নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং হিংসাত্মক পরিস্থিতির দিকে সতর্ক নজর রাখছে নয়াদিল্লি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমাজমাধ্যমে বলেছেন, ‘‘আমি হিমাচল প্রদেশ ও পঞ্জাব থেকে ফেরার পরে আজ মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটিতে নেপাল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নেপালের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও শ্রীবৃদ্ধি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’’
প্রতিবেশী রাষ্ট্রে এই মাপের অশান্তি হলে সেই দেশে সফর সংক্রান্ত এবং সেখানে বসবাসকারী ভারতীয়দের চলাফেরার ক্ষেত্রে সাবধানবাণী সংক্রান্ত নিয়মমাফিক নির্দেশিকা জারি করেছে বিদেশ মন্ত্রক। ভারতের সঙ্গে নেপালের প্রায় ১,৭৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে সতর্কতা জারি হয়েছে। উত্তরাখণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্য নেপালের সীমান্তবর্তী। নেপালের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে পাঁচ রাজ্যেই সীমান্তে তৎপরতা বেড়েছে। বিহারের নেপাল সীমান্তবর্তী সাতটি জেলায় নজরদারি বাড়িয়েছে সশস্ত্র সীমা বল এবংবিহার পুলিশ। পশ্চিম চম্পারণ, সীতামঢ়ী, মধুবনী, আরারিয়া, সুপৌল, পূর্ব চম্পারণ এবং কিষাণগঞ্জে টহলদারি বেড়েছে।
নেপালে উদ্ভূত রাজনৈতিক সঙ্কট ক্রমশ ঘোরালো হচ্ছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্র মনে করছে, নেপালের এই আন্দোলন এবং অশান্তির সময়কালটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির বিরুদ্ধে আক্রোশ রাস্তায় আছড়ে পড়েছে। ওলি সবে ফিরেছেন চিন থেকে সে দেশের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করে, আবার সেপ্টেম্বরের শেষেই তাঁর নয়াদিল্লি আসার কথা ছিল। তবে এই গোটা বিষয়টির পিছনে সে দেশের অভ্যন্তরীণ কারণ ছাড়া বাইরের কোনও রাষ্ট্রের ইন্ধন রয়েছে কি না— তা বলার সময় এখনও আসেনি বলেই মনে করছে সাউথ ব্লক।
এই অশান্তি বাড়লে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ধাক্কা খাবে, এটাতেই আপাতত সর্বোচ্চ উদ্বেগ নয়াদিল্লির। সরকারের এক আধিকারিকের কথায়, “আমরা ঘটনাবলির দিকে কড়া নজর রাখছি। এক্সপোর্ট প্রোমোশান কাউন্সিলের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা চলছে সম্ভাব্য বিপদগুলির পর্যালোচনার জন্য।” বিদেশ মন্ত্রকের মতে, ‘নেপালের সঙ্গে মসৃণ বাণিজ্যসম্পর্ক বহাল রাখা অত্যন্তজরুরি। ভারত থেকে নিয়মিত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের রাস্তাটা খোলা থাকা শুধু ভারতীয় ব্যবসায়ীদের জন্যই নয়, নেপালবাসী ক্রেতাদের জন্যও জরুরি। এ কথা মাথায় রাখা হচ্ছে যে ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে ভারত থেকে নেপালে রফতানি হয়েছে ৭৩২ কোটি ডলারের পণ্য। আমদানি করা হয়েছে মাত্র ১২০ কোটি ডলার। অর্থাৎ নেপালেরসঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পুরোপুরি ভারতের পক্ষে’।
এ ছাড়া কৌশলগত শিবিরের মতে, নেপালের অস্থিরতা শুধু গোটা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে নাড়িয়ে দিতে পারে এই আশঙ্কাও রয়েছে সাউথ ব্লকের। গত বছরই বাংলাদেশ নিয়ে এই ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে নয়াদিল্লিকে। বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘প্রতিবেশী এবং বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে ভারত আশা করে যে, সমস্ত পক্ষ সংযম বজায় রাখবে। এর পাশাপাশি, শান্তি ও আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করা হবে’। নেপালে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের সতর্ক থাকতে এবং নেপালি কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকা মেনে চলতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
নেপালে থাকা ভারতীয়দের জন্য হেল্পলাইন চালু করেছে ভারতীয় দূতাবাস। সেগুলির নম্বর হল +৯৭৭-৯৮০৮৬০২৮৮১ ও +৯৭৭-৯৮১০৩২৬১৩৪। এই নম্বরগুলিতে ওয়টস্যাপ কলও করা যাবে। পাশাপাশি helpdesk.eoiktm@gmail.com, এই ইমেল আইডিও প্রকাশ করেছে দূতাবাস।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)