Advertisement
E-Paper

বাজির লড়াইয়ে কেরলের মন্দিরে ছাই শতাধিক

বিনা অনুমতিতেই মন্দির চত্বরে চলছিল আতসবাজির লড়াই। শনিবার ভোররাতের আকাশজোড়া সেই আলোর রোশনাইয়ে যখন মুগ্ধ হাজার পনেরো দর্শনার্থী, তখনই হঠাৎ তুমুল বিস্ফোরণ। রোশনাই বদলে আকাশে তখন আগুনের বিশাল গোলা। এক নিমেষে ছাই শতাধিক প্রাণ।

কোল্লম (কেরল)

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৭
আলোর রোশনাই দেখতে এসে বলি দর্শনার্থীদের এক জন। রবিবার কোল্লমের এক হাসপাতালের মর্গে।  ছবি:রয়টার্স।

আলোর রোশনাই দেখতে এসে বলি দর্শনার্থীদের এক জন। রবিবার কোল্লমের এক হাসপাতালের মর্গে। ছবি:রয়টার্স।

বিনা অনুমতিতেই মন্দির চত্বরে চলছিল আতসবাজির লড়াই।

শনিবার ভোররাতের আকাশজোড়া সেই আলোর রোশনাইয়ে যখন মুগ্ধ হাজার পনেরো দর্শনার্থী, তখনই
হঠাৎ তুমুল বিস্ফোরণ। রোশনাই বদলে আকাশে তখন আগুনের বিশাল গোলা। এক নিমেষে ছাই শতাধিক প্রাণ।

কেরলের একশো বছরের পুরনো মন্দির পুত্তিঙ্গল থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে বসে তখনও বোঝা যায়নি, ঠিক কী ঘটেছে।
ঘড়ির কাঁটায় ভোর সাড়ে তিনটে। দূর থেকে শব্দ শুনে কেউ কেউ ভেবেছেন বুঝি ভূমিকম্প। কিছু ক্ষণের মধ্যেই মন্দির চত্বর থেকে ভেসে এসেছে আর্তনাদ-কান্না-চিৎকার। পুলিশ জানিয়েছে, মন্দির লাগোয়া গুদামঘরটাই বারুদের স্তূপ। বাজি ঠাসা ছিল সেখানে। আতসবাজির ফুলকি কোনও ভাবে গিয়ে পড়ে
সেই গুদামঘরে। সেখান থেকেই
এত বড় বিপর্যয়। প্রাণ হারালেন অন্তত ১০৬ জন। আহত চারশোর কাছাকাছি মানুষ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বাজির প্রতিযোগিতার অনুমতি ছিল না মন্দির প্রশাসনের কাছে। অথচ শনিবার সকাল থেকেই এ নিয়ে পুরস্কার ঘোষণা করে ছড়ানো হয়েছে প্রচারপত্র। পুলিশের দাবি, বাজি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন বাবা-ছেলে, সুরেন্দ্রন এবং উমেশ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এই দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। গুদামঘরে বিনা অনুমতিতে ১৫০ কিলোগ্রাম বাজি মজুতের অভিযোগ উঠেছে সুরেন্দ্রনের বিরুদ্ধে। পলাতক মন্দিরের ১৫ সদস্যের কমিটিও।

মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চান্ডি এই ঘটনার তদন্তের ভার দিয়েছেন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে। তদন্তে নামছে রাজ্য পুলিশের অপরাধ
দমন শাখা। মৃতদের পরিজনকে দশ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘‘এই
ঘটনা হৃদয়বিদারক এবং ভয়ঙ্কর।’’ পাক বিদেশ মন্ত্রকও শোকবার্তা পাঠিয়েছে।

এই মন্দির থেকে ৫০ মিটার দূরে থাকেন সত্তরোর্ধ্ব পঙ্কজাক্ষী আম্মা। তিনি জানালেন, বাজির দাপটে প্রতি বারই ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাঁদের বাড়ি। তাই কোল্লম জেলাশাসকের কাছে দ্বারস্থ হন তিনি। তাই এ বার প্রতিযোগিতার অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে দাবি পঙ্কজাক্ষীর।

বস্তুত বাজির জেরে এমন দুর্ঘটনা কেরলে নতুন কিছু নয় বলে জানাচ্ছেন রাজ্যের অনেকেই। বেআইনি ভাবে বাজি মজুত, ব্যবহার চলে আকছার। এ বারও তাই হয়েছে। ‘‘আগুনের গোলার সঙ্গে বিকট আওয়াজ। সঙ্গে সঙ্গে সব অন্ধকার,’’ বললেন স্থানীয় টিভি সাংবাদিক লালু। ঘটনার পরেই সেখানে গিয়ে দেখেন, চার দিকে শুধু অগ্নিদগ্ধ দেহ, রক্তমাখা কাপড়। কোথাও পড়ে দেহাবশেষ, চটি, ভাঙা চাঙড়। পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া শরীরগুলো দেখে কাউকেই প্রায় চেনার উপায় নেই।

মন্দিরের কাছেই যাঁদের বাড়ি, সেই গিরিজা জানাচ্ছেন, গুদামঘরের দেওয়াল ভেঙে তার নীচে চাপা পড়েও অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। বিস্ফোরণের অভিঘাত এতটাই ছিল যে ঘটনাস্থল থেকে দশ মিটার দূরে ছিটকে গিয়েছে দেওয়ালের চাঙড়।

ভোররাতে প্রাথমিক ভাবে উদ্ধার-পর্বে অসুবিধা হলেও ধীরে ধীরে এগিয়েছে কাজ। শনাক্ত হয়েছে ৬০টি দেহ। ভারতীয় সেনার তরফে রবিবার জানানো হয়, সকালেই বায়ুসেনার দু’টি হেলিকপ্টার পৌঁছয় তিরুঅনন্তপুরম বিমানবন্দরে। সেখান থেকে কোল্লমে চিকিৎসক ও ওষুধ পৌঁছনো এবং প্রয়োজনে আহত ব্যক্তিদের দ্রুত তিরুঅনন্তপুরমে এনে চিকিৎসার জন্যই এই ব্যবস্থা। জলপথে উপকূলরক্ষী বাহিনীর
একটি জাহাজও চিকিৎসকদের নিয়ে কোল্লম পৌঁছয়।

Kerala Fire
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy