মাত্র ৩০ সেকেন্ডের ভিডিও। তাতেই ফুটে উঠেছে দিল্লি পুলিশের নৃশংসতা। ১৭ জানুয়ারি দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার পর আজ থেকেই ফের পঠনপাঠন শুরু হল হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে। যদিও পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, প্রতিবাদ চলবে। আর আজই ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি নিয়ে শুরু হল আরও এক প্রস্ত বিতর্ক।
হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার প্রতিবাদে গত শনিবার দিল্লির আরএসএস সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে জড়ো হন অনেকে। আচমকাই তাদের উপরে লাঠিসোটা নিয়ে চড়াও হন পুলিশকর্মীরা। ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে, বিক্ষোভ মিছিলে মহিলাদের চুল ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন পুরুষ পুলিশই। এক মহিলাকে চড় মেরে মাটিতে ফেলে দিতেও দেখা গিয়েছে। তবে শুধু উর্দিধারীই নয়, সাধারণ পোশাক পরা কয়েক জনও প্রতিবাদীদের মাটিতে ফেলে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন— এমনটাও দেখা গিয়েছে ভিডিওটিতে। কারা তারা উঠছে সেই প্রশ্নও। এক ছাত্র জানান, সে দিন পুলিশের লাঠি খেয়ে বিধ্বস্ত হয়ে রাস্তার এক প্রান্তে গিয়ে বসেছিলেন তিনি। দেখতে পেয়ে কয়েক জন বন্ধু এসে তাঁকে জল খেতে দিয়েছিল। তখনই পুলিশ এসে তাঁকে জলটুকু খেতে না দিয়েই ফের মারতে শুরু করে। আপাতত ওই ছাত্র হাসপাতালে ভর্তি। প্রায় একই রকম বীভৎস অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ওই মিছিলে অংশগ্রহণকারী ২৫০ জনের অনেকেই। আরএসএস-এর তরফে অবশ্য তড়িঘড়ি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, ওই ঘটনায় তাদের কোনও সদস্য জড়িত নয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। কংগ্রেসের তরফে রাহুল দিল্লির গাঁধী এই ঘটনা প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকারের কড়া নিন্দা করেছেন। টুইট করে তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের সমস্যার কথা না শুনে মোদী সরকার তাদের লাঠিপেটা করছে।’’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের অভিযোগ, ‘‘দেশ জুড়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে কার্যত ‘যুদ্ধে’ নেমেছে বিজেপি এবং আরএসএস। দিল্লি পুলিশকে ‘ব্যক্তিগত সেনা’র মতো ব্যবহার করা হচ্ছে।’’ কংগ্রেস এবং আপ— এই দুই দলের তরফেই দোষী পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের দাবি তোলা হয়েছে। দিল্লির পুলিশ কমিশনার বিএস বাসসি বলেছেন, ভিডিওটি না দেখলেও বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির দাবি, অমেঠির প্রতিশোধ নিতেই এ সব করছেন রাহুল গাঁধী।
শনিবার ঘটনাস্থলে উপস্থিত দুই সাংবাদিক জানান, মিছিলের উপরে কোনও প্ররোচনা ছাড়াই সে দিন হামলা চালিয়েছিল পুলিশ। এমনকী পুলিশের তরফে সাবধানও করা হয়নি। আচমকাই ‘এক, দুই, তিন, চার্জ’ বলে শুরু হয় লাঠিচার্জ। সেই ঘটনা এক সাংবাদিকের ক্যামেরায় ধরা পড়ায় সেটি ভেঙে ফেলেন এক পুলিশকর্মী। ওই সাংবাদিক জানান, কোনও মতে মেমরি কার্ডটি বার করে নিয়েছিলেন তিনি। যদিও পুলিশের দাবি, উর্দি ছাড়া কেউ সেখানে ছিল— এমন কথা তাদের জানা নেই। সে দিন বিক্ষোভকারীদের দু’টি কর্ডন ভেঙে ফেলেছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই লাঠি চালাতে বাধ্য হয়েছিল তারা।