Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Corona

১ মার্চ থেকে টিকা বয়স্কদের, সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে

গোড়া থেকে এখন পর্যন্ত দু’টি প্রতিষেধকের মাধ্যমে ভারতে টিকাকরণ জারি রয়েছে।

১ মার্চ থেকে ২৭ কোটি আমজনতার টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

১ মার্চ থেকে ২৭ কোটি আমজনতার টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে। ছবি রয়টার্স।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৩৬
Share: Save:

স্বাস্থ্যকর্মী ও ফ্রন্ট লাইন ওয়ার্কারদের পরে এ বার ১ মার্চ থেকে ২৭ কোটি আমজনতার টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওই টিকাকরণে অগ্রাধিকার পাবেন ষাট বছরের বেশি বয়সিরা। একই সঙ্গে মৃত্যুহার কমাতে যাঁদের বয়স ৪৫ বছরের বেশি কিন্তু দীর্ঘদিন বিভিন্ন রোগে ভুগছেন, তাঁদেরও এই দফায় প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসা হবে। বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েও টাকা খরচ করে টিকা নিতে পারবেন সাধারণ মানুষ। যদিও গোটা প্রক্রিয়া নিয়ে এখনও কিছু প্রশ্ন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে এত দিন প্রতিষেধক নেননি। তবে ষাটোর্ধ্ব নাগরিক হিসেবে এ বার তিনিও প্রতিষেধক নিতে পারেন বলে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

গত ১৬ জানুয়ারি দেশ জুড়ে করোনার টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেছিল কেন্দ্র। প্রথম দফায় স্বাস্থ্যকর্মী ও তার পরে পুলিশ, আধাসেনা, সাফাইকর্মীদের মতো ফ্রন্ট লাইন ওয়ার্কারদের প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ চালু রয়েছে। প্রথম পাঁচ সপ্তাহে প্রায় ১.২৩ কোটি মানুষ প্রতিষেধকের আওতায় এসেছেন। এই পরিসংখ্যান কেন্দ্রের লক্ষ্যমাত্রার থেকে কম হলেও, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নতুন করে করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় আমজনতাকে প্রতিষেধক দেওয়ার প্রশ্নে আর দেরি না-করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। গত কাল স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে মোদী এক প্রস্ত বৈঠক করেন। তার পরেই আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ওই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেওয়া হয়।

আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, “এই পর্যায়ে ষাট বছরের ঊর্ধ্বে থাকা সমস্ত দেশবাসীকে প্রতিষেধক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৪৫ থেকে ৬০ বছর বয়সি যে মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরেই ‘ক্রনিক’ রোগের শিকার, তাঁদেরও প্রতিষেধক দেওয়া হবে।” স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, গত এক বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, দীর্ঘ সময় ধরে রোগে ভুগছেন এমন মানুষদের করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। তাই মৃত্যুহারকে আরও কমিয়ে আনতে ৪৫-৬০ বছর বয়সিদের এ যাত্রায় প্রতিষেধক দেওয়া হবে।

প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে দেশের ১০ হাজার সরকারি হাসপাতাল ও ২০ হাজার বেসরকারি হাসপাতাল থেকে করোনার প্রতিষেধক দেওয়া হবে। সরকারি হাসপাতালের প্রতিষেধক বিনামূল্যে হলেও বেসরকারি হাসপাতাল থেকে প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য টাকা খরচ করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতাল থেকে প্রতিষেধক নিলে খরচ কত পড়তে পারে, তা আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই জানিয়ে দেবে সরকার। জাভড়েকর বলেন, “সরকারি হাসপাতালের প্রতিষেধকের দাম মেটাবে কেন্দ্র। এ জন্য যত প্রতিষেধক লাগবে, তা রাজ্যগুলিকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”

আজকের ঘোষণার পরেও প্রতিষেধক সংক্রান্ত একাধিক ধোঁয়াশা কিন্তু রয়েই গিয়েছে। বিশেষ করে যাঁরা ওই প্রতিষেধক নেবেন, তাঁরা ঠিক কী ভাবে ‘কো-উইন’ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে নাম লেখাবেন, কোথায় গিয়ে টিকা নেবেন— ইত্যাদি প্রশ্নের সবিস্তার উত্তর এখনও মেলেনি। তা ছাড়া, ঠিক কোন কোন রোগের শিকার হলে ৪৫ থেকে ৬০ বছর বয়সিরা প্রতিষেধক পাওয়ার লাইনে দাঁড়াতে পারবেন, তা-ও স্পষ্ট করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে জাভড়েকর বলেন, “নাম লেখানোর পদ্ধতি ও রোগের নামের বিষয়ে খুব শীঘ্রই সাংবাদিক সম্মেলন করে দেশবাসীকে বিস্তারিত ভাবে জানাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।”

গোড়া থেকে এখন পর্যন্ত দু’টি প্রতিষেধকের মাধ্যমে ভারতে টিকাকরণ জারি রয়েছে। ওই দু’টি প্রতিষেধকের একটি হল অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার কোভিশিল্ড, এ দেশে যার উৎপাদনের দায়িত্বে রয়েছে সিরাম ইনস্টিটিউট। অন্যটি ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন। মানবদেহে প্রতিষেধক প্রয়োগের সব ক’টি ধাপ শেষের আগেই কোভ্যাক্সিনকে ছাড়পত্র দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় বহু স্বাস্থ্যকর্মী ওই প্রতিষেধক নিতে রাজি হননি। আমজনতার কাছে দু’টি প্রতিষেধকের মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকবে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে জাভড়েকর বলেন, “দু’টি প্রতিষেধক নিরাপদ এবং কার্যকরী। সেই কারণে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের দেশ ভারতের কাছ থেকে প্রতিষেধক কিনছে। সুতরাং ভয়ের কিছু নেই।” প্রসঙ্গত, রাশিয়ার টিকা স্পুটনিক-ভি-র জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের ছাড়পত্র চেয়ে রেড্ডিজ় ল্যাবরেটরিজ়ের আবেদন নিয়ে এ দিন বৈঠকে বসেছিল বিশেষজ্ঞ কমিটি। ওই প্রতিষেধক প্রয়োগের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কী ভাবে বাড়ছে, সে বিষয়ে কমিটি আরও তথ্য চেয়েছে।

আমেরিকা, রাশিয়া বা ব্রিটেনের মতো অনেক দেশেই গণ-টিকাকরণ অভিযানের আগে অভয়-বার্তা দিতে রাষ্ট্রনেতাদের প্রথমে প্রতিষেধক নিতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু ভারতে তা হয়নি। তার ফলেও প্রতিষেধকের সুরক্ষার দিকটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। আসন্ন পর্যায়ে দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা প্রতিষেধক নেবেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “অনেক দেশেই প্রধানমন্ত্রী বা শীর্ষ নেতারা প্রতিষেধক নিয়েছেন। কিন্তু ভারতে তার পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিষেধক নিয়েছেন। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্যকর্মীদের সবার আগে প্রতিষেধক দেওয়ার প্রয়োজন ছিল।” তবে এ বার মন্ত্রীরা প্রতিষেধক নেবেন বলে জানিয়েছেন জাভড়েকর। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা প্রতিষেধকের দাম মিটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona COVID-19 coronavirus Coronavirus in India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE