খাতায়কলমে ভারতের নাগরিক হওয়ার আগেই নাকি ভোটার তালিকায় নাম উঠে গিয়েছিল কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীর! ভোটার তালিকা নিয়ে বিতর্কের আবহে এ বার এমনটাই অভিযোগ তুলল বিজেপি। বুধবার দুপুরে নিজের এক্স হ্যান্ডলে এই অভিযোগ এনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপির আইটি সেলের সর্বভারতীয় প্রধান অমিত মালবীয়।
অমিতের দাবি, আজ থেকে ৪৫ বছর আগে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ‘আঁতাঁত’ করে ভোটার তালিকায় জালিয়াতি করেছেন সনিয়া। অভিযোগ, সে সময় তিনি ভারতের নাগরিকও হননি। কিন্তু তার আগেই অবৈধ ভাবে ভোটার তালিকায় নাম উঠে গিয়েছিল তাঁর। নিজের দাবির সপক্ষে প্রামাণ্য ‘নথি’ও দেখিয়েছেন অমিত। ১৯৮০ সালের ভোটার তালিকার একটি ছবি পোস্ট করে অমিত দাবি করেছেন (ছবিটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম), ওই বছরের ভোটার তালিকায় সনিয়ার নাম ছিল। অথচ সনিয়া তখনও ভারতের নাগরিকত্ব পাননি। এর পরেই অমিত লেখেন, ‘‘এটি যদি নির্বাচনী বিধিলঙ্ঘন না হয়, তা হলে কী?’’
১৯৮০ সালের ভোটার তালিকা বলে দাবি করে একটি ছবি পোস্ট করেছেন অমিত মালবীয়। ছবি: সংগৃহীত।
১৯৪৬ সালে ইতালিতে জন্ম সনিয়ার। পিতৃদত্ত নাম ছিল সনিয়া মাইনো। ১৯৬৮ সালে রাজীব গান্ধীর সঙ্গে বিবাহের পর গান্ধী পরিবারের অংশ হয়ে ওঠেন ইতালির মেয়ে। বিজেপির দাবি, ১৯৮০ সালে লোকসভা ভোটের আগে প্রথম বার নয়াদিল্লি কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় নাম ওঠে সনিয়ার। সে সময় গান্ধী পরিবার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সরকারি বাসভবনেই থাকত। বিজেপির আরও দাবি, ১৯৮২ সাল পর্যন্ত সনিয়ার নাম ভোটার তালিকাভুক্ত ছিল। অথচ তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব পান ১৯৮৩ সালে। এই ‘তথ্যপ্রমাণ’ প্রকাশ্যে এনে অমিত লেখেন, ‘‘এটি স্পষ্টত আইনের লঙ্ঘন। ভোটার হিসাবে নিবন্ধিত হতে গেলে একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হয়। ১৯৮২ সালে বিতর্ক ও সমালোচনার জেরে সনিয়ার নাম তালিকা থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল। ১৯৮৩ সালে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পর তাঁর নাম ফের তালিকাভুক্ত হয়।’’ অমিতের দাবি, সনিয়ার নাম যখন দ্বিতীয় বার ভোটার তালিকায় ওঠে, তাতেও একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে। ১৯৮৩ সালের ১ জানুয়ারির আগে নাগরিকত্ব পেলে তবেই সে বছর নাম ওঠার কথা। অথচ সনিয়া ভারতের নাগরিক হন ১৯৮৩ সালের এপ্রিল মাসে।
অমিতের ওই পোস্টের পরেই সরব হয়েছে বিজেপি। বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর দাবি করেছেন, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকের নির্বাচনে কারচুপির যে অভিযোগ সম্প্রতি রাহুল গান্ধী এনেছেন, তা ‘সম্পূর্ণ অসত্য এবং ভুল পরিসংখ্যান’। বিজেপির দাবির পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কংগ্রেসও। বিহারের কংগ্রেস সাংসদ তারিক আনোয়ার বলেন, ‘‘এর জন্য নির্বাচন কমিশনই দায়ী। সনিয়া গান্ধী ভোটার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনুরোধ করেননি। নির্বাচন কমিশনের তৎকালীন কর্তারা নিজেরাই তা করেছিলেন।’’ তারিকের কথায়, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন এবং সাংবিধানিক সংস্থা। সে সময় নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল। এর পরেই পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘‘আমরা দেখছি যে আজ নির্বাচন কমিশন বিজেপিরই একটি অংশ হয়ে উঠেছে! এই দুরবস্থা থেকে তাদের দ্রুত বেরিয়ে আসা উচিত।’’
বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে লোকসভা ভোট এবং তার পরে কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটে কারচুপি করেছে নির্বাচন কমিশন, সম্প্রতি এমনটাই অভিযোগ তুলে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল কংগ্রেস। গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে পরিসংখ্যান দেখিয়ে এ নিয়ে নতুন করে অভিযোগ তোলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। কর্নাটক, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার একাধিক উদাহরণও দেন। তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। ইতিমধ্যে রাহুলের কাছে এ বিষয়ে হলফনামাও চেয়েছেন সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকেরা। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অসম্মান করার অভিযোগে নোটিসও পাঠানো হয়েছে রাহুলকে। সেই আবহে এ বার কংগ্রেসকেই নিশানা করল বিজেপি।