Advertisement
E-Paper

দিল্লির অভিযুক্ত ‘বাবা’ চৈতন্যানন্দের দশ কীর্তি ফাঁস! কী ভাবে ছাত্রীদের হেনস্থা করতেন, তথ্য পেল পুলিশ

‘বাবা’র বিরুদ্ধে বসন্ত কুঞ্জের ম্যানেজমেন্ট কলেজের ১৭ জন ছাত্রীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। যে ঘটনায় তোলপাড় চলছে। একের পর এক ছাত্রী ‘বাবা’র কীর্তি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:১৫
‘বাবা’ চৈতন্যানন্দ সরস্বতী। ফাইল চিত্র।

‘বাবা’ চৈতন্যানন্দ সরস্বতী। ফাইল চিত্র।

তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠার পর থেকেই পলাতক দিল্লির বসন্ত কুঞ্জের একটি বেসরকারি ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধিকর্তা তথা স্বঘোষিত ‘বাবা’ স্বামী চৈতন্যানন্দ। ইতিমধ্যেই ‘বাবা’র বিরুদ্ধে লুকআউট সার্কুলার জারি করে হরিয়ানা, পঞ্জাব, মুম্বই-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। তবে ‘বাবা’ মুম্বইয়ে আত্মগোপন করে থাকতে পারেন বলেই পুলিশের সন্দেহ। কারণ, পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, তাঁর মোবাইলের টাওয়ারের শেষ অবস্থান মুম্বইয়ে দেখা গিয়েছে।

‘বাবা’ কী ভাবে নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন, তার বেশ কয়েকটি তথ্য পেয়েছে পুলিশ। শুধু তা-ই নয়, কী ভাবে কলেজের ছাত্রীদের হেনস্থা করতেন, এ রকম দশটি কীর্তিরও হদিস পেয়েছে পুলিশ। ‘বাবা’র বিরুদ্ধে বসন্ত কুঞ্জের ম্যানেজমেন্ট কলেজের ১৭ জন ছাত্রীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। যে ঘটনায় তোলপাড় চলছে। একের পর এক ছাত্রী ‘বাবা’র কীর্তি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। কী ভাবে ‘বাবা’ চৈতন্যানন্দ তাঁদের উপর শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার চালাতেন, তা একে একে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।

‘বাবা’র বিরুদ্ধে যে যে অভিযোগ উঠেছে এবং এফআইআরে যা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলি হল:

ছাত্রীদের হস্টেলে বাথরুমের সামনে গোপন ক্যামেরা

এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে, ছাত্রীদের হস্টেলে বাথরুমের সামনে ক্যামেরা বসানো হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, অভিযোগ, ছাত্রীদের উপর নজরদারি চালাতে গোটা হস্টেলে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো। দাবি করা হত, নিরাপত্তার স্বার্থে এই ক্যামেরা বসানো হয়েছে। কিন্তু ছাত্রীদের অভিযোগ, ক্যামেরার মাধ্যমে ছাত্রীদের স্নানের দৃশ্য দেখতেন। এ ছাড়াও হস্টেলের ঘরে ছাত্রীরা কী কী করছেন, সব কিছুর উপর নজরদারি চালাতেন ‘বাবা’।

হোয়াট্‌সঅ্যাপে অশ্লীল মেসেজ এবং কুপ্রস্তাব

ছাত্রীদের অভিযোগ, হোয়াট্‌সঅ্যাপে রাতে মেসেজ পাঠাতেন ‘বাবা’। নানা রকম অশ্লীল প্রশ্ন করতেন। একইসঙ্গে কুপ্রস্তাবও দিতেন। এক ছাত্রীর দাবি, তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে কখনও লিপ্ত হয়েছেন কি না। যদি শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন, তা হলে গর্ভনিরোধক ব্যবহার করেছিলেন কি না। ছাত্রীদের বেশির ভাগই অভিযোগ তুলেছেন, তাঁদের গভীর রাতে মেসেজ পাঠিয়ে ‘বাবা’ বলতেন, ‘বেবি, আই লভ ইউ।’ ‘আই অ্যাডোর ইউ’। ‘সুইটি আই লাইক ইউ’। এ ছাড়াও তাঁর নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়ে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্য জোরজবরদস্তি করা হত বলে অভিযোগ।

প্রকাশ্যে ছাত্রীদের অপমান করা

ছাত্রীদের অভিযোগ, সকলের সামনে অপমান করা হত তাঁদের। হরিয়ানার এক ছাত্রীর অভিযোগ, তাঁর প্রেমিক আছেন জানতে পেরে ‘বাবা’ খুব রেগে গিয়েছিলেন। তার জন্য তাঁকে চরিত্রহীন বলে সকলের সামনে অপমান করেন। আরও এক ছাত্রীর দাবি, তাঁদেরই এক সহপাঠীকে ‘বাবা’র ঘর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসতে দেখেন। তাঁর পোশাক ছেঁড়া ছিল। এক ছাত্রীর দাবি, ‘বাবা’ সকলের স্নানের সময় জানতে চাইতেন। কে কোন সময়ে স্নান করেন, সেগুলি তাঁকে জানাতে হত। ঘরে এবং বাথরুমে সিসি ক্যামেরা বসানো ছিল। যে ক্যামেরার সরাসরি সংযোগ ছিল ‘বাবা’র মোবাইলের সঙ্গে।

উৎসব পালনের নামে ছাত্রীদের হেনস্থা

অভিযোগ, হোলির সময় ছাত্রীদের জোর করে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হত। তার পর ‘বাবা’ আসতেন সব ছাত্রীর মাথায় এবং গালে রং মাখাতেন। তার পর ‘বাবা’কে রং মাখাতে জোর করানো হত ছাত্রীদেরও।

রাতের বেলায় নিজের ঘরে তলব, জোর করে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া

ছাত্রীদের অভিযোগ, একটু বেশি রাত হলেই ‘বাবা’র ঘরে ডাক পড়ত। তার পর ‘বাবা’র সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হত। বিদেশ এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের টোপ দেওয়া হত। কেউ রাজি না হলে তাঁকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হত।

প্রস্তাবে রাজি না হলে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি, টাকা আদায়

‘বাবা’র প্রস্তাব না মানলে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হত বলে অভিযোগ। অনেক ছাত্রীই হেনস্থার ভয়ে কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। অভিযোগ, যাঁরা ‘বাবা’র প্রস্তাবে রাজি না হতেন, তাঁদের শিক্ষাগত ভাবে শাস্তির মুখে পড়তে হত। কলেজে উপস্থিত থাকলেও, উপস্থিতি শূন্য করে দেওয়া হত। পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেওয়া হত। ডিগ্রির শংসাপত্র আটকে রাখা হত। এমনকি জোর করে টাকা আদায় করা হত।

‘বাবা’কে সহযোগিতা করতেন তাঁর তিন মহিলা কর্মী

এফআইআরে শুধু ‘বাবা’ নন, তাঁর তিন মহিলা কর্মীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিযোগ, ছাত্রীদের জোর করে ‘বাবা’র ঘরে নিয়ে যেতেন তাঁরা। ‘বাবা’র পাঠানো সমস্ত মেসেজ জোর করে মুছে দেওয়ার কাজ করতেন তাঁরা। অভিযোগ, ‘বাবা’র দুর্নীতি এবং কুকীর্তির সমস্ত প্রমাণ লোপাট করার দায়িত্ব থাকত এই তিন মহিলা কর্মীর উপর।

অবৈধ ভাবে নজরদারি, ফোন, নথি বাজেয়াপ্ত করা

ছাত্রীদের অভিযোগ, তাঁদের প্রতিটি পদক্ষেপের উপর ‘শকুনের’ মতো নজরদারি চালাতেন ‘বাবা’। কেউ ‘বাবা’র চাহিদা পূরণ করতে না পারলে তাঁর ফোন এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি বাজেয়াপ্ত করে রাখা হত। এমনকি সেই ছাত্রীকে হস্টেলের একটি ঘরে কোণঠাসা করে রাখা হত। কারও সঙ্গে কথা বলতে বা দেখা করতে দেওয়া হত না। একপ্রকার বন্দি বানিয়ে রাখা হত বলে অভিযোগ।

‘বাবা’র শিক্ষাগত যোগ্যতাও ভুয়ো, সন্দেহ পুলিশের

তিনি নিজেকে ম্যানেজমেন্ট গুরু এবং লেখক হিসাবে পরিচয় দেন। প্রোফাইল বলছে, ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো বুথ স্কুল অফ বিজনেস থেকে এমবিএ এবং পিএইচডি করেছেন। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে সাতটি সাম্মানিক ডি.লিট.। দেশ এবং বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেই সব সম্মান পেয়েছেন। যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত দিল্লির স্বঘোষিত ‘বাবা’ স্বামী চৈতন্যানন্দের শিক্ষাগত যোগ্যতা এখন পুলিশের তদন্তের আওতায়। দিল্লি পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বাবার এই শিক্ষাগত যোগ্যতাও ভুয়ো কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে বই প্রকাশিত হয়েছে চৈতন্যানন্দের, সেগুলিতে নিজেকে ‘বিশ্ববন্দিত লেখক’ বলে দাবি করেছেন তিনি।

১৬ বছর ধরে চলছে ‘বাবা’র কীর্তি

তদন্তকারীদের একটি সূত্র বলছে, ‘বাবা’র এই কীর্তি ১৬ বছর ধরে চলছে। প্রায় ৫০ জন ছাত্রীর হোয়াট্সঅ্যাপ মেসেজ এবং ফোনের রেকর্ড ঘেঁটে বেশ কিছু তথ্য উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, এই প্রথম নয়, এর আগেও চৈতন্যানন্দের বিরুদ্ধে এ রকম বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছিল। হিন্দুস্তান টাইম্‌স-এর প্রতিবেদন বলছে, ‘বাবা’র বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা ঝুলছে আগে থেকে। তার মধ্যে রয়েছে প্রতারণা এবং যৌন হেনস্থার মামলাও। ২০০৯ সালে এই অভিযোগ উঠেছিল। তার পরেও ২০১৬ সালে আবার যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে ‘বাবা’র বিরুদ্ধে।

ঘটনাচক্রে, পটীয়ালা হাউস কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছেন ‘বাবা’ চেতন্যানন্দ। যদিও আদালত শুক্রবার ‘বাবা’ আগাম জামিনের বিষয়ে তাদের রায় স্থগিত রেখেছে। একইসঙ্গে জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় কিংবা শনিবার এই বিষয়ে রায় দেওয়া হবে। শুনানির সময় দিল্লি পুলিশ ‘বাবা’র আগাম জামিনের বিরোধিতা করেছে।

Molestation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy