবিহীন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বলতে গেলে, জনতার টাকাই খরচ করকে জনতার সমর্থন কেনা হয়েছে! সুযোগ-সুবিধা এখন তো দেওয়া হয়ে গেল। এর পরে? শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রোজগারের মতো জরুরি কাজে খরচ করার টাকা সরকার আনতে পারবে?’’
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি বলেছেন, ‘‘বিহারের ফল অবশ্যই আমাদের কাছে ধাক্কা। আত্মসমীক্ষা করতে হবে, শিক্ষা নিতে হবে। কিন্তু এটাও সত্যি যে, বিজেপি এবং এনডিএ বিহারে সরকারি ব্যবস্থার অপব্যবহার করেছে। অর্থশক্তির ঢালাও ব্যবহার হয়েছে। সরকারি প্রকল্পের নামে টাকা দিয়ে মূল সমস্যাগুলো ধাপাচাপা দেওয়া হয়েছে।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা ব্রিজেশ পান্ডের মতে, ‘‘নির্বাচনী আচরণবিধি জারি থাকাকালীনও মানুষের কাছে আর্থিক সহায়তা পৌঁছেছে। নির্বাচন কমিশন বসে বসে দেখেছে! সরকারি পক্ষ এই রকম অন্যায্য পথে গেলে বিরোধীরা লড়বে কী ভাবে?’’
শাসক শিবির অবশ্য অনৈতিক বা অন্যায় কোনও কাজ হয়েছে বলে মনে করছে না। বিদায়ী সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী, বিজেপির সম্রাট চৌধরির বক্তব্য, বিহারের বাজেট ধরা আছে তিন লক্ষ ১৭ হাজার কোটি টাকার। তার মধ্যে ৭০ হাজার কোটি রাজস্ব থেকে আসে। কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা ও ঋণ থেকে আসে দু’লক্ষ কোটি টাকার বেশি। সম্রাটের দাবি, ‘‘ডাবল ইঞ্জিন সরকার আছে, চিন্তার কিছু নেই। এই প্রকল্পগুলিও বাজেটে অতিরিক্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা আছে।’’ জেডিইউ নেতা নীরজ কুমারের সংযোজন, ‘‘মহিলা ও যুব সমাজ নীতীশজি’র উপরে আস্থা রেখেছে। নীতীশের সরকারের দুর্নীতি নেই। তারা ঠিক পথেই বিহারকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)