Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
J. P. Nadda

J. P. Nadda: উত্তরাখণ্ডেও নড্ডার নিশানা সেই মমতা

পশ্চিমবঙ্গে প্রত্যাখাত হয়েও উত্তরাখণ্ডের বাঙালি ভোটারদের মন জয়ে নেমে পড়লেন বিজেপি নেতৃত্ব।

উত্তরাখণ্ডের উধম সিংহ নগর জেলার রুদ্রপুরে স্থানীয় বাঙালিদের কাছে ভোটের প্রচারে যান বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা

উত্তরাখণ্ডের উধম সিংহ নগর জেলার রুদ্রপুরে স্থানীয় বাঙালিদের কাছে ভোটের প্রচারে যান বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২১ ০৬:০৪
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে প্রত্যাখাত হয়েও উত্তরাখণ্ডের বাঙালি ভোটারদের মন জয়ে নেমে পড়লেন বিজেপি নেতৃত্ব। আজ উত্তরাখণ্ডের উধম সিংহ নগর জেলার রুদ্রপুরে স্থানীয় বাঙালিদের কাছে ভোটের প্রচারে যান বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা। প্রচারসভায় উপস্থিত স্থানীয় বাঙালিদের সামনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান তিনি। গোটা ভাষণের অধিকাংশটাই তিনি ব্যয় করেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে অপশাসনের অভিযোগ এনে। যা দেখে রাজনীতির অনেকের প্রশ্ন, ভোটটা উত্তরাখণ্ডে হচ্ছে, না পশ্চিমবঙ্গে! সদ্যসমাপ্ত জাতীয় কর্মসমিতির প্রস্তাব হোক, কিংবা সুদূর রুদ্রপুরের প্রচারের মাঠ— যে ভাবে সব ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে বিজেপি আক্রমণ শানাচ্ছে তার মধ্যে নির্দিষ্ট একটি কৌশল লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলেই মনে করছেন অনেকে।

বছর ঘুরলেই উত্তরাখণ্ড-সহ পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন। দেবভূমি উত্তরাখণ্ডে ঘন ঘন মুখ্যমন্ত্রী বদল, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়ায় ওই রাজ্যে বেশ অস্বস্তিতে বিজেপি। ৭০ আসনের বিধানসভার নির্বাচনে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টায় মাঠে নেমে পড়েছে কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে প্রচারের শুরুতেই স্থানীয় বাঙালি সমাজের কাছে পৌঁছে যাওয়ার কৌশল নিলেন নড্ডা। উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপুর একটি বিশ্ববিদ্যালয়-এলাকা হওয়ার কারণে সেখানে বাঙালিদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ওই এলাকায় সংখ্যার হিসাবে বাঙালিদের যা উপস্থিতি, তাতে বেশ কিছু বিধানসভা আসনের সমীকরণ বদলে দিতে পারেন তাঁরা। বিজেপি শিবিরের মতে, উত্তরাখণ্ডে প্রচারের গোড়াতেই বাঙালি সমাজকে বার্তা দিয়ে কার্যত প্রচারাভিযান শুরু করলেন নড্ডা। ওই রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে। এর থেকেই স্পষ্ট, ওই রাজ্যের বাঙালিদের কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে দল।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আজ প্রচারে উত্তরাখণ্ডে বিজেপির সাফল্যের চেয়ে মমতার ‘ব্যর্থতা’ ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা অপশাসনের অভিযোগ নিয়েই বেশি সরব হন নড্ডা। ওই সভায় বঙ্গ রাজনীতিতে হিংসার প্রাবল্যের বিষয়টি তুলে ধরে নড্ডা বলেন, ‘‘তৃণমূল শাসনে বাংলা এক খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আজ বাংলা বলতে দুর্নীতি, মারামারি আর অরাজকতাকে বোঝায়। এক সময়ে যেখানে বাংলা বললে মনীষীদের নাম ভেসে আসত, সেখানে এখন তৃণমূলের শাসনে দুর্নীতি আর অপশাসনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।’’ নড্ডা অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়েও দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। বিজেপি করার ‘অপরাধে’ করোনার প্রতিষেধক পাননি অনেক দলীয় কর্মী। নড্ডার দাবি, ভোটের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গে ১২৩টি যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। খুন হয়েছেন বিজেপির ৫৩ জন কর্মী। লক্ষাধিক মানুষ ঘরছাড়া।

উত্তরাখণ্ডে বিজেপিকে জেতাতে নড্ডা এক দিকে যেমন বাঙালি সমাজের কাছে আবেদন জানান, তেমনই পশ্চিমবঙ্গেও তৃণমূলকে উৎখাত করে বিজেপিকে আগামী দিনে জেতানোর জন্য স্থানীয় বাঙালিদের কাছে আবেদন করেন। তাঁর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের করুণ পরিস্থিতি পাল্টাতে বিজেপিকে ভোট দিন।’’ যা দেখে তৃণমূলের এক নেতার কটাক্ষ, ভোটটা যে পশ্চিমবঙ্গে হচ্ছে না, তা বোধ হয় ওই বিজেপি নেতা ভুলে গিয়েছিলেন। অন্য দিকে বিজেপি শিবিরের পাল্টা যুক্তি, নড্ডা বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় দলের লড়াই এখনও জারি রয়েছে। পরাজয়ের পরেও বাংলাকে ভোলেনি বিজেপি। রাজনীতির অনেকের মতে, যে ভাবে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের হিংসার প্রসঙ্গ রাখা হয়েছিল তা থেকে স্পষ্ট, বাংলা দখল আগামী দিনেও বিজেপির প্রধান লক্ষ্য হতে চলেছে। এ দিন নড্ডা বলেছেন, ‘‘জরুরি অবস্থা জারি করে ভারতীয় গণতন্ত্রে কালির দাগ রেখে গিয়েছে ইন্দিরা গাঁধী সরকার।’’ কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, আদতে কংগ্রেসকে আরও গুরুত্বহীন করে দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলকেই প্রধান বিরোধী হিসাবে তুলে ধরার কৌশল নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই কারণেই জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষিতে কংগ্রেসকে কিছুটা এড়িয়ে গিয়ে পরিকল্পিত ভাবে তৃণমূলকেই তাঁরা বেশি আক্রমণ করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

J. P. Nadda Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE