‘অপারেশন সিঁদুর’ কেন গভীর রাতে করা হয়েছিল? কেন বেছে নেওয়া হয়েছিল রাত ১টা থেকে দেড়টার সময়? এ বার সেটাই ব্যাখ্যা করলেন ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) অনিল চৌহান। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির রাজভবনে এক আলাপচারিতায় অনিলের কথায় উঠে এসেছে ‘সিঁদুর’ অভিযানের সাফল্য এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর দক্ষতার প্রসঙ্গ।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের ‘মিনি সুইৎজ়ারল্যান্ড’ হিসাবে পরিচিত সবুজে ঢাকা বৈসরন উপত্যকায় ঘুরতে গিয়ে জঙ্গিহানায় নিহত হন বেশ কয়েক জন। তাঁদের মধ্যে প্রায় সকলেই ছিলেন পর্যটক। পহেলগাঁও হত্যালীলার প্রত্যাঘাত হিসাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিকল্পনা করে ভারত। ৬ মে রাত ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ন’টি জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনা! ভারতের দাবি, জঙ্গিদমন করতেই তাদের এই অভিযান। তবে অভিযানের সময় নির্ধারণ নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল। মধ্যরাতে অন্ধকারে তো ঠিকমতো উপগ্রহ চিত্রও পাওয়া সম্ভব ছিল না? প্রমাণ সংগ্রহ করাও খুব কঠিন ছিল? তার পরেও কেন ওই সময় বেছে নেওয়া হল?
ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক জানান, মধ্যরাতে অভিযান করার নেপথ্যে ছিল দু’টি কারণ। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমত, রাতেও আমরা ছবি তুলতে পারব, আমাদের সেই ক্ষমতার উপর আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আর দ্বিতীয়ত, সাধারণ নাগরিকদের ক্ষতি এড়ানোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমাদের কাছে।’’ অনিল জানান, ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে উপযুক্ত সময় ছিল। তার পরেও মধ্যরাতে অভিযান চালানোর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। কেন সকালে অভিযান করা হয়নি? অনিলের কথায়, ‘‘ওটা নমাজের সময়। অনেক সাধারণ মানুষ জড়ো হন ওই সময়ে। তাই চিন্তাভাবনা করে ভোরের সময় বাতিল করা হয়।’’ অর্থাৎ, ভোরবেলা অভিযান চালালে সাধারণ মানুষের হতাহতের সম্ভাবনা থাকত বেশি।
আরও পড়ুন:
‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের ন’টি জঙ্গি পরিকাঠামোয় আঘাত হেনেছিল ভারতীয় সেনা। এর মধ্যে ছিল মুজফ্ফরাবাদ, কোটলি, বহওয়ালপুর, রাওয়ালকোট, চক্সওয়ারি, ভিম্বার, নীলম উপত্যকা, ঝিলম এবং চকওয়াল। ছোড়া হয় মোট ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র। রাত ১টা বেজে পাঁচ মিনিটে শুরু হওয়া এই অভিযানের সময়সীমা ছিল ২৫ মিনিট। লশকর-এ-ত্যায়বা ও জইশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলিই ছিল ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর লক্ষ্য।
ভারতীয় সেনার দাবি, অভিযানে সফলতা এসেছে উন্নত নির্ভুল অস্ত্রশস্ত্র এবং রিয়্যাল-টাইম গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করে। সেই তথ্য অনুসন্ধান করে দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করে একযোগে হামলা চালানো হয় মধ্যরাতে। পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে যে ইমারতগুলি ধ্বংস করা হয়েছে সেগুলি মূলত জঙ্গিদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র, অস্ত্রাগার এবং বিভিন্ন জঙ্গি পরিকল্পনার ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহৃত হত বলেই ভারতের তরফে জানানো হয়।