E-Paper

সন্ত্রাসের কেন্দ্র, পাকিস্তানকে তোপ জয়শঙ্করের

এ দিন বক্তৃতায় দেশকে ‘ভারত’ হিসেবে উল্লেখ করেন জয়শঙ্কর। তাঁর কথায়, “পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের কেন্দ্র। ভারতকে স্বাধীনতার সময় থেকেই এই সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছে। কারণ, এক প্রতিবেশী আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের কেন্দ্র।”

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:৪৮
এস জয়শঙ্কর।

এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র।

রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় বক্তৃতায় পাকিস্তানের কড়া সমালোচনা করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

এ দিন বক্তৃতায় দেশকে ‘ভারত’ হিসেবে উল্লেখ করেন জয়শঙ্কর। তাঁর কথায়, “পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের কেন্দ্র। ভারতকে স্বাধীনতার সময় থেকেই এই সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছে। কারণ, এক প্রতিবেশী আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের কেন্দ্র। কয়েক দশক ধরে বড় বড় জঙ্গি হামলার মূল উৎস খুঁজে পাওয়া গিয়েছে একটি দেশেই। রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি তালিকা সেই দেশের নাগরিকের নামে ভর্তি।” জয়শঙ্করের মতে, পাকিস্তানের জঙ্গি কার্যকলাপের সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের উপরে হামলা। ভারত আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে সন্ত্রাসে মদতদাতাদের সুবিচারের ব্যবস্থা করেছে।”

জয়শঙ্করের মতে, সন্ত্রাসের মোকাবিলা করার জন্য আরও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ, যখন রাষ্ট্র সন্ত্রাসকে নীতি হিসেবে ঘোষণা করে এবং শিল্পের স্তরে জঙ্গি সন্ত্রাসের কেন্দ্র চলে তখন সেই নীতির কড়া সমালোচনা হওয়া উচিত। জঙ্গিদের প্রকাশ্যে মহিমান্বিত করা হচ্ছে। জঙ্গি নেতাদের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি সন্ত্রাসে আর্থিক মদতের উৎসও বন্ধ হওয়া উচিত। জঙ্গিদের সহায়তা দানকারী ব্যবস্থার উপরে ক্রমাগত চাপ তৈরি করা প্রয়োজন।” তাঁর মতে, সন্ত্রাসে মদতদাতা রাষ্ট্রগুলিকে যারা ছাড় দিচ্ছে তারা এক দিন সন্ত্রাসের মুখে পড়বেন। সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ ও সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে মহান নেতা বলেছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে পাকিস্তানের পাশাপাশি জয়শঙ্কর আমেরিকাকেও কড়া বার্তা দিয়েছেন বলে মত কূটনীতিকদের।

রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের দাবি নিয়েও সরব হয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। তাঁর মতে, পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্যের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। ভারত আরও বেশি দায়িত্ব নিতে তৈরি। আমেরিকার শুল্কচাপের ফলে বিপাকে পড়তে হয়েছে ভারতকে। নাম না করে সেই প্রসঙ্গেও সরব হয়েছেন জয়শঙ্কর। তাঁর মতে, যে সব দেশ শুল্কের হার ও বাজারে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে তাদের পক্ষে ঝুঁকি কমানো বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

অন্য দিকে অপারেশন সিঁদুর প্রসঙ্গেও পাকিস্তানকে এক হাত নিয়েছে ভারত। সাম্প্রতিক সংঘর্ষে তাঁদের জয় হয়েছে এবং তাঁরা এখন নয়াদিল্লির সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী বলে শুক্রবার রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় দাবি করেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। ভারত আজ ওই মঞ্চেই শরিফকে কটাক্ষ করে বলেছে, “পাকিস্তানের বিমানবন্দরের রানওয়ে ও হ্যাঙ্গারের ধ্বংসের ছবি ইতিমধ্যেই সবার সামনে এসেছে। এসব যদি জয়ের নমুনা হয়, তা হলে ইসলামাবাদ সেই আনন্দ নিয়েই থাকুক!” শরিফের উদ্দেশে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের প্রতিনিধি পেটাল গহলৌতের মন্তব্য, “পাক প্রধানমন্ত্রী যদি সত্যিই শান্তির জন্য আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে রাস্তা একেবারে সোজা। পাকিস্তান সব জঙ্গি ঘাঁটিগুলিকে বন্ধ করে দিক। জঙ্গিদের ভারতের হাতে তুলে দিক।”

শরিফ দাবি করেছিলেন, কোনও প্ররোচনা ছাড়াই ভারত অপারেশন সিঁদুরের মধ্য দিয়ে হামলা চালিয়েছে। তবে পাক সেনা ‘পেশাদারিত্ব ও সাহসের সঙ্গে’ তার জবাব দিয়েছে। গহলৌত পাল্টা বলেন, “গত ১০ মে, এই পাকিস্তানের সেনাবাহিনীই সংঘর্ষ বন্ধ করতে ভারতের কাছে সরাসরি আবেদন জানিয়েছিল।” সন্ত্রাসবাদ যে পাকিস্তানের বিদেশনীতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, রাষ্ট্রপুঞ্জে সে কথাও তুলে ধরেন ভারতের প্রতিনিধি। গহলৌতের কথায়, জম্মু-কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর হামলা চালানো পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন রেজ়িস্টেন্স ফ্রন্টকে ২০২৫ সালের ২৫ এপ্রিল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে সমর্থন করেছে ইসলামাবাদ। কোনও রকম ‘নাটক করে বা অসত্য কথা বলে’ সেই তথ্য চাপা দেওয়া যাবে না। এটিই শুধু নয়, সন্ত্রাসবাদকে মদত ও অন্য দেশে চালান করার যে ঐতিহ্য পাকিস্তানের রয়েছে, সে ব্যাপারে সকলেই অবহিত। গহলৌতের মন্তব্য, “সন্ত্রাসবাদ পাক বিদেশনীতির কেন্দ্রবিন্দু এবং সে দেশের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় আবারও সন্ত্রাসবাদকেই গৌরবের সঙ্গে তুলে ধরেছেন।”

রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে সিন্ধু জল চুক্তি বাতিলের প্রসঙ্গ টেনে ভারতকে আক্রমণ করেছিলেন শরিফ। তাঁর দাবি ছিল, এই চুক্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নয়াদিল্লি অবৈধ ভাবে জল আটকেছে। পাক প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ জানিয়ে বলেছিলেন, তাঁদের কাছে এই কাজ যুদ্ধের সমান। ভারতের প্রতিনিধি বিশ্বের সামনে জানিয়ে দেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যাবতীয় বিষয় দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্য দিয়েই সমাধান করতে হবে।

রাষ্ট্রপুঞ্জে নয়াদিল্লির প্রতিনিধি পেটাল গহলৌতের স্পষ্ট বক্তব্য, সন্ত্রাসবাদী ও সন্ত্রাসের মদতদাতার মধ্যে কোনও ফারাক করবে না ভারত। সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্য দুই পক্ষকেই দায়ী করা হবে। পাকিস্তানকে নিশানা করে গহলৌত বলেন, “পরমাণু যুদ্ধের হুমকির আড়ালে সন্ত্রাসবাদ চালিয়ে যাওয়া আমরা বরদাস্ত করব না।”

রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় যে কড়া ভাষায় পাক প্রধানমন্ত্রীকে জবাব দিয়েছেন ভারতের প্রতিনিধি, তা যেমন কূটনৈতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে, তেমনই পেটাল গহলৌতকে নিয়েও বিভিন্ন মহলে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রের খবর, এই মহিলা কূটনীতিককে ২৪ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধিদলের ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ করা হয়। পরের বছর থেকে পরামর্শদাতা হিসেবে রয়েছেন তিনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

S jaishankar UNGA Pakistan Terrorism India-Pakistan

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy