E-Paper

ঘরেই বেশি বিপন্ন মহিলা এবং শিশু

রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে দেশে মহিলাদের উপরে মোট ৪,৪৮,২১১টি অপরাধের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ২০২২ সালের নিরিখে বৃদ্ধি ০.৭%। প্রতি এক লক্ষ মহিলা পিছু অপরাধের মাত্রা ৬৬.২।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:০০

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে দেশে একটি করে অপরাধ নথিভুক্ত হয়েছে ২০২৩ সালে। বৃদ্ধি পেয়েছে মহিলা এবং শিশুদের উপরে ঘটা অপরাধের সংখ্যা। সম্প্রতি প্রকাশিত ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) ২০২৩ সালে দেশে নথিভুক্ত অপরাধের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, মহিলাদের উপরে হওয়া অপরাধের মধ্যে প্রায় ২৯.৮ শতাংশই হল স্বামী অথবা নিকটাত্মীয়ের হাতে নির্যাতনের ঘটনা। আর শিশুদের উপরে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে (পকসো) দায়ের হওয়া মামলায় ৯৬% ক্ষেত্রে অভিযুক্ত নির্যাতিতের পরিচিত ছিল। এ ছাড়াও, অন্যান্য দুষ্কর্মের থেকে দ্রুত গতিতে সাইবার অপরাধ বৃদ্ধি এবং শহরাঞ্চলে অপরাধমূলক কার্যকলাপ বাড়ার মতো কিছু প্রবণতাও উঠে এসেছে।

রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে দেশে মহিলাদের উপরে মোট ৪,৪৮,২১১টি অপরাধের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ২০২২ সালের নিরিখে বৃদ্ধি ০.৭%। প্রতি এক লক্ষ মহিলা পিছু অপরাধের মাত্রা ৬৬.২। দায়ের হওয়া মামলার মধ্যে ৭৭.৬% ক্ষেত্রে পুলিশ কোর্টে চার্জশিট পেশ করেছে। আর উদ্বেগজনক বিষয়টি হল, এই সংক্রান্ত ৯০.৮ শতাংশ মামলাই বছর শেষে নিম্ন আদালতে বিচারাধীন ছিল। পণ প্রতিরোধ আইনে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ৮৩,৩২৭টি। যার মধ্যে ৬৯,৪৩৪টি পূর্ববর্তী বছরগুলির থেকে গড়াতে গড়াতে এসেছে।

মহিলাদের উপরে হওয়া নথিভুক্ত অপরাধের মধ্যে প্রায় ২৯.৮ শতাংশই হল স্বামী বা আত্মীয়দের থেকে আসা নির্যাতন (ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ ধারায় মামলা)। তার পরেই অপহরণ (১৯.৮%), যৌন নির্যাতনের উদ্দেশ্য নিয়ে নিগ্রহ (১৮.৭%)। মহিলাদের উপরে নির্যাতনের অভিযোগের সংখ্যার নিরিখে শীর্ষে উত্তরপ্রদেশ। আর প্রতি এক লক্ষ মহিলার নিরিখে অপরাধের মাত্রায় শীর্ষে তেলঙ্গানা। ২০২৩ সালে দেশ জুড়ে পণের বলি হয়েছেন ৬১০০ জনের বেশি মহিলা। পণের দাবিতে নির্যাতনের মামলা এক বছরে বেড়েছে ১৪ শতাংশ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ, গোয়া, অরুণাচলপ্রদেশ, লাদাখ এবং সিকিম-সহ দেশের ১৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ২০২৩-এ পণের দাবি সংক্রান্ত কোনও মামলা হয়নি। ওই বছর অ্যাসিড হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছে মোট ২০৭টি। তার মধ্যে ৫৭টিই পশ্চিমবঙ্গের।

শিশুদের উপরে অপরাধ ২০২২ সালের তুলনায় ৯.২% বৃদ্ধি পেয়েছে ২০২৩ সালে। ২০২৩-এ এই সংক্রান্ত ১,৭৭,৩৩৫টি অভিযোগ হয়েছিল। যার মধ্যে প্রায় ৪৫% অপহরণের। আর ৩৮.২% পকসো আইনে হওয়া শিশুদের যৌন নির্যাতনের মামলা। শিশুদের উপরে হওয়া প্রতি পাঁচটি অপরাধের মধ্যে কমপক্ষে দু’টি ছিল যৌন নির্যাতনের। শতকরা পাঁচটি করে অপরাধ এক বছরে বেড়েছে এ ক্ষেত্রে। পকসোয় হওয়া মামলার মধ্যে ৯৬% ক্ষেত্রে অভিযুক্ত নির্যাতিতের পরিচিত ছিল। নির্যাতনের শিকার বেশি হয়েছে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সিরা। তার পরেই রয়েছে ১২-১৬ বছর বয়সিরা। শিশুদের উপরে ঘটা অপরাধের সংখ্যার নিরিখে শীর্ষে মধ্যপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্র। এ সংক্রান্ত অপরাধের মাত্রার নিরিখে শীর্ষে অসম। শিশুদের উপরে হওয়া অপরাধের মামলায় ৩২.২% ক্ষেত্রে পুলিশি তদন্ত বছর শেষে বাকি ছিল। ৬৪.৩% ক্ষেত্রে পুলিশ কোর্টে চার্জশিট দিতে পেরেছিল। যার মধ্যেও লক্ষ করা গিয়েছে বিস্তর ফারাক। এ ক্ষেত্রে তামিলনাড়ু অনেকটা এগিয়ে এবং দিল্লি পিছিয়ে ছিল।

দেশে ২০২২-এর তুলনায় ২০২৩-এ বাল্যবিবাহ বেড়েছে প্রায় ছ’গুণ। মোট বাল্যবিবাহের ঘটনার প্রায় ৯০% হয়েছে অসমে (৫২৬৭টি)। তার পরে রয়েছে তামিলনাড়ু (১৭৪টি), কর্নাটক (১৪৫টি) এবং পশ্চিমবঙ্গ (১১৮টি)। ছত্তীসগঢ়, নাগাল্যান্ড, লাদাখ এবং লক্ষদ্বীপের মতো কয়েকটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বাল্যবিবাহের কোনও অভিযোগ নথিভুক্ত হয়নি।

রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ২০২৩ সালে দেশে মোট অপরাধের মামলা হয়েছে ৬২.৪ লক্ষ। আগের বছরের তুলনায় বৃদ্ধির হার ৭.২%। প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যায় অপরাধের মাত্রা ছিল ৪৪৮.৩। ২০২২ সালে যে মাত্রা ছিল ৪২২.২। অপরাধের ধরনে পরিবর্তনও লক্ষ করা যাচ্ছে ওই রিপোর্টে। সাইবার অপরাধ ও শহরাঞ্চলে অপরাধমূলক ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩-এ দেশে সাইবার অপরাধ বেড়েছে ৩১.২%। মেট্রোপলিটন শহরগুলিতে অপরাধের হার বেড়েছে ১০.৬%। সব থেকে বেশি মামলা হয়েছে দিল্লিতে। তফসিলি জাতির উপরে ঘটা অপরাধ সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তফসিলি জনজাতির উপরে অপরাধমূলক ঘটনা অনেক বেড়েছে (২৮.৮%)। যার অন্যতম কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে মণিপুরের হিংসার মতো ঘটনা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Crime Against Women Crime Against Children National Crime Records Bureau survey

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy