ভারত এবং চিনের মধ্যে সম্পর্কে উন্নতির চেষ্টা চলছে দু’তরফেই। তার কিছু নিদর্শনও দেখা যাচ্ছে চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সদ্যসমাপ্ত নয়াদিল্লি সফরের পরে। মাসের শেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এসসিও সম্মেলনে চিন গেলে সম্পর্কে গতি আরও বাড়বে বলেই মনে করছে সাউথ ব্লক।
কিন্তু দেশের নাম চিন। তাই ‘যত হাসি তত কান্না’-র জন্য প্রস্তুত থাকে সাউথ ব্লক, সর্বদাই। আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের সঙ্গে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে সম্পর্ক তৈরি করেছিল মোদী সরকার প্রথম বার। কিন্তু চিন ঘটকালি করে বিবদমান দুই পক্ষ ইসলামাবাদ এবং কাবুলকে সম্প্রতি জুড়েছে। সেই সংযোগ এতটাই যে, ভারতের চক্ষুশূল চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিককরিডরে (সিপিইসি) এ বার শামিল হতে চলেছে কাবুল।
ভারত থেকে পাকিস্তানে গিয়ে ওয়াং ই ইসলামাবাদে বৈঠক করেছেন তালিবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এবং পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দারের সঙ্গে। সেই বৈঠকে তিন দেশই বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধির বিষয়ে সম্মতি জানায়। স্থির হয়, চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর আফগানিস্তানেও প্রসারিত করা হবে। বিনিময়ে চিন এবং পাকিস্তানকে জর্জরিত করে রাখা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে তালিবান সরকারকে কড়া পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন পাক বিদেশমন্ত্রী দার। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে তালিবান ক্ষমতায় আসার পরে ইসলামিক স্টেটস খোরাসান (আইএস-কে), তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-র মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর সক্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিষয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছে চিনও। কারণ, টিটিপি এবং বালোচ বিদ্রোহীদের সংগঠন বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি-র কার্যকলাপে প্রায়ই অশান্ত হয়ে উঠছে পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশ। খনিজসমৃদ্ধ ওই প্রদেশে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে চিনের পরিকাঠামোগত কাজ।
গোটা বিষয়টি নিঃসন্দেহে অশনি সংকেত নয়াদিল্লির কাছে। সিপিইসি নিয়ে ভারতের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, এই করিডর যাচ্ছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে। এই নিয়ে তারা চিনকে বারবার সতর্ক করলেও কোনও ফল হয়নি। অন্য দিকে, কাবুলের সঙ্গে বিকল্প একটি মহাসংযোগ প্রকল্পের জন্য অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক বড় রকমের বিনিয়োগ করেছে ভারত, চাবাহার প্রকল্পের মাধ্যমে। ইরানের সঙ্গে যৌথ এই বন্দর প্রকল্প পাকিস্তানকে এড়িয়ে মধ্য এশিয়ায় পণ্য পৌঁছানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভারতের কাছে।
পাশাপাশি, পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের বৈরিতার সুযোগ নিয়ে ধীরে ধীরে কাবুলে প্রভাব বাড়াচ্ছিল নয়াদিল্লি। পহেলগাম হামলার পরে প্রকাশ্যেই ভারতের পাশে থেকেছে কাবুল। ‘অপারেশন সিঁদুর’-কেও সমর্থন করেছে। তবে চিনের মধ্যস্থতায় ইসলামাবাদ ও কাবুলের কাছাকাছি আসার যে উদ্যোগ শুরু হয়েছে তাতে তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাইছে না সাউথ ব্লক। বরং সমান্তরাল ভাবে আফগানিস্তানের মানুষের জন্য ভারতের সহযোগিতা আরও বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। তার মধ্যে রয়েছে সে দেশের ছাত্র এবং অসুস্থ মানুষের জন্য ভিসা আরও বাড়ানো, বকেয়া উন্নয়নের কাজ চিহ্নিত করে তাতে জোর দেওয়া এবং বিভিন্ন পরিকাঠামো খাতে অর্থসাহায্য, ঋণ বাড়ানো।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)