রাশিয়াকে জব্দ করতে ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বার ইরানকে কোণঠাসা করতে আমেরিকা যে পদক্ষেপ করতে চলেছে, তাতে আখেরে ভারতেরই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। বাণিজ্যিক কারণে তো বটেই, কৌশলগত কারণেও ভারতের কাছে ইরানের চাবাহার সমুদ্রবন্দর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১০ বছরের চুক্তিতে ইরানের সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে ওই বন্দর পরিচালনা করে থাকে নয়াদিল্লি। সম্প্রতি ইরানকে ‘কোণঠাসা’ করতে চাবাহার বন্দরে অন্য দেশগুলিকে দেওয়া কিছু ছাড় প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওই বন্দর ব্যবহার করলে আমেরিকাকে জরিমানা (পেনাল্টি) দিতে হবে ভারত-সহ অন্য দেশগুলিকে।
গত মঙ্গলবার আমেরিকার বিদেশ দফতর জানিয়েছে, ট্রাম্প ইরানকে কোণঠাসা করতে চান। সেই নীতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই চাবাহার বন্দর ব্যবহারে ফের জরিমানা ধার্য করতে চলেছে হোয়াইট হাউস। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে এই নীতি কার্যকর হবে। সে ক্ষেত্রে ইরানের ওই বন্দর ব্যবহার করলে জরিমানা দিতে হবে অন্য দেশগুলিকে। এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়ে আমেরিকার বিদেশ দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ইরানের অবৈধ অর্থনৈতিক পরিকাঠামোকে ভাঙার জন্যই এই পদক্ষেপ।
গত জুন মাসে ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচিকে ভেস্তে দিতে সে দেশের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে হানা দেয় আমেরিকার সেনাবাহিনী। আমেরিকার তরফে দাবি করা হয়, গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে ইরান। আগামী দিনে তারা পরমাণু শক্তিধর দেশগুলির তালিকায় নাম লেখাতে চায়। তাতে আপত্তি রয়েছে পেন্টাগনের। এই ঘটনার পরেই আমেরিকা-ইরান সম্পর্ক আরও তলানিতে নেমেছে।
অন্য দিকে, পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তান এবং পশ্চিম এশিয়ায় পৌঁছোনোর জন্য চাবাহার বন্দর ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৩ সালেই এই বন্দরকে নতুন ভাবে গড়ে তোলার জন্য তেহরানকে প্রস্তাব দিয়েছিল নয়াদিল্লি। ২০২৪ সালের ১৩ মে ১০ বছরের একটি চুক্তিতে স্থির হয়, ইরানের বন্দর নৌ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথ ভাবে চাবাহার বন্দর পরিচালনা করবে ভারত। এই বন্দর ব্যবহার করেই পশ্চিম এশিয়া হয়ে রাশিয়া এবং ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গে জলপথে বাণিজ্য করতে চায় ভারত। তা ছাড়া এই বন্দরের মাত্র ১৪০ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে পাকিস্তানের গ্বদর বন্দর। সেই বন্দর পরিচালনা করে থাকে বেজিং। চাবাহার বন্দরের উপর ভারত নিয়ন্ত্রণ হারালে আরব সাগরে চিনের আধিপত্য বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘুরপথে আমেরিকা জরিমানা চাপালে চাবাহার বন্দর নিয়ে ভারতের পরিকল্পনা ধাক্কা খেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই প্রকল্পে অংশ নেওয়া সংস্থাগুলিও।