১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তিনি লড়েছেন। যুদ্ধে হারিয়েছিলেন দৃষ্টিশক্তি। কিন্তু সেই সেনা মৃত্যু অবধি সরকারি সাহায্য পাননি! এমনই অভিযোগে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করল আদালত। বস্তুত, বোমা বিস্ফোরণে জখম সেনাকে যুদ্ধের আঘাতজনিত পেনশন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানে অস্বীকার করে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল সরকার পক্ষ। সম্প্রতি তাদের আবেদন খারিজ করে দিল আদালত।
’৭১-এর যুদ্ধে পাকিস্তানের দিক থেকে উড়ে আসা বোমা ফেটে জখম হয়েছিলেন শাম সিংহ নামে এক ভারতীয় সৈনিক। বিস্ফোরণে দৃষ্টিশক্তি হারান তিনি। ওই কারণে ১৯৭৩ সালে সেনার চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। পরে পেনশন এবং অন্যান্য সুবিধার জন্য সশস্ত্র বাহিনী ট্রাইব্যুনালে (এএফটি) দরবার করেন শাম। কিন্তু তা পাননি বলে অভিযোগ।
দীর্ঘ বছর পরে ২০২৩ সালে ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দেয় আর্থিক সাহায্য করতে হবে শামের স্ত্রী কার্নেল কৌরকে। কারণ, তার ২ বছর আগেই শাম মারা গিয়েছেন। কিন্তু বেশ কিছু ‘সীমাবদ্ধতার’ কারণে ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করার পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তি দেয় ঠিক সময়ে আবেদন করেননি সেনা বা তাঁর পরিবারের সদস্যেরা।
সম্প্রতি ওই মামলাটি ওঠে বিচারপতি হরসিমরন সিংহ শেঠি এবং বিচারপতি বিকাশ সুরির বেঞ্চে। আদালত জানায়, দুর্ঘটনার পরেই ওই সেনার সাহায্য চাওয়া উচিত ছিল এবং কেন ৪৪ বছর পরে তিনি সুযোগ-সুবিধা চেয়ে আবেদন করছেন, কেন্দ্রের এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। উচ্চ আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলে, ‘‘ওই সেনাকর্মী যুদ্ধে আহত হওয়ার পেনশন-সহ উল্লিখিত সুবিধা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। কিন্তু আবেদনকারী (কেন্দ্র) খুব ভাল করেই জানতেন যে, ওই সৈনিক যুদ্ধে আহত হয়েছেন এবং যুদ্ধের আঘাতের পেনশনের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য। তবুও তারা সেই সত্য উপেক্ষা করেছেন এবং শাম সিংহকে তাঁর উক্ত সুবিধা প্রদান করেননি।’’
আরও পড়ুন:
পাশাপাশি সেনার ওই প্রতিবন্ধকতাকে সামরিক পরিষেবার কারণ হিসাবে বিবেচনা না-করার জন্য কেন্দ্রের সমালোচনা করে আদালত। কেন্দ্রের উদ্দেশে হাই কোর্টের বার্তা, ‘‘আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে এই ধরনের পদক্ষেপের প্রশংসা করা যায় না। বিশেষ করে সেটা যখন এক জন সৈনিকের সঙ্গে সম্পর্কিত। শুধু তাই নয়, যিনি দেশের জন্য লড়াই করেছিলেন এবং দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধে জখম হয়েছেন।’’ ডিভিশন বেঞ্চ আরও বলে, ‘‘আবেদনকারীদের (কেন্দ্র) উচিত ছিল, শাম সিংহ অর্থাৎ, বিবাদী পক্ষের স্বামীকে যুদ্ধের আঘাতজনিত পেনশনের সুবিধা প্রদান করা।’’ তার পরেই সরকার পক্ষের আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত।