বাড়ছে পারিবারিক হিংসার ঘটনা। —প্রতীকী চিত্র।
করোনার প্রকোপে এক দিকে আক্রান্তের সংখ্যা যখন বেড়ে চলেছে, ঠিক সেই সময় দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনাও উত্তরোত্তর বাড়ছে। গত ২৩ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত জাতীয় মহিলা কমিশনে শুধুমাত্র ইমেল মারফত ৫৮টি পারিবারিক হিংসার অভিযোগ জমা পড়েছে।
নোভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে গত ২৪ মার্চ মধ্য রাত থেকে দেশ জুড়ে ২১ দিনব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশের ১৩০ কোটি মানুষ কার্যত গৃহবন্দি রয়েছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরনো নিষেধ। এমন পরিস্থিতিতে মহিলাদের উপর শারীরিক নির্যাতন বেড়ে গিয়েছে বলে জাতীয় মহিলা কমিশনের তথ্য তুলে ধরে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই।
উত্তর ভারত, বিশেষ করে পঞ্জাব থেকেই বেশির ভাগ অভিযোগ জমা পড়েছে বলে পিটিআই-কে জানিয়েছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগের সংখ্যাটা বেড়েছে। বাড়িতে বসে হতাশায় ভুগছেন পুরুষরা। তাই মহিলাদের উপর যাবতীয় হতাশা উগরে দিচ্ছেন তাঁরা। পঞ্জাবে সব থেকে বেশি এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। সেখান থেকে অনেক অভিযোগ এসেছে আমাদের কাছে।’’
আরও পড়ুন: নিজামউদ্দিনে সেই জমায়েতে ছিলেন এ রাজ্যেরও বহু মানুষ, চলছে খোঁজ
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনা আক্রান্ত বেড়ে ২৭, মৃত ৩, গৃহ-পর্যবেক্ষণে লাখেরও বেশি
লকডাউনের জেরে বাড়ি থেকে বাইরে বেরতে পারছেন না। নইলে ডাকযোগে আরও অভিযোগ জমা পড়ত বলেও দাবি করেছেন রেখা। তিনি বলেন, ‘‘শুধুমাত্র ইমেল মারফতই ৫৮টা অভিযোগ পেয়েছি আমরা। অনেকে ডাকযোগে অভিযোগ জানান। সেগুলি হাতে পেলে সংখ্যাটা আরও বাড়ত।’’ যাঁরা ইমেল করতে জানেন না, তাঁরা স্থানীয় পুলিশ অথবা রাজ্য মহিলা কমিশনে গিয়েও অভিযোগ জানাতে পারেন বলে জানিয়েছেন রেখা শর্মা। তিনি আরও বলেন, ‘‘লকডাউনের জেরে আমাদের কাছে অভিযোগ পৌঁছবে না ভাবছেন অনেকে। তাঁদের জন্য বলছি, স্থানীয় পুলিশ এবং রাজ্য মহিলা কমিশনের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন।’’
ব্যক্তিগত ভাবেও অনেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন অল ইন্ডিয়া প্রগ্রেসিভ উইমেনস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কবিতা কৃষ্ণণ। তিনি বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত যাঁরা যোগাযোগ করেছেন তাঁদের প্রত্যেকেই একটা কথা বলেছেন, লকডাউন ঘোষণা হবে জানলে সময় থাকতে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসতেন তাঁরা। লকডাউনের জেরে পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে। যেন তেন প্রকারে নির্যাতিতাদের সাহায্যে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।’’
জাতীয় মহিলা কমিশনে যে অভিযোগগুলি জমা পড়েছে, তার মধ্যে মেয়ের হয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন এক ব্যক্তি। পিটিআইয়ের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে হলে ওই ব্যক্তি জানান, রাজস্থানের সীকরে-তে বিয়ে হয়েছে তাঁর মেয়ের। জামাই পেশায় শিক্ষক। লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর গত কয়েক দিন ধরে স্ত্রীর উপর অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছেন তিনি। এমনকি তাঁর মেয়েকে খেতে পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ওই ব্যক্তি।
মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করা সংস্থা ‘সহেলি’র সদস্য বাণী সুব্রহ্মণ্যমের মতে, ‘‘ঘরবন্দি অবস্থায় অনেকেই মাথা ঠিক রাখতে পারেন না। তার মধ্যে হিংসাত্মক আচরণ পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলবে।’’ সেন্টার ফর সোশ্যাল রিসার্চের ডিরেক্টর রঞ্জনা কুমারীর মতে, ‘‘মহিলাদের জন্য সময়টা খুব একটা ভাল নয়।’’
জাতীয় মহিলা কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে ২৯১টি পারিবারিক হিংসার অভিযোগ পেয়েছে তারা। যার মধ্যে ২৩ মার্চের পর থেকে সব অভিযোগই ইমেলে এসেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে সব মিলিয়ে ৩০২টি অভিযোগ জমা পড়েছিল তাদের কাছে। জানুয়ারি মাসে জমা পড়েছিল ২৭০টি অভিযোগ।
শুধু লকডাউন নয়, করোনা-সংক্রমণের ফলে কাজ হারানোর ভয় এবং আর্থিক দুশ্চিন্তাও অনেককে গ্রাস করছে। কাজ হারানোর আশঙ্কার অনেকে খিটখিটে হয়ে উঠছে। বাড়ির মহিলা ও বাচ্চাদের উপরে সেই ক্ষোভ তাঁর প্রকাশ করছে বলে মনোবিদ ও সমাজকর্মীদের মত।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মার্চ মাসে প্রকাশিত একাধিক রিপোর্ট ও সমীক্ষা বলছে, শুধু ভারত নয়, কোভিড-১৯-এ ঘরবন্দি বহু দেশেই গার্হস্থ্য হিংসার ছবিটা একই রকম। ১৭ মার্চ থেকে লকডাউনে রয়েছে ফ্রান্স। তার ১১ দিন পরে সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ফ্রান্সে গার্হস্থ্য হিংসা ৩০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। রাজধানী প্যারিসে পরিসংখ্যানটা আরও বেশি, ৩৬ শতাংশ! বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সমীক্ষাও বলছে, লকডাউনে থাকা চিন ও আমেরিকাতেও বাড়ির মেয়েদের উপরে অত্যাচার অনেক বেড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy