দিল্লির অ্যাসিড হামলার ঘটনা পুরোটাই সাজানো। আর ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে রয়েছেন ‘আক্রান্ত’ তরুণীর বাবাই!
রবিবার উত্তর-পশ্চিম দিল্লির অশোক বিহারে এক তরুণীর উপর অ্যাসিড হামলার অভিযোগ ওঠে। ওই তরুণী পুলিশকে জানিয়েছিলেন, কলেজ যাওয়ার পথে তাঁর পথ আটকান তিন যুবক। তার পরেই তাঁকে লক্ষ্য করে অ্যাসিড ছোড়া হয়! যদিও শেষ মুহূর্তে দু’হাত দিয়ে মুখ আড়াল করে দেন তরুণী। তাতেই রক্ষা পায় তাঁর মুখ। তবে দু’হাতের অনেক অংশই পুড়ে যায়। বর্তমানে ওই তরুণী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। যদিও ২৪ ঘণ্টা মধ্যেই অন্য দিকে মোড় নেয় ঘটনার গতিপ্রকৃতি। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই তরুণীর বয়ানে বেশ কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পায়। বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, আসলে ওই তরুণীর উপর কেউই অ্যাসিড হামলা করেননি। পুরো ঘটনাটি সাজিয়েছিলেন তাঁর বাবা।
সূত্রের খবর, তরুণী যে তিন অভিযুক্তের কথা জানিয়েছেন, তাঁদের ফাঁসানোর জন্যই অ্যাসিড হামলার গল্প বোনা হয়। পুলিশ তরুণীর বাবাকে আটক করেছে। জেরার মুখে নিজের অপরাধের কথা তিনি স্বীকার করেছেন বলে দাবি পুলিশ সূত্রে। তিনি জানিয়েছেন, বাড়ি থেকে শৌচাগার পরিষ্কার করার অ্যাসিড সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। পরে সেই অ্যাসিডই নিজের হাতে ঢেলে দেন তিনি!
কেন অ্যাসিড হামলার গল্প সাজালেন ওই তরুণীর বাবা? ঘটনায় যে মূল অভিযুক্তের কথা বলা হচ্ছিল, তাঁর স্ত্রী থানায় তরুণীর বাবার বিরুদ্ধেই ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। কী অভিযোগ ওই মহিলার? অভিযোগপত্রে তাঁর বয়ান অনুযায়ী, ওই তরুণীর বাবার কাছে কাজ করতেন তিনি। দিন কয়েক আগে সেই কাজ ছেড়ে দেন। তবে যখন তিনি কাজ করতেন তখন জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করেন। পরে ভিডিয়ো দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করতেন তরুণীর বাবা। পুলিশি জেরায় ‘আক্রান্ত’ তরুণীর বাবা জানিয়েছেন, ধর্ষণের মামলা দায়ের করার কারণেই ওই মহিলার স্বামীকে ফাঁসানোর ছক কষেছিলেন তিনি।
রবিবার থেকেই দিল্লিতে এই অ্যাসিড হামলাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতারির দাবি ওঠে। এমনকি দিল্লির উপরাজ্যপাল বিকে সাক্সেনাও মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। কিন্তু তদন্তে নেমে এই ঘটনায় অন্য গন্ধ পান তদন্তকারীরা। তরুণীর বয়ানের সঙ্গে ঘটনায় যা তথ্য মিলেছে, তার অনেক অসঙ্গতি লক্ষ করেন তাঁরা।
আরও পড়ুন:
২০ বছর বয়সি ওই তরুণী পুলিশকে জানান, রবিবার বাড়ি থেকে রিকশায় চেপে কলেজ যাচ্ছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন ওই তরুণী। তবে ২০০ মিটার যাওয়ার পরে তিনি রিকশা থেকে নেমে পড়েছিলেন। অভিযোগ, সেই সময়ই বাইকে চেপে এসে তিন যুবক তাঁর পথ আটকান। তাঁদের মধ্যে এক জন অপর জনের হাতে অ্যাসিডের বোতল তুলে দেন। পর ক্ষণেই তরুণীর গায়ে অ্যাসিড ছুড়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান অভিযুক্তেরা। তিন জনই তরুণীর পূর্ব পরিচিত!
কেন ২০০ মিটার পরে ওই তরুণী রিকশা থেকে নেমে পড়েছিলেন, তা ভাবাচ্ছিল তদন্তকারীদের। পুলিশ সূত্রে এ-ও জানা যায়, ঘটনাস্থলের কাছের দেওয়ালে তদন্তকারীরা অ্যাসিডের কোনও চিহ্ন খুঁজে পাননি! আদৌ ‘মূল অভিযুক্ত’ ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধে। জানা যায়, তদন্তের স্বার্থে তাঁর কল রেকর্ড, মোবাইল লোকেশন খতিয়ে দেখে পুলিশ। তবে এখনও পর্যন্ত ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে তাঁর উপস্থিতির প্রমাণ মেলেনি। তাঁর ‘কল ডিটেইল রেকর্ড’ (সিডিআর) খুঁটিয়ে দেখে জানা গিয়েছে ঘটনার সময় ওই যুবক করোলবাগ এলাকায় ছিলেন! এ ছাড়াও, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হয়েছে। তবে তাতেও ঘটনার সময় বা তার আগে-পরে তাঁর কোনও গতিবিধি নজরে আসেনি বলেই সূত্রের খবর। তার পরেই ওই তরুণীর বাবার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মিলল ফাঁসানোর গল্প।