Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিজেপি ভুলেছিল, নীতীশের নেতৃত্বে নিজস্ব উন্নয়ন পেয়েছে বিহার

বিহারে ভোট নিয়ে এ বার মিডিয়া/ভোট-পণ্ডিতেরা যে ভোটবিহার করলেন, যে সমীক্ষায় মাতলেন, তা যে প্রস্তরাকীর্ণ ও তীক্ষ্ণ বাঁকে ভরা, তা তো এত ক্ষণে সবাই জেনে গেছেন। ইভিএম খোলার পর প্রথম প্রবণতা দেখে বিজেপি/এনডিএ নেতাদের ফুলতে থাকা ফানুস যে এত দ্রুত চুপসে যাবে, তা ওই নেতৃকুল তো বটেই, পোড়খাওয়া মিডিয়া বিশেষজ্ঞরাও বুঝতে পারেননি।

উল্লাস। বিহারে নীতীশের বিপুল জয়ের পর। ছবি: পিটিআই।

উল্লাস। বিহারে নীতীশের বিপুল জয়ের পর। ছবি: পিটিআই।

শিবাজিপ্রতিম বসু
শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৫ ১৩:৩৫
Share: Save:

বিহারে ভোট নিয়ে এ বার মিডিয়া/ভোট-পণ্ডিতেরা যে ভোটবিহার করলেন, যে সমীক্ষায় মাতলেন, তা যে প্রস্তরাকীর্ণ ও তীক্ষ্ণ বাঁকে ভরা, তা তো এত ক্ষণে সবাই জেনে গেছেন। ইভিএম খোলার পর প্রথম প্রবণতা দেখে বিজেপি/এনডিএ নেতাদের ফুলতে থাকা ফানুস যে এত দ্রুত চুপসে যাবে, তা ওই নেতৃকুল তো বটেই, পোড়খাওয়া মিডিয়া বিশেষজ্ঞরাও বুঝতে পারেননি। নীতীশ-লালুর জোট বিজেপি-র মুখে শুধু বিরাশি সিক্কার চপেটাঘাতই করেনি, মোদী-অমিত শাহ অ্যান্ড কোং-কেও বুঝিয়ে দিয়েছে, নব্য উদারবাদী ‘ইন্ডিয়া’ ও ‘ভারত’-এর ফারাক!

পড়ুন: নীতীশের হ্যাটট্রিক, বিহারে বিপুল জয় মহাজোটের

যে সর্বভারতীয় চরম অসহিষ্ণুতার আবহে এ বার বিহারে ভোট হল, তারও তো একটা অঙ্ক ছিল, লোকসভা ভোটের আগে মুজফ্ফর নগরের দাঙ্গার যে সুফল বিজেপি তুলেছিল, তার আরও বড় প্রেক্ষিত তৈরি করে, হিন্দু জাতীয়তাবাদ উস্কে দিয়ে, সাম্প্রদায়িক বিভাজন ঘটিয়ে লালু-নীতীশদের জাতপাতের অঙ্ক গুলিয়ে দেওয়া। ভুল হয়েছিল, এটা ভাবা যে জেডিইউ+ কেবল জাতপাতের অঙ্কেই লড়ছে, তার কোনও ‘বিকাশ কা মুদ্দা’ নেই। বিজেপি ভুলে গিয়েছিল, গত দশ বছর ধরে, নীতীশকুমারের নেতৃত্বে বিহারও তার ‘নিজস্ব’ উন্নয়নের পথ বেছে নিয়েছে। এই পথ অবশ্যই রক্তচক্ষু দেখানো চরম বিশ্বায়ত উন্নয়নের পথ নয়, বিহারের প্রেক্ষিতে উন্নয়ন চিন্তা।

পড়ুন: বিহারে বিপর্যয়ের দায় নিতে হবে মোদীকেই

এই ভিন্নতা মোদী ও তার উন্মাদ সমর্থকদের পক্ষে বোঝা অসম্ভব। তাঁর লোকসভায় তুমুল জেতার দিনেও অনেক সংবেদী ভাষ্যকারই সচেতন করে দিয়েছিলেন, গুজরাত মানেই ভারত নয়, তার একটা বিহার আছে, ঝাড়খণ্ড আছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের বৈচিত্র আছে। কোনও চাপিয়ে দেওয়া ঐক্য বা অর্থনীতি, এই সব ভিন্নতাগুলির সঙ্গে ডায়ালগ না চালিয়ে, সারা ভারতে সফল হতে পারে না।

পড়ুন: ‘বাহারি’দের হারিয়েছে বিহারিরা, দল হারতেই খোঁচা শত্রুঘ্নের

বিহারের এই ভোট (যে হেতু মোদী-শাহ জুটিই ছিলেন প্রচারের মুখ) রাতারাতি প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতিকে অনেকটাই ‘বামন’ করে দিল। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে এ বছরের গোড়ায় দিল্লির ভোটে কেজরিওয়ালের কাছে যে মার শুরু হয়েছিল, বছর শেষে লালু-নীতীশের কাছে তার করুণ পরিসমাপ্তি! দলের বাইরে তো বটেই, দলের ভিতরেও কি প্রবীণ আডবাণী থেকে সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিংহদের তির্যক হাসি থেকে পার পাবেন এই গুজরাতি মহাজুটি?

পড়ুন: সকালে লাড্ডুর অর্ডার, বেলা বাড়তেই মুখ লুকোল বিমর্ষ বিজেপি

বছর ঘুরতেই এই রাজ্যে ভোটের ঢাকে কঠি পড়বে। বিহারে জিতলে সিংহসম নরেন্দ্র মোদীর সরকার আর তার দলের মোকাবিলা করতে হত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এ বার কিছুটা মূষিক-হয়ে-যাওয়া মোদীকেই দেখতে হবে, যাতে মমতা ক্রম-নির্মীয়মান মোদী-বিরোধী শিবিরে পুরোপুরি ভিড়ে না যান। তার মানে বিধানসভা ভোটের আগে মমতা নানা দরকষাকষির সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবেন। অস্যার্থ, ২০১৬-তে চরম অ্যাডভ্যান্টেজে তৃণমূল নেত্রী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE