করোনাভাইরাসের হানায় ত্রস্ত মৌজপুর।
ঠিক এক মাস আগে এই সময়ে গোষ্ঠী সংঘর্ষের আতঙ্কে ভুগছিল মৌজপুর। সেই মৌজপুরই এ বার ভুগছে করোনাভাইরাসের গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কায়।
সম্প্রতি বিদেশ থেকে আসা এক মহিলা ইতিমধ্যেই সংক্রমণ ছড়িয়েছেন মৌজপুরে তাঁর পরিবারের পাঁচ জন-সহ, তাঁর চিকিৎসক, চিকিৎসকের স্ত্রী ও কিশোরী কন্যার দেহে। এ ছাড়া ওই সংক্রমিত মহিলার সংস্পর্শে এসেছেন, মৌজপুরের এমন আরও ৭৪ জন বাসিন্দাকে আপাতত নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই ৭৪ জনের মধ্যে যদি অর্ধেকও সংক্রমিত বলে প্রমাণিত হন, তা হলে তাঁদের মাধ্যমে গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়ে থাকাটা অসম্ভব নয়। এ পর্যন্ত দিল্লিতে ৩৬ জনের করোনা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ২৬ জনই বিদেশ থেকে সফর করে এসেছেন।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর মতে বিদেশ থেকে আসা এই ভাইরাসের ফলে গোটা দেশে সর্বাধিক সংক্রমণ ঘটার আশঙ্কা যেখানে যেখানে রয়েছে, দিল্লি তার অন্যতম। রাজধানী হওয়ার কারণে যাবতীয় দূতাবাস দিল্লিতেই অবস্থিত। সে কারণে দিল্লিতে বিদেশি নাগরিকদের মাধ্যমে সংক্রমণের সম্ভাবনাও বেশি। সমীক্ষা বলছে, আগামী কয়েক মাসে আড়াই থেকে চার লক্ষ লোক করোনায় সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে শুধু দিল্লিতেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, দু’টি কারণে এই রোগের সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়। প্রথমত, এর সংক্রমণ ক্ষমতা খুব বেশি। দ্বিতীয়ত, অধিকাংশ সংক্রমিত ব্যক্তির মধ্যেই সে ভাবে উপসর্গ দেখা দেয় না আগে থেকে। ফলে অজান্তেই তিনি সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে থাকেন।
দিল্লি স্বাস্থ্য দফতরের মতে, মৌজপুরের ওই বাসিন্দাও নিজের অজান্তেই সংক্রমণ ছড়িয়েছেন। গত ১০ মার্চ ওই মহিলা সৌদি আরব থেকে দিল্লিতে এসে পৌঁছন। স্বাস্থ্য দফতরের মতে, সে সময়েই তিনি সংক্রমিত ছিলেন। কিন্তু জানতেন না। বাড়িতে থাকা অবস্থায় ওই মহিলা তার মা, ভাই ও দুই মেয়েকে সংক্রমিত করেন। ওই মহিলাকে বিমানবন্দরে আনতে গিয়েছিলেন এমন একজনও আক্রান্ত হন। ১২ মার্চ উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরে ওই মহিলা মহল্লা ক্লিনিকে দেখাতে আসেন। পরীক্ষার ফল এলে দেখা যায়, তিনি করোনা আক্রান্ত। এরই মধ্যে যে চিকিৎসক ওই মহিলার পরীক্ষা করেছিলেন, তিনিও সংক্রমিত হন। চিকিৎসকের মাধ্যমে তাঁর স্ত্রী-কন্যাও আক্রান্ত হন। ওই মহিলা সৌদি থেকে ফিরে যে পাড়াপড়শি ও আত্মীয়দর সঙ্গে দেখা করেছিলেন, এমন ৭৪ জনকেও নজরদারিতে রেখেছে স্বাস্থ্য দফতর।
মহল্লা ক্লিনিকের চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ায় দিল্লির এ ধাঁচের সব ক্লিনিকেই কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। তিনি এ-ও জানান, মৌজপুর মহল্লা ক্লিনিক বন্ধ থাকবে। বাকি মহল্লা ক্লিনিক চালু থাকবে।
একই সঙ্গে দিল্লিবাসীর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য মুদিখানা, রেশন, ওষুধ, আনাজের দোকানগুলি প্রয়োজনে চব্বিশ ঘণ্টা খোলা রাখা যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা যাবে ওই সব পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কারখানাগুলিও। এর জন্য আলাদা কোনও পারমিট লাগবে না বলে জানিয়েছেন কেজরীবাল। এ ছাড়া বিভিন্ন ই-কর্মাস সংস্থা, যারা এই সব জিনিস ঘরে পৌঁছে দিয়ে থাকে, তারা কাল থেকে পরিষেবা দেওয়া শুরু করতে পারবে। অভুক্তদের জন্য ‘হাঙ্গার হেল্পলাইন’ও চালু করেছে সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy