বেশ কিছু দিন ধরে বনাধিকারিকের স্ত্রী এবং দুই নাবালক সন্তানকে দেখতে পাচ্ছিলেন না প্রতিবেশীরা। জিজ্ঞাসা করলে এ-কথা ও-কথা বলে পাশ কাটিয়ে যেতেন বনাধিকারিক। শেষে বাসভবনের অদূরে মাটি খুঁড়ে নিখোঁজ তিন জনের দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। স্ত্রী এবং সন্তানদের খুন করে পুঁতে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন ওই বনাধিকারিক। গুজরাতের ভাবনগরের ঘটনা।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের নাম শৈলেশ খম্বলা। পেশায় এসিএফ শৈলেশের স্ত্রীর নাম নয়না খম্বলা। কিছু বিষয় নিয়ে ওই দম্পতির ঝগড়া হয়েছিল। সেই জন্য ঘুমন্ত স্ত্রীকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেন ওই বনাধিকারিক। একই ভাবে ১৩ বছরের মেয়ে এবং ৯ বছরের ছেলেকে তিনি হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ। প্রমাণ লোপাট করার জন্য তালাজা রোডে সরকারি বাসভবনের কাছে জঙ্গলে দু’টি ৬ ফুট গর্ত খুঁড়ে তিন জনের দেহ চাপা দিয়ে দেন।
পুরো ঘটনাটি প্রতিবেশী এবং পরিচিতদের সৌজন্যে বিষয়টি পুলিশের নজরে এসেছে। অভিযোগকারীরা জানান, শৈলেশকে স্ত্রী-সন্তানেরা কোথায় জিজ্ঞাসা করলে কখনও তিনি বলতেন, তাঁরা বেড়াতে গিয়েছেন। কখনও আবার কোনও কথা না বলে পাশ কাটিয়ে যেতেন। শেষমেশ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ সত্য প্রকাশ্যে আনেন অভিযুক্ত।
জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের পৈতৃক বাড়ি সুরতে। স্ত্রী এবং সন্তানেরা সেখানেই থাকতেন। সম্প্রতি তাঁরা ভাবনগরে এসে থাকছিলেন। পুলিশের প্রশ্নে প্রথমে শৈলেশ জানান, তাঁকে কিছু না বলেই সন্তানদের নিয়ে স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। কিন্তু কেন তাঁদের খোঁজখবর নেননি, সেই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি ওই বনাধিকারিক। তিনি ‘সাক্ষী’ করেছিলেন নিরাপত্তারক্ষীকে। বলেছিলেন, ওই নিরাপত্তারক্ষী দেখেছেন রেগেমেগে দুই সন্তানকে নিয়ে নয়না অটোয় উঠে চলে গিয়েছেন। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষী পুলিশকে জানান, এমন কিছু তাঁর চোখে পড়েনি। এমনকি, তিনিও জানেন না যে নয়না এবং তাঁর ছোট ছোট দুই সন্তান হঠাৎ করে কেন নিখোঁজ হয়ে গেলেন!
আরও পড়ুন:
এর পর আটক করে অভিযুক্ত বনাধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাঁর মোবাইলের কল রেকর্ড খতিয়ে দেখা হয়। তার সূত্র ধরে ডাকা হয় ওই বনাধিকারিকের এক অধস্তন কর্মীকে। তাঁর নাম গিরিশ ভানিয়া। তিনি পুলিশকে জানান, বনাধিকারিকের নির্দেশে তিনি দুটো গর্ত খুঁড়েছিলেন। ‘স্যর’ তাঁকে বলেছিলেন প্রচুর জঞ্জাল জমেছে। সেগুলো মাটিতে পুঁতে দেবেন। সে জন্য গত ২ নভেম্বর তিনি এক শ্রমিককে নিয়ে আসেন শৈলেশের বাড়িতে। সেই ব্যক্তি গর্ত খুঁড়ে দিয়ে চলে যান। পরে আবার ‘স্যরের’ নির্দেশে ডাম্পার ডেকেছিলেন মাটি ভরাট করার জন্য। তখন নাকি শৈলেশ তাঁকে বলেছিলেন, ওই গর্তে একটি নীলগাই পড়ে মারা গিয়েছে। তাকে কবর দিতে হবে।
শেষমেশ নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করে নেন শৈলেশ। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানান, প্রায়শই স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তি হত বলে তাঁকে এবং দুই সন্তানকে মেরে ফেলেছেন। তিনটি দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার ধৃতকে আদালতে হাজির করানো হবে বলে জানিয়েছে গুজরাত পুলিশ।