E-Paper

কোয়াডে কুলুপ দিল্লির, অক্ষের ভবিষ্যৎই প্রশ্নে

চলতি বছরের শেষে কোয়াডের শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল নয়াদিল্লিতে। কিন্তু অপারেশন সিঁদুরকে কেন্দ্র করে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ভূমিকা এবং ভারত-আমেরিকা শুল্কের লড়াই গোটা ছবিটাই বদলে দিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৪১

—প্রতীকী চিত্র।

গত এক মাসে কোয়াড-ভুক্ত চারটি দেশের বিদেশমন্ত্রী স্তরে পার্শ্ববৈঠক হল একাধিক আন্তর্জাতিক মঞ্চে। প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকও হল ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে গত রাতেই, জোহানেসবার্গে জি২০ শুরু হওয়ার ঠিক আগে। এই বৈঠকগুলিতে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়গুলি নিয়ে মত বিনিময় এবং পারস্পরিক সহযোগিতার কথা থাকলেও হারিয়ে গিয়েছে ‘কোয়াড’ শব্দটি। অস্ট্রেলিয়া বা জাপানের বৈঠক-পরবর্তী বক্তব্যে কোয়াডের প্রসঙ্গে এলেও একেবারে নীরব সাউথ ব্লক।

চলতি বছরের শেষে কোয়াডের শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল নয়াদিল্লিতে। কিন্তু অপারেশন সিঁদুরকে কেন্দ্র করে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ভূমিকা এবং ভারত-আমেরিকা শুল্কের লড়াই গোটা ছবিটাই বদলে দিয়েছে। ভারত এবং আমেরিকার এই টানাপড়েনেই নাভিশ্বাস উঠছে কোয়াড-এর, মনে করছে কূটনতিক মহল। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের ব্যঙ্গ, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কার্যত লুকোচুরি খেলা চলছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। ট্রাম্প যেখানে যাচ্ছেন, মোদী এড়িয়ে যাচ্ছেন। আবার ট্রাম্প যেখানে যাচ্ছেন না, সেখানে পৌঁছে যাচ্ছেন মোদী। এর সাম্প্রতিকতম নজির আজ শুরু হওয়া জি২০ সম্মেলন।

অথচ গত মাসেও কুয়ালা লামপুরে আসিয়ান সম্মেলনে আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়োর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের। দু’দেশের মধ্যে কৌশলগত এবং বাণিজ্যিক আদানপ্রদান নিয়ে আলোচনা হলেও কোয়াড প্রসঙ্গ তোলেননি কোনও পক্ষই। আবার দু’দিন আগে নয়াদিল্লিতে কোয়াড-এর আর এক সদস্য রাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়ার বিদেশমন্ত্রী পেনি ওং-এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন জয়শঙ্কর। বৈঠকে বিদেশমন্ত্রী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, গবেষণা ও উদ্ভাবন, মহাকাশ ও জ্বালানি-সহ ভারত-অস্ট্রেলিয়া সহযোগিতার প্রতিটি স্তম্ভের উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণের কথা বলেছেন। পাশাপাশি এও বলেছেন যে, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের সংলাপ ‘উন্মুক্ত এবং নিরাপদ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য আস্থা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জরুরি।’ সেখানেও ঊহ্য ছিল কোয়াড। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল— ভারত, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের মধ্যে কোয়াড অক্ষ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যিক অংশীদারি বাড়ানোর লক্ষ্যেই তৈরি হয়েছিল।

একই ভাবে গত মাসের শেষে মালয়েশিয়ায় আসিয়ান সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে জাপানের বিদেশমন্ত্রী মোতেগি তোশিমিৎসুর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে কথা হয়েছিল জয়শঙ্করের। বৈঠকের পর জাপানের তরফ থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়, তাতে কোয়াডের উল্লেখ ছিল। বলা হয়েছিল, ‘জাপান এবং ভারতের কৌশলগত স্বার্থ অভিন্ন। আর সে কারণেই ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও সুস্থিতির জন্য জাপানের মন্ত্রী ভারতের সঙ্গে এবং কোয়াড-ভুক্ত রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে কাজ করতে চান।’ জবাবে জয়শঙ্কর শুধু জানান, ‘ভারত এবং জাপানের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে আঞ্চলিক শান্তি ও সুস্থিতি আনা সম্ভব।’

আমেরিকা এবং ভারতের বর্তমান স্নায়ুর লড়াইয়ে কোয়াডের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেল কি না, কূটনৈতিক মহলে এ বার সেই প্রশ্নই উঠছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

India-US Relationship Quad Quad Meet USA

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy