স্কুলছুটির পর বাসে ওঠার জন্য পাদানিতে পা দিয়েছিল সে। বাধা দিলেন স্কুলবাসের চালক। পাঁচ বছরের শিশুটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিল। কী বলবে বুঝতে পারেনি। চালকও পরোয়া করেননি। শিশুটিকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখেই অন্য পড়ুয়াদের নিয়ে চলে যান তিনি। খানিক ক্ষণ একা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে শিশুটি। তার পর কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির পথ ধরে। কয়েক জন পরিচিত তাকে দেখতে পেয়ে বাড়ি পৌঁছে দেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল কেরলের মলপ্পুরমে। অভিযোগ, শিশুটির বাবা দু’মাস স্কুলের বাসভাড়া দিতে পারেননি বলে এই ‘শাস্তি’!
মলপ্পুরমের চেলাম্ব্রার এএলপি স্কুলটি সরকার পোষিত। শিক্ষক এবং কর্মীদের বেতন দেয় রাজ্য সরকার। তবে বাকি সমস্ত কাজের ব্যয়ভার স্কুলেরই। ওই স্কুলেরই পড়ুয়া পাঁচ বছরের শিশুটি। পরিবারের অভিযোগ, দিন দুয়েক আগে স্কুল ছুটির পর বাসে উঠতে গেলে শিশুটিকে বাধা দেওয়া হয়। তাকে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায় বাসটি। ভেবে দেখা হয়নি, শিশুর নিরাপত্তার কথা।
শিশুটির বাবা জানিয়েছেন, আর্থিক সমস্যার কারণে দু’মাস ছেলের স্কুলবাসের ফি দিতে পারেননি। পরের মাসেই টাকাটা দিয়ে দিতেন। কিন্তু সে জন্য নাবালক পুত্রকে এমন ‘শাস্তি’ দেওয়া হবে, ভাবতেই পারেননি। তিনি জানান, পাঁচ বছরের ছেলে হাপুস নয়নে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরেছে। মানসিক ভাবে বড্ড আঘাত পেয়েছে। আর স্কুলেই যেতে চাইছে না সে।
আরও পড়ুন:
বাবা-মা ঠিক করেছেন, ওই স্কুলে আর ছেলেকে পাঠাবেন না। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ করে কেরলের শিক্ষামন্ত্রী, রাজ্য শিশুসুরক্ষা কমিশন এবং পুলিশের কাছে আবেদন করেছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, অভিভাবকদের অবহিত না করে শিশুটিকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায় স্কুলবাস। শিশুটির বাবা বলেন, ‘‘ভাগ্যিস কয়েক জন প্রতিবেশীর চোখে পড়েছিল। ওঁরা দেখেন কাঁদতে কাঁদতে হাঁটছে ছেলেটা। পিঠে স্কুলব্যাগ। তাঁরাই ওকে বাড়িতে পৌঁছে দেন।’’
বাসচালকের দাবি, স্কুলের প্রিন্সিপালের নির্দেশমাফিক কাজ করেছেন তিনি। ১,০০০ টাকা দিতে বিলম্বের কারণে ওই কাজ করেছেন। অন্য দিকে, স্কুল কর্তৃপক্ষ সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে কয়েক জন আলাদা ভাবে শিশুটির বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাঁরা জানান, যা হয়েছে তা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। কিন্তু শিশুটির মায়ের অভিযোগ, কেন তাঁদের না জানিয়ে ছেলেকে এ ভাবে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হল, সেই প্রশ্ন করতে গিয়ে স্কুলে অপমানিত হয়েছেন তিনি। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এমনকি, স্কুল থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছিল।
ওই অভিযোগ প্রসঙ্গেও স্কুল কর্তৃপক্ষ মুখ খোলেননি। গোটা ঘটনায় প্রশাসনিক ভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে খবর।