Advertisement
E-Paper

অঙ্ক, ডেটা সায়েন্স নিয়ে পড়তেন, ছিলেন বিদেশি সংস্থার শিক্ষানবিশ, ১৯ বছরের স্নেহার জীবনে কোন অঙ্ক মিলল না? তদন্তে দিল্লি পুলিশ

স্নেহা দেবনাথ দিল্লিতে যেখানে থাকতেন, সেই ঘর থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার হয়েছে। তাতে লেখা, ‘‘আমার ব্যর্থ বলে মনে হচ্ছে নিজেকে। নিজেকেই নিজের বোঝা মনে হচ্ছে। এ ভাবে আর থাকা সম্ভব নয়।’’

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৫ ১৫:২৮
Sneha Debnath

ত্রিপুরার মেয়ে স্নেহা দেবনাথ। পড়তে গিয়েছিলেন দিল্লিতে। রবিবার যমুনা নদী থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। —ফাইল চিত্র।

ছোট থেকেই মেয়ে জানত বড় হয়ে সে কী হতে চায়। ত্রিপুরার প্রাক্তন সেনা অফিসারের মেয়ে স্নেহা দেবনাথ চেয়েছিলেন আকাশ ছুঁতে। পরিবারের দাবি, মেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী। নিজের লক্ষ্যে অবিচল। পড়াশোনায় আগাগোড়া ভাল। পাশাপাশি অল্প বয়সেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই মেয়েই কেন আত্মহত্যা করতে গেলেন? অঙ্ক মেলাতে পারছেন না কেউ।

প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে নিখোঁজ ছিলেন দিল্লিতে পড়তে যাওয়া ত্রিপুরার মেয়ে স্নেহা। রবিবার রাতে তাঁর দেহ উদ্ধার হয় যমুনা নদী থেকে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ বছরের ওই ছাত্রীর মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। রয়েছে প্রশ্ন। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু কী কারণে নিজেকে শেষ করলেন, সেই উত্তর মেলেনি। এর মধ্যে সামনে এল এক ক্যাবচালকের বয়ান। তাঁর ক্যাবেই স্নেহাকে শেষ বার দেখা গিয়েছে দিল্লির সিগনেচার সেতুর দিকে যেতে। ওই গাড়িচালকের দাবি, সিগনেচার সেতুতে ওঠার কিছু ক্ষণ আগে একটি ফোন আসে স্নেহার কাছে। তার ৫ মিনিট পরেই গাড়ি থেকে নেমে যান ছাত্রী।

গাড়িচালকের কথায়, ‘‘সিগনেচার সেতুর কাছে প্রায় পৌঁছে গিয়েছিলাম আমরা। তখনই একটা ফোন এল ওঁর (স্নেহা)।’’ যুবকের সংযোজন, ‘‘কে ফোন করেছিলেন, সেটা তো আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। কিন্তু ফোনে কথোপকথনের ৫ মিনিট পর উনি গাড়ি থেকে নেমে যান। গাড়ি থেকে নেমে উনি সেতুর উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। আমিও গাড়ি ইউ টার্ন করে পরের ভাড়ার জন্য চলে যাই। তার পর আর কিছু জানি না। কিন্তু গাড়িতে যত ক্ষণ ছিলেন, ওঁর কোনও কাজে আমার মনে হয়নি যে উনি আত্মহত্যা করতে পারেন।’’

অন্য দিকে, মৃত ছাত্রীর পরিবার বলছে, মেয়ে হয়তো সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করবেই বলে গিয়েছিল। কিন্তু সিগনেচার সেতুতে সিসি ক্যামেরা নেই। ওই সময় ছাত্রীর গতিবিধি কেমন ছিল, তা জানতে পারছেন না তদন্তকারীরা।

স্নেহা দিল্লিতে যেখানে থাকতেন, সেই ঘর থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার হয়েছে। পরিবারের দাবি, ওটি সুইসাইড নোট। চিরকুটে লেখা, ‘‘আমার ব্যর্থ বলে মনে হচ্ছে নিজেকে। নিজেকেই নিজের বোঝা মনে হচ্ছে। এ ভাবে আর থাকা সম্ভব নয়।’’ চিরকুটে এ-ও লেখা, ‘‘অন্য কিছু নয়। এটা আমার সিদ্ধান্ত (আত্মহত্যার?)।’’

ত্রিপুরা-কন্যা উচ্চশিক্ষার জন্য দিল্লি গিয়েছিলেন। দিল্লির আত্মরাম সনাতন ধর্ম কলেজের অঙ্কের ছাত্রী ছিলেন তিনি। চার বছরের স্নাতক ডিগ্রির পাশাপাশি আইআইটি মাদ্রাজ থেকে ডেটা সায়েন্সের কোর্স করছিলেন। স্নেহার লিঙ্কডিন অ্যাকাউন্টে লেখা, অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানে ইনটার্ন হিসাবে কাজ করছেন। বায়োতে লেখা, ‘‘অঙ্ক, কম্পিউটার এবং মনস্টার অ্যানিমেশন নিয়ে আড্ডা দিতে ভালবাসি।’’

স্নেহার পরিবারের দাবি, ছোট থেকে পড়াশোনায় চৌখস মেয়েটি অল্প বয়স থেকে রোজগেরেও বটে। বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। সব সময় কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। একই সঙ্গে পরিবারও তাঁর কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাঁর আত্মহত্যার পিছনে কারণ কী হতে পারে? এ নিয়ে বাড়ির কারও কাছে জবাব নেই। স্নেহার বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীতে, প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট প্রীতীশ দেবনাথ। তিনি কিডনির অসুখে ভুগছেন। গত ৭ জুলাই থেকে মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে হন্যে হয়ে তাঁকে খোঁজ শুরু করেন মা এবং বোন। অবশেষে মেয়েকে পেলেন। কিন্তু মৃত অবস্থায়। ক্যাবচালকের কাছে তাঁরাও জানতে চান গাড়িতে কী কী কথা বলছিলেন স্নেহা। তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে দিল্লি পুলিশ।

Student Death Tripura Delhi Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy