অহমদাবাদের বিমান দুর্ঘটনার পর অনেকেই বলেছিলেন, পাখির ধাক্কা বিমানটি ভেঙে পড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। সেই সম্ভাবনা কার্যত উড়িয়ে দিচ্ছেন তদন্তকারীরা। এই ঘটনার তদন্তের জন্য ভারত সরকার ইতিমধ্যে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে। তাদের তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। সংবাদ সংস্থায় রয়টার্স জানিয়েছে, কেন্দ্রের এই তদন্তকারী দল মূলত তিনটি সম্ভাবনার দিকে নজর রেখেছে। পাখির ধাক্কার কারণে এই বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তারা মনে করছে না। ইতিমধ্যে বিমানের একটি ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে। সূত্রের খবর, তা মোটামুটি অক্ষত রয়েছে। ফলে তার মধ্যে থেকে দ্রুত তথ্য উদ্ধার করা যাবে।
এয়ার ইন্ডিয়ার আধিকারিকেরা অহমদাবাদের ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের তদন্তদলের সদস্যেরাও। তদন্তে কী কী উঠে এসেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আধিকারিকেরা সে বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে সূত্রকে উদ্ধৃত করে তিনটি সম্ভাবনার কথা জানাচ্ছে রয়টার্স। প্রথমত, বিমানের ইঞ্জিন থ্রাস্টে কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিমান রানওয়ে ছাড়ার পর যে বল তাকে শূন্যে ভাসিয়ে রাখে এবং সামনের দিকে এগিয়ে দেয়, তাকেই থ্রাস্ট বলে। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটির পাইলট শেষ মুহূর্তে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং বিপদবার্তা (মে ডে কল) পাঠিয়েছিলেন। একটি অডিয়োতে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, থ্রাস্ট পাওয়া যাচ্ছে না। বিমানটি তাই নীচের দিকে নামছে। এই অডিয়ো তদন্তকারীদের কাজে লাগতে পারে। এ ছাড়া, বিমানটির ডানায় কোনও সমস্যা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ডানার পিছনের দিকের অংশ ‘ফ্ল্যাপ’ নামে পরিচিত। আকাশে বিমানকে ভেসে থাকতে সাহায্য করে এই ফ্ল্যাপ। রানওয়ে ছাড়ার পর তাতে সমস্যা হয়েছিল কি না, তাতে কোনও ত্রুটি ছিল না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
বিমান দুর্ঘটনার পর বিমানবন্দরের ৫৯ সেকেন্ডের একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে এসেছে। তদন্তকারীদের অন্যতম বড় ভরসা এই ফুটেজ। তাতে দেখা গিয়েছে, রানওয়ে ছেড়ে ওঠার পর ১৭ সেকেন্ডের মধ্যে বিমানটি উপরের দিকে ওঠা বন্ধ করে দেয়। কয়েক সেকেন্ড সামনের দিকে এগোয়। তার পর ধীরে ধীরে নীচে নেমে যায়। বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার অনেক ক্ষণ ধরে খোলা অবস্থায় ছিল। কেন ল্যান্ডিং গিয়ার সময়ে বন্ধ হয়নি, সেখানে কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি হয়েছিল কি না, তা-ও দেখছেন তদন্তকারীরা।
সরকার জানিয়েছে, শুক্রবার, দুর্ঘটনার এক দিন পরে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি ব্ল্যাক বক্স। যে বিল্ডিংয়ে বিমানটি ধাক্কা খেয়েছিল, তার ছাদে ব্ল্যাক বক্সটি পড়ে ছিল। বোয়িংয়ের বিমানে সাধারণত দু’টি করে ব্ল্যাক বক্স থাকে। একটি ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (বিমানের তথ্য সংরক্ষণকারী যন্ত্র) এবং অন্যটি ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (ককপিটের শব্দ, কথোপকথন সংরক্ষণকারী যন্ত্র)। এ ক্ষেত্রে, তথ্য সংরক্ষণকারী ব্ল্যাক বক্সটি পাওয়া গিয়েছে। দ্বিতীয়টির খোঁজ চলছে। সূত্রের খবর, ব্ল্যাক বক্সটি খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। সাধারণত, বিমান দুর্ঘটনার পর ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা গেলেও তার অনেক তথ্য নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্ল্যাক বক্স থেকে তথ্য উদ্ধার করতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যে হেতু ব্ল্যাক বক্সটি অক্ষত রয়েছে, তাই তদন্ত দ্রুত এগোবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ। অহমদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে ২৭০ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে।