Advertisement
E-Paper

‘ধর্ষিত’ চিকিৎসকের আত্মহত্যা: দুর্যোধন, দুঃশাসনের হাত থেকে বাঁচতে কোনও কৃষ্ণকে পেল না মেয়েটা! বললেন কন্যাহারা পিতা

সাতারার একটি হোটেল থেকে উদ্ধার হয় সরকারি হাসপাতালে কর্মরত মহিলা চিকিৎসকের ঝুলন্ত দেহ। ২৬ বছরের চিকিৎসক হাতের তালুতে লিখে যান, শেষ ৫ মাসে মহারাষ্ট্র পুলিশের এক সাব-ইন্সপেক্টরের (এসআই) তাঁকে চার বার ধর্ষণ করেছেন!

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ২১:০৬
Maharashtra Woman Doctor Death

মৃত মহিলা চিকিৎসকের হাতের তালুতে লেখা ছিল অভিযুক্তদের নাম। তাঁদের এক জনকে শনিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। —ফাইল চিত্র।

প্রভাবশালীদের বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে একা লড়াই করেছিলেন তাঁর ডাক্তার মেয়ে। হাসপাতালে সকলে দেখেছেন ‘দুঃশাসন ও দুর্যোধনের’ ব্যবহার। কিন্তু একা ‘দ্রৌপদী’ মেডিক্যাল অফিসারের সম্ভ্রম রক্ষা করতে কেউ এগিয়ে আসেননি। কোনও ‘কৃষ্ণ’কে পাননি তাঁর কন্যা। শনিবার এমনই মন্তব্য করলেন মহারাষ্ট্রের সাতারার ‘ধর্ষিত’ এবং আত্মঘাতী চিকিৎসকের বাবা। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের কাছে তাঁর আর্জি, দোষীদের প্রত্যেককে যেন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এই একটাই দাবি তাঁর।

গত বৃহস্পতিবার রাতে সাতারার একটি হোটেল থেকে উদ্ধার হয় ফলটনের সরকারি হাসপাতালে কর্মরত মহিলা চিকিৎসকের ঝুলন্ত দেহ। ২৬ বছরের চিকিৎসকের হাতের তালুতে লেখা ছিল ‘আত্মহত্যার কারণ।’ তিনি লিখে যান, শেষ পাঁচ মাসে মহারাষ্ট্র পুলিশের এক সাব-ইন্সপেক্টরের (এসআই) তাঁকে চার বার ধর্ষণ করেছেন। তিনি সাতারার যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন, সেই বাড়িমালিকের ইঞ্জিনিয়ারপুত্র তাঁকে মানসিক নির্যাতন করতেন। দ্বিতীয় জনকে শনিবারই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। কিন্তু ধর্ষণে অভিযুক্ত এবং বরখাস্ত হওয়া এসআই এখনও অধরা। পরিবারের দাবি, হাসপাতালে অনৈতিক কাজ করতে জোর করা হত চিকিৎসককে। প্রভাব খাটিয়েছিলেন এক সাংসদও। হুমকি এসেছে সেখান থেকেও। তাঁদের কথা মতো ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে ‘ফিট সার্টিফিকেট’ তৈরি করে দিত হত মহিলা মেডিক্যাল অফিসারকে। পুলিশ বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের জেলে ভরার জন্য ‘ফিট সার্টিফিকেট’ করাত। তাতে সই করতে বাধ্য করা হত ওই মহিলা চিকিৎসককে।

মৃতার বাবার দাবি, চিকিৎসক হিসাবে এমন অনিয়ম দেখে বিরোধিতা করেছিলেন তাঁর কন্যা। কিন্তু এই ‘অসম যুদ্ধে’ কাউকে পাশে পাননি তিনি। কন্যার ধর্ষণ এবং আত্মহত্যা প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে মহাভারতের উদাহরণ টানেন বীড জেলার ওই বাসিন্দা। তিনি জানান, সাতারার হাসপাতালে ২ বছরের কম সময়ে চাকরি করেছেন তাঁর মেয়ে। কিন্তু ওই কয়েক মাসে তাঁকে শুধুই হয়রানি করেছেন প্রশাসনের বড় বড় মাথারা।

হস্তিনাপুরে পাশা খেলা খেলায় হেরে যুধিষ্ঠির তাঁর রাজ্য, সম্পত্তি, এমনকি স্ত্রী দ্রৌপদীকে হারিয়েছিলেন। প্রতিহিংসাপরায়ণ কৌরব ভ্রাতৃগণ কুরুসভায় দ্রৌপদীকে অপমান করেছিলেন। দুঃশাসন হস্তিনাপুরের রাজসভায় দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের চেষ্টা করেন। ঠিক সেই সময়ে শ্রীকৃষ্ণের হস্তক্ষেপে দ্রৌপদীর সম্মানরক্ষা হয়। অকালপ্রয়াত মেয়েকে দ্রৌপদীর সঙ্গে তুলনা করে হতভাগ্য বাবা বলেন, ‘‘হস্তিনাপুরে রাজসভার মতো সাতারার হাসপাতালে যখন অন্যায় চলছিল, তখন সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। দুর্যোধন এবং দুঃশাসন সেখানে ছিল। কিন্তু এক জনও কৃষ্ণ হয়ে আমার মেয়েকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। তাই, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটলে যেন এক জন কৃষ্ণ হয়ে এগিয়ে আসেন। সেই মেয়ের সম্মান রক্ষা করেন।’’ কন্যাহারা বাবা আরও বলেন, ‘‘আমার মেয়ের সঙ্গে যা ঘটেছে, আর কারও সঙ্গে যেন তা না ঘটে। যারা ওর সঙ্গে অন্যায় করেছে, যাদের জন্য ও অকালে চলে গেল, তাদের অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত।’’ মুখমন্ত্রী ফডণবীসের উদ্দেশে প্রৌঢ় বলেন, ‘‘আমার একটাই দাবি, দোষীদের যেন ফাঁসিতে লটকানো হয়। এটাই আমার একমাত্র চাওয়া, আমার একটাই দাবি।’’ মৃত চিকিৎসকের ভাই-ও জানান, তাঁর দিদির সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে, যা পাশবিক অত্যাচার হয়েছে, তাতে দোষীদের একটাই শাস্তি হয়— মৃত্যুদণ্ড।

অন্য দিকে, শনিবার ফলটন গ্রামীণ থানার ইনস্পেক্টর সুনীল মহাধিক তাঁর চিঠিতে দাবি করেছেন, ওই চিকিৎসক পুলিশকে সহযোগিতা করতেন না। প্রায়শই পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, চিকিৎসকের অকালমৃত্যুর নেপথ্যে যাঁরা দায়ী, তাঁদের কাউকে ছাড়া হবে না। তিনি বলেন, ‘‘আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করা চিকিৎসকের হাতের তালুতে লেখা ‘চিঠি’ তাঁর যন্ত্রণার ইঙ্গিত দিয়েছে। শুক্রবারই আমরা অভিযুক্ত পুলিশকর্মীকে বরখাস্ত করেছি। আমরা তদন্ত শুরু করেছি। কোনও দোষী রেহাই পাবে না। তবে বিরোধীরা এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করছে। এটা অভিপ্রেত নয়।’’

‘ধর্ষিত’ চিকিৎসকের আত্মহত্যার ঘটনার প্রেক্ষিতে শনিবার সকালে সাতারা থেকে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার দূরে এক ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে ধৃত ওই অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। বিচারক তাঁর চার দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

Crime Maharashtra Police Rape case Suicide Abetment doctor death Maharashtra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy