E-Paper

জ়ুবিন-শোকে স্তব্ধ অসম

১৯৯১ সালের কথা। বি বরুয়া কলেজের অধ্যক্ষ অবাধ্য ছাত্রকে তলব করে বললেন, “বিএসসিতে সাদা খাতা জমা দিয়েছ কেন?” ছাত্রের জবাব, “ও সব আমার জন্য নয়। আমি গান তৈরি করি, গাই।”

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:৪৮
প্রয়াত জ়ুবিন গার্গ।

প্রয়াত জ়ুবিন গার্গ। —ফাইল চিত্র।

‘‘যখন আমি মারা যাব, দেখবে সারা অসম আমার জন্য রাস্তায় নামবে।’’ জমায়েতে কোন গান গাওয়া হবে, তা-ও ঠিক করে দিয়েছিলেন খেয়ালি শিল্পী। “ধুমুহাৰ স’তে মোৰ বহুদিনৰে নাচোন...” অর্থাৎ, ঝড়ের সঙ্গে বহুদিন ধরেই নাচে পা মেলাচ্ছি আমি। তিনি, জ়ুবিন গর্গ।যোরহাটে আত্মীয়দের স্মৃতিচারণে এক খ্যাপা কিশোরের দৌরাত্ম্য, রুটি-শিমুই প্রেম, গাছে ওঠা, মাছ ধরার গল্প ঘুরেফিরে আসছে। বড় সাধ করে যোরহাটের বাড়ির সামনে একটা পাইন গাছ লাগিয়েছিলেন। তাকে বুকে জড়িয়ে গল্প করতেন। ঘনিষ্ঠদের বলতেন, ওই গাছ যে দিন মারা যাবে, আমিও মারা যাব। কিছু দিন আগেই ঝড়ে উপড়েছে সেই গাছও। তা বলে, এ ভাবে কথা রাখবেন তিনি। জ়ুবিনরা হয়তো এমনই হন।

১৯৯১ সালের কথা। বি বরুয়া কলেজের অধ্যক্ষ অবাধ্য ছাত্রকে তলব করে বললেন, “বিএসসিতে সাদা খাতা জমা দিয়েছ কেন?” ছাত্রের জবাব, “ও সব আমার জন্য নয়। আমি গান তৈরি করি, গাই।” অবাক অধ্যক্ষের প্রশ্ন ছিল, “গান গেয়ে পেট ভরবে!” পরের বছরই সুপারহিট ‘অনামিকা’ অ্যালবাম জ়ুবিন গর্গকে হিরো করে দিল। কলেজের সুবর্ণজয়ন্তীতে কলেজছুট সেই ছাত্রই প্রধান অতিথি।

২৪ ঘণ্টা হয়ে গেল, অসম জ়ুবিনহীন। গত কাল রাতভর রাস্তাঘাটে শোকপালনের পরে ঝিম ধরা অসম আজ সর্বাত্মক, স্বতঃস্ফূর্ত বন্‌ধ দেখল। স্কুল-কলেজ বন্ধ, অনির্দিষ্ট কাল স্থগিত হয়েছে ষাণ্মাসিক পরীক্ষা, ঘোষিত হয়েছে তিন দিনের জাতীয় শোক। জ়ুবিনের রহস্যমৃত্যু নিয়ে অসম সরকার জ়ুবিনসঙ্গীদের বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা জ়ুবিনের দেহ আনতে রওনা হয়েছেন দিল্লিতে। রাতে দেহ দিল্লিতে পৌঁছনোর কথা।জ়ুবিনের মৃত্যু নিয়ে উত্তেজিত ভক্তদের সামলানো নিয়ে আশঙ্কায় প্রশাসনও। রাতে জ়ুবিনের প্রোফাইল থেকেই তাঁর স্ত্রী গরিমা জনতার উদ্দেশে বলেন, “জ়ুবিনকে অনেক ভালবাসা দিয়েছেন আপনারা। ওকে শেষ বারের মতো সকলে দেখুন, শান্তিপূর্ণ ভাবে দেখুন।’’ তবে দিল্লিতে জ়ুবিনের দেহ নামার পরেই গুয়াহাটি বিমানবন্দরে ব্যারিকেড ভেঙেছে জনতা। পরিস্থিতি সামলাতে নামানো হয়েছে সিআইএসএফ।

সরুসজাই স্টেডিয়ামে রাখা হবে দেহ। অন্ত্যেষ্টি ও সমাধি কোথায় হবে, এখনও চূড়ান্ত হয়নি। হাতে আঁকা জ়ুবিনের ছবি আঁকড়ে সারা রাত কেঁদে কাটিয়েছেন গরিমা। অসুস্থ শরীরে বিছানায় শুয়ে বাবা কপিল বরঠাকুর।

প্রকৃতি আর প্রাণী ছিল জ়ুবিনের প্রাণ। পোষ্য কুকুরেরা মুখে তুলছে না কিছু। অসহায় জ়ুবিনের খারঘুলির রামসা হিলের বাড়িতে থাকা ‘মধুসূদন গর্গ’ আর ‘উদাসিনী গার্গী’। প্রথম জন বাঁদর, পরের জন বক। দু’জনকেই অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে এনেছিলেন জ়ুবিন। আর ছিল তাঁর বন্ধু কাকেরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Zubeen Garg Assam

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy