অভিন্ন মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষা স্থগিত রাখার প্রশ্নে রাজ্যগুলির পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিল কেন্দ্র। অন্তত চলতি বছর অভিন্ন মেডিক্যাল প্রবেশিকার বদলে জয়েন্ট চালু রাখার পক্ষে সওয়াল করেছে বিভিন্ন রাজ্য। দ্রুত বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
গত সপ্তাহে একটি রায়ে রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা বাতিল করে দেয় শীর্ষ আদালত। বিচারপতিরা জানান, এক মাত্র কেন্দ্রীয় ভাবে আয়োজিত অভিন্ন মেডিক্যাল প্রবেশিকার মাধ্যমেই দেশের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা যাবে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত সামনে আসার পরে সমস্যায় পড়েন পশ্চিমবঙ্গ-সহ অধিকাংশ রাজ্যের মেডিক্যাল পড়তে ইচ্ছুক পড়ুয়ারা। আজ, মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গে মেডিক্যাল জয়েন্ট পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। গত শুক্রবার বাতিল করা হয়। জয়েন্ট সমস্যার সমাধান খুঁজতে আজ দিল্লিতে রাজ্যগুলির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডা।
বৈঠকে মূলত দু’টি সমস্যার উপর জোর দিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা। প্রথমত পাঠ্যক্রম। দ্বিতীয়ত ভাষা। রাজ্যগুলির মতে, কেন্দ্রীয় পরীক্ষা সিবিএসই পাঠ্যক্রম অনুযায়ী হওয়ার কথা। কিন্তু বেশির ভাগ রাজ্য বোর্ড ওই পাঠ্যক্রম মেনে চলে না। রাজ্য বোর্ড ও সিবিএসই-র পাঠ্যক্রমের মধ্যে প্রায় পঁচিশ থেকে তিরিশ শতাংশ পার্থক্য রয়েছে। ফলে অভিন্ন মেডিক্যাল প্রবেশিকা হলে পরীক্ষার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধে পাবেন সিবিএসই বোর্ডের পড়ুয়ারা। ভাষাও একটি বড় সমস্যা বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি আজ বলেন, ‘‘পরীক্ষায় উত্তর দেওয়ার ভাষা যদি হিন্দি বা ইংরেজি হয় সে ক্ষেত্রে বাংলা বা অন্য কোনও আঞ্চলিক ভাষায় পড়াশোনা করা ছাত্রছাত্রীরা সমস্যায় পড়বেন। হঠাৎ করে তাঁদের পক্ষে নতুন ভাষায় পরীক্ষা দেওয়াটা বেশ সমস্যার।’’
পশ্চিমবঙ্গের মতোই ভাষার প্রশ্নে সরব হয়েছে পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ দক্ষিণের অধিকাংশ রাজ্য। পরে বৈঠক থেকে বেরিয়ে চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘দু’বছরের জন্য অভিন্ন প্রবেশিকায় স্থগিতাদেশ চায় রাজ্য। তা কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দু’বছর না হলেও যাতে অন্তত এ বছর ছাড় পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে কেন্দ্রকে।’’ বৈঠক শেষে রাজ্যগুলির পাশে থাকার কথাই বলেছে কেন্দ্র। সংসদেও নরেন্দ্র মোদী সরকার জানিয়েছে, তারা চলতি বছরের জন্য স্থগিতাদেশ চেয়ে শীর্ষ আদালতের কাছে আবেদন জানাবে। অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা হবে ২৪ জুলাই। সময় কম থাকায় আজ তড়িঘড়ি প্রথমে স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ও পরে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকে কেন্দ্র।
অভিন্ন প্রবেশিকায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কেন্দ্রের ক্ষোভের কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। আজ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ‘‘আইনি পর্যালোচনা করা বিচারব্যবস্থার এক্তিয়ারে পড়ে। কিন্তু প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই একটি লক্ষ্মণরেখা থাকা জরুরি। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত প্রশাসনকেই নিতে হয়। বিচারবিভাগের তা নেওয়ার কথা নয়।’’
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে অস্বস্তিতে পড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কারণ পশ্চিমবঙ্গের মতো অ-বিজেপি রাজ্যগুলি তো বটেই, মহারাষ্ট্র বা গুজরাতের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। পরীক্ষার ঠিক আগে এ ভাবে পরীক্ষা পদ্ধতি পাল্টে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক নয় বলেও মনে করছে মনে করছে কেন্দ্র। তাই জেটলি স্পষ্টই বলেছেন ‘‘কী ভাবে বা কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে সেটা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। অন্য কারও তাতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy