২০২৩-২৪ অর্থবর্ষ পর্যন্ত সেস সংগ্রহ বাবদ পাওয়া ৩.৬৯ লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সরকার নির্দিষ্ট খাতে হস্তান্তর (ট্রান্সফার) করতে পারেনি। এমনটাই জানিয়েছে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)। বিশেষ প্রয়োজনে সরকার কোনও খাতে অর্থ বরাদ্দ করতে চাইলে অনেক সময় কর ছাড়াও এই সেস বসানো হয়। সেই বাবদ যে টাকা আদায় করা হয়, তা ওই ক্ষেত্রের উন্নয়নে ব্যবহার করা হয়।
মঙ্গলবার সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের সেস সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট পেশ হয়েছে। তাতে জানা গিয়েছে, শিক্ষা এবং সুরক্ষা, জাতীয় সড়কের নগদীকরণ (মানিটাইজেশন), তেল শিল্পের উন্নয়ন, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার উন্নতির জন্য যে তহবিল গঠিত হয়েছিল, সেই সংক্রান্ত লেনদেন খামতি রয়েছে। সিএজি রিপোর্টে জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৩,৬৯,৩০৭ কোটি টাকা পাবলিক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়নি। মূলত তেল শিল্প উন্নয়ন বোর্ড (ওআইডিবি) –এর জন্য সেসের অর্থ জমা করার বিষয়ে খামতি রয়েছে। ১৯৭৪ সালের তেল শিল্প উন্নয়ন আইন অনুসারে শিল্পের উন্নয়নের জন্য এই বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। সেই মতো অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের উপরে সেসও চাপানো হয়েছিল। সিএজির রিপোর্ট বলছে, সেই সেস বাবদ আদায় করা টাকা জমা পড়েনি নির্দিষ্ট তহবিলে।
সিএজির ২০২৩-২৪ সালের রিপোর্ট বলছে, ১৯৭৪-৭৫ অর্থবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষ পর্যন্ত অপরিশোধিত তেলের উপরে সেস বসিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ২,৯৪,৮৫০.৫৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে আদায় করেছে ১৮,৮৪৫.৯৮ কোটি টাকা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৭৪-৭৫ থেকে ১৯৯১-৯২ পর্যন্ত ওআইডিবিতে ৯০২.৪০ কোটি টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। তার পর থেকে আর কোনও টাকা জমা পড়েনি ওই তহবিলে। অর্থাৎ ১৯৭৪-৭৫ সাল থেকে সেস বাবদ যত টাকা আদায় করেছে কেন্দ্র, তার মাত্র ০.৩ শতাংশ জমা করেছে ওআইডিবি-তে। সিএজির রিপোর্টের জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, তৈলক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য ‘অয়েল ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষ থেকে তা কার্যকর হয়েছে।
আরও পড়ুন:
সিএজির রিপোর্ট অনুযায়ী, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে যে সেস আদায় করা হয়েছে, তা-ও নির্দিষ্ট তহবিলে জমা দেওয়া হয়নি। ২০০৪ সালে শিক্ষাক্ষেত্রে কেন্দ্র যত কর আদায় করে তার উপরে ২ শতাংশ হারে সেস বসানো হয়। ২০০৭ সালে উচ্চশিক্ষার উপরে অতিরিক্ত ১ শতাংশ সেস বসানো হয়েছিল। ২০১৭ সালে এই দুই রকমের সেসের পরিবর্তে চার শতাংশ সেস বসায় কেন্দ্র। সিএজির রিপোর্ট বলছে, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৩-২৪ পর্যন্ত শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ৩৭,৫৩৭ কোটি টাকা সেস আদায় করে কেন্দ্র। কিন্তু সেই টাকা তহবিলে জমা পড়েনি।