সর্বভারতীয় ডাক্তারি পরীক্ষা (নিট)-এর স্নাতকোত্তরের ভর্তিতে অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির কোটায় সংরক্ষণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বার্ষিক আট লক্ষ টাকা পারিবারিক আয়ের ঊর্ধ্বসীমাই বজায় রাখা হচ্ছে বলে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানাল কেন্দ্র। এই কোটায় সংরক্ষণকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে ইতিমধ্যেই মামলা হয়েছে। ফলে ভর্তিতে বিলম্ব হওয়া নিয়ে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ সদ্য ধর্মঘটেও গড়িয়েছে। যদিও সেই ধর্মঘট চাপের মুখে তুলেও নিয়েছেন চিকিৎসকেরা। ৬ জানুয়ারি সেই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হলফনামায় কেন্দ্র জানিয়েছে, এই কোটা পর্যালোচনার জন্য গঠিত তিন সদস্যের কমিটির সব সুপারিশই মানা হবে। তবে এখন যে ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে, সেখানে কোনও বদল আনা হবে না। তাতে জটিলতা বাড়বে। পরিবর্তিত নিয়ম-নীতি আগামী বছর থেকে কার্যকর হবে।
প্রসঙ্গত, উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের কথা মাথায় রেখে গত বছর জুলাইয়ে কেন্দ্র সর্বভারতীয় নিটের স্নাতকোত্তরে ভর্তির জন্য আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেণিকে আলাদা ভাবে সংরক্ষণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ডাক্তারি পড়ার সর্বভারতীয় পরীক্ষায় যে ‘অল ইন্ডিয়া কোটা’ (এআইকিউ) রয়েছে, তাতে ওবিসিদের জন্য ২৭ শতাংশ ও আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে বলে জানায় কেন্দ্র। বিরোধীরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও তাঁদের বক্তব্য ছিল, মূলত উত্তরপ্রদেশের ৪০ শতাংশ ওবিসি ভোটের কথা মাথায় রেখেই এই সংরক্ষণ চালু করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। চিকিৎসকদের একটা অংশ এবং একাধিক রাজনৈতিক দল তখনই আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছিল, এর ফলে চিকিৎসার মান নেমে যেতে পারে।
আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির সংরক্ষণের প্রশ্নে কেন্দ্রের কমিটি তাদের সুপারিশে জানিয়েছে, আবেদনকারীর পাঁচ একর পর্যন্ত কৃষিজমি বা ১০০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট থাকলে পারিবারিক আয় যা-ই হোক না কেন, তিনি এই কোটায় সংরক্ষণ পাবেন না। সে সময় অনেকেই বলেছিলেন, মহারাষ্ট্রে মরাঠাদের সংরক্ষণের সিদ্ধান্তের মতোই মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্ত আগামী দিনে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। বাস্তবে হয়েওছে তাই। বস্তুত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, শিক্ষা বা চাকরির ক্ষেত্রে কোনও ভাবেই ৫০ শতাংশের বেশি সংরক্ষণ দেওয়া সম্ভব নয়। সে কারণেই মরাঠা সংরক্ষণ বিল আদালতে চ্যালেঞ্জ হলে তা খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এ ক্ষেত্রেও সংরক্ষণ ৫০ শতাংশ পেরোনোয় তা যে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে, তা বুঝেও এগিয়েছিল মোদী সরকার। সরকারের পাল্টা যুক্তি ছিল, সংবিধানের ১০৩তম সংশোধনী। ২০১৮ সালের ১৩ জানুয়ারি পাশ হওয়া ওই সংশোধনীতে বলা হয়, চালু সংরক্ষণ ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির জন্য সংরক্ষণ করতে পারবে সরকার।
কিন্তু আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে অনেকেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ায় আটকে যায় মেডিক্যালে স্নাতকোত্তরে কাউন্সেলিং। এতে পড়ুয়াদের প্রায় একটি বছর নষ্ট হতে বসায় দ্রুত কাউন্সেলিংয়ের দাবি জানিয়ে গত মাসের গোড়ার দিকে ধর্নায় বসে চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠন।
ডিসেম্বরের শেষ দিকে দিল্লির সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা স্নাতকোত্তরে দ্রুত কাউন্সেলিং শুরুর দাবি জানিয়ে সরকারের উপর চাপ বাড়াতে পথে নামেন। দিল্লি পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে বিক্ষোভরত ডাক্তারদের বেধড়ক পিটিয়ে অনেককে গ্রেফতার করলে দেশ জুড়ে ধর্মঘট ডাকে চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠন। কিন্তু উপরমহলের চাপে এবং রাজনৈতিক দলগুলির তরফে কোনও সাড়া না পেয়ে শেষে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে ফিরে যান ধর্মঘটীরা।
এই অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া কেন্দ্রের হলফনামা স্নাতকোত্তরে কাউন্সেলিংয়ের পথ দ্রুত খুলবে বলে আশা সরকার এবং চিকিৎসক মহলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy