উত্তরপ্রদেশের গাজ়িয়াবাদের একটি জনপদ। নেপাল সীমান্তের খুব কাছাকাছি ওই জায়গাটিতে এক তরুণীকে আচ্ছন্ন অবস্থায় কয়েক জন যুবকের সঙ্গে দেখে সন্দেহ হয়েছিল বাঙালি পর্যটকের। তরুণীকে নেশা করিয়ে আচ্ছন্ন রাখা হয়েছিল বলেই সন্দেহ হয় তাঁর। ওই যুবকদের আচরণও ঠিকঠাক লাগেনি তাঁর। ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে স্থানীয় দোকানদারদের অনুরোধ করলেও, পর্যটকের কথায় গুরুত্ব দেননি কেউ। শেষে ওই ব্যক্তি কলকাতায় হ্যাম রেডিয়োর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গাজ়িয়াবাদ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তরুণীকে উদ্ধার করে। জানা যায়, তরুণী নেপালের বাসিন্দা। পুলিশের সন্দেহ, নেপাল থেকে পাচার হয়ে তিনি গাজ়িয়াবাদ চলে এসেছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পর্যটক কলকাতার কসবা অঞ্চলের বাসিন্দা। পুজোর দিন কয়েক আগে তিনি পরিবার নিয়ে নেপাল ভ্রমণে যান। তাঁর কথায়, ‘‘ওই তরুণীকে প্রথমে আমি নেপাল সীমান্তে দেখি। গাজ়িয়াবাদের ওই জায়গাতেও ফের তাঁকে দেখতে পাই। তাঁর সঙ্গে থাকা যুবকদের আচরণ ভাল ঠেকেনি। স্থানীয় দোকানদারেরা আমার কথায় গুরুত্ব দেননি। আমাকে তাঁরা থানা খুঁজে পুলিশকে সব জানাতে বলেন। সেটা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না তখন। শেষে আমি হ্যাম রেডিয়োর সঙ্গে যোগাযোগ করি।’’
হ্যাম রেডিয়োর দাবি, পুলিশ কন্ট্রোলে ফোন করার ১৫ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে গাজ়িয়াবাদ থানা তরুণীকে উদ্ধার করে। পুলিশ দেখেই তরুণীর সঙ্গের যুবকেরা নিমেষে উধাও। ওই পর্যটকের কথায়, ‘‘পুলিশ আমার কাছে যুবকদের ছবি চেয়েছিল। কিন্তু আমিও ছবি তুলতে পারিনি। তবে তরুণীকে যে পাচারের চেষ্টাকরা হচ্ছিল, সেটা বুঝতে পারলাম, যখন পুলিশ দেখে তাঁর সঙ্গে থাকা যুবকেরা পালাল।’’
গাজ়িয়াবাদের পুলিশ সূত্রের খবর, ওই তরুণী নেপালের বাসিন্দা। সেখানকার সার্লাহি জেলার একটি গ্রামে তাঁর বাড়ি। সেখান থেকে কী ভাবে তরুণী গাজ়িয়াবাদে পৌঁছলেন, তা তিনি পুলিশকে জানাতে পারেননি। তবে পুলিশেরও সন্দেহ, তরুণীকে পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে যুবকদের খুঁজছে পুলিশ। তারা জানায়, তরুণী অসংলগ্ন কথাবার্তা বলায় তাঁকে একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে তরুণী নেপালি ভাষায় কথা বলছিলেন। যা থেকে পুলিশের ধারণা হয়, তরুণী নেপালি।
ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগবিশ্বাস জানান, তাঁরা কলকাতায় নেপালের উপদূতাবাস এবং নেপালে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দূতাবাসের কাছে খবর না থাকায় হ্যামের সদস্যেরা তরুণীর ঠিকানা খুঁজে বার করেন। অম্বরীশের কথায়, ‘‘সার্লাহি জেলার একটি গ্রামে তরুণীর পরিবারকে খুঁজে পাওয়া যায়। ছবি দেখে তরুণীকে শনাক্ত করেন স্থানীয় এক জন প্রতিনিধি। তবে ওই পর্যটক উদ্যোগী না হলে তরুণী হয়তো পাচার হয়ে যেতেন।’’
হ্যাম জানাচ্ছে, তরুণীর স্বামী রাইজু রামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মাস দেড়েক আগে এক দিন কাজ থেকে ফিরে দেখেন, ঘরে তালা। স্ত্রী বাড়িতে নেই। রাইজু জানান, তিনি স্ত্রীকে অনেক খুঁজেও পাননি। আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার তিনি স্ত্রীকে নিয়ে নেপালে ফেরেন। তবে কী ভাবে তাঁর স্ত্রী গাজ়িয়াবাদ পৌঁছলেন, কী ভাবেই বা ওই যুবকদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হল, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)