প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ‘স্বদেশিয়ানা’র উপর জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। তবে সময়ের মধ্যে কি বাহিনীর হাতে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তুলে দিতে পারছে দেশীয় সংস্থাগুলি? ফের সেই প্রশ্নই উঁকি দিল দেশের সেনা সর্বাধিনায়ক অনিল চৌহানের কথায়।
কোনও রাখঢাক না করেই এ বিষয়ে নিজের মতামত স্পষ্ট করে দেন চৌহান। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির সঙ্গে যুক্ত দেশীয় সংস্থাগুলি যাতে ‘কিছুটা দেশপ্রেম এবং জাতীয়তাবাদী’ মানসিকতা দেখায়, সেই অনুরোধও করেন তিনি। সেনা সর্বাধিনায়ক সম্প্রতি এক আলোচনাসভায় বলেন, “প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কার একমুখী হয় না। (দেশীয়) সংস্থাগুলিকে তাদের নিজস্ব ক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের কাছে সত্য কথা জানাতে হবে। আপনারা আমাদের অসহায় অবস্থায় ফেলে দিতে পারবেন না। যখন আপনারা একটি চুক্তি স্বাক্ষর করছেন এবং সেই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে (প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম) সরবরাহ করতে পারছেন না, তখন বিষয়টি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।”
সংবাদমাধ্যম ‘টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’র প্রতিবেদন অনুসারে, ওই আলোচনাসভায় সেনাসর্বাধিনায়ক জানান, স্থলসেনা বাহিনী থেকে তিনি এমন অভিযোগ পেয়েছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, জরুরি সামগ্রী ক্রয় প্রক্রিয়ার পঞ্চম এবং ষষ্ঠ পর্যায়ে ‘বেশির ভাগ’ দেশীয় সংস্থাই ‘নিজেদের কার্যক্ষমতার বাইরে গিয়ে প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছিল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সংস্থাগুলি প্রতিরক্ষা সামগ্রী দিতে পারেনি বলেও জানানো হয়েছে চৌহানকে। তিনি বলেন, “এটি কখনও মেনে নেওয়া যায় না।”
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দেশীয় সংস্থাগুলির ভূমিকায় বাহিনীর কর্তাদের এমন অসন্তোষ নতুন নয়। এর আগে আগে বায়ুসেনা প্রধান অমরপ্রীত সিংহও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড’ (হ্যাল)-এর ভূমিকায়। হ্যাল সময়মতো তেজস যুদ্ধবিমান সরবরাহ করতে না-পারায় গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি বলেছিলেন, “এই মুহূর্তে হ্যালের উপর আমাদের আস্থা নেই।”
আরও পড়ুন:
ভারতের সিঁদুর অভিযান পরবর্তী সময়েও দেশীয় সংস্থাগুলির উপরে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বায়ুসেনা প্রধান। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতের সাফল্য এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দেশের আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার কথা বর্ণনার পাশাপাশি দেশীয় সংস্থাগুলিকে নিয়ে সমস্যার দিকটিও তুলে ধরেন তিনি। অমরপ্রীত ওই সময়ে বলেন, “সময়সীমা একটি বড় সমস্যা। আমার মনে হয়, এমন একটিও প্রকল্প নেই, যেটি সময়মতো সম্পন্ন হয়েছে। এই বিষয়টির উপর আমাদের নজর দিতে হবে। এমন কোনও প্রতিশ্রুতি আমরা কেন দেব, যা পূরণ করা সম্ভব নয়? চুক্তি স্বাক্ষর করার সময়, কখনও কখনও আমরা নিশ্চিতই থাকি যে এটি (সময়মতো) পাওয়া যাবে না। তা-ও আমরা চুক্তিতে স্বাক্ষর করি।”