সোমবার থেকেই আদানি-কাণ্ডের তদন্তে জেপিসি-র দাবিতে কংগ্রেস-সহ বাকি বিরোধী দলগুলির সঙ্গ এড়িয়ে চলছিল তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার আদানির কারবার নিয়ে ইডি-র তদন্ত চেয়ে বাকি বিরোধী দল যখন সংসদ থেকে ইডি-র সদর দফতরে মিছিল করেছিল, তৃণমূল গরহাজির ছিল। বৃহস্পতিবার কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলের সাংসদরা নরেন্দ্র মোদী-গৌতম আদানির সম্পর্কে তদন্ত চেয়ে সংসদ ভবন ঘিরে মানবশৃঙ্খল তৈরি করলেন। তৃণমূল সেখানেও গরহাজিরই রইল।
কংগ্রেস একে ‘তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে গোপন আঁতাঁত’ হিসেবেই দেখছে। উল্টো দিকে তৃণমূল যুক্তি দিয়েছে, তারা বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর প্রথম দিন, গত সোমবারই আদানি-কাণ্ড নিয়ে সংসদ চত্বরে ধর্না দিয়ে ফেলেছে। কংগ্রেস আজ অভিযোগ তুলেছে, তৃণমূলই একমাত্র বিরোধী দল, যারা আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতারণা, শেয়ার দরে কারচুপির অভিযোগে যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি-র তদন্ত চাইছে না। বাকি বিরোধীদের জেপিসি-র দাবির মুখে বিজেপি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে বিদেশে গিয়ে দেশ-সংসদকে অপমান করার অভিযোগ তুলে সংসদ ভন্ডুল করে দিতে চাইছে। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার, প্রতিদিনই দু’তিন মিনিটের মধ্যে সংসদের অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল এ নিয়েও বাকি বিরোধীদের সঙ্গে নেই।
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘একমাত্র যে দলের সঙ্গে বিজেপির গোপন বোঝাপড়া রয়েছে, তারা বাদে বাকি সব দল আদানি-কাণ্ডে জেপিসি চায়। বাকি সব দল মনে করে, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। দেশে অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে।’’ কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, তৃণমূল যে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে নরম সুর নিচ্ছে, তা এখন দিনের আলোর মত স্পষ্ট।
তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি, তাঁরা গত সোমবারই আদানি-কাণ্ড নিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে ধর্না দিয়েছেন। বৃহস্পতিবারও আদানি বিষয়ে সরব হয়েছেন। দলের সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে নীতিগত ফারাক হচ্ছে। ওরা রাজ্যে এক, জাতীয় স্তরে আর এক নীতি নিচ্ছে। রাজ্যে কুস্তি, দিল্লিতে দোস্তি চাইছে। কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের কোথাও কোনও নির্বাচনী আঁতাঁত হয়নি। বরঞ্চ ২০২১-এ কংগ্রেস, সিপিএমের সঙ্গে মিলে আমাদের বিরুদ্ধে লড়েছে। এখন কংগ্রেসের সংসদীয় দলের উচ্চপদস্থ নেতারা লাগাতার তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে বিবৃতি দিচ্ছেন। আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে কেন যাব?”
কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরীর পাল্টা জবাব, তৃণমূল বাকি বিরোধী শিবিরের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করছে। কারণ তৃণমূলনেত্রী ভয় পাচ্ছেন। তাই অধীরকে সামনে রেখে কংগ্রেসকে নিশানা করছেন। এতে তৃণমূলের ‘রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা’ই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে অধীরই বলেছিলেন, তৃণমূলকে হারাতে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপিকে হাত মেলাতে হবে। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘কংগ্রেসের নেতারা কেরলে বামেদের বিরুদ্ধে বলছেন। বাংলা, ত্রিপুরায় বামেদের সঙ্গে হাত ধরে লড়ছেন। তৃণমূলের এমন আলাদা নীতি নেই। প্রত্যেক দিন কংগ্রেস আমাদের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিচ্ছে। কংগ্রেসকে মনস্থির করতে হবে।’’
অধীরের পাল্টা কটাক্ষ, তৃণমূলের ‘ডিজিটাল বয়’ কি জানেন যে সাগরদিঘিতে কংগ্রেসের ঝুলিতে বিজেপির ১০ শতাংশ ভোট এসে থাকলে তৃণমূলের থেকেও ১৭ শতাংশ ভোট এসেছে! বিজেপির ভোট কংগ্রেস পেলে যদি সেটা ‘অশুভ আঁতাঁত’ হয়, তা হলে তৃণমূলের ভোট কংগ্রেসের পাওয়াকেও কংগ্রেস-তৃণমূলের আঁতাঁত বলা উচিত। অধীর বলেন, ‘‘আসলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একটি বিধানসভা কেন্দ্রে হারও মেনে নিতে পারছেন না। তিনি বুঝতে পারছেন ভোটব্যাঙ্ক হারাচ্ছেন। তাই কংগ্রেস-বিজেপির অশুভ আঁতাঁতের গল্প ফেঁদেছেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)