Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Gyanvapi Mosque

জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরের সেই ‘শিবলিঙ্গের’ বয়স জানতে পরীক্ষার আবেদন খারিজ বারাণসী আদালতে

পাঁচ হিন্দু মহিলা জ্ঞানবাপী মসজিদে দেবদেবীর মূর্তি আছে দাবি করে পুজোর অনুমতি চেয়েছেন। বারাণসী আদালতকে সেই আবেদনের নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।

জ্ঞানবাপী মসজিদ এবং কাশী বিশ্বনাথ মন্দির বিতর্কে নতুন মাত্রা।

জ্ঞানবাপী মসজিদ এবং কাশী বিশ্বনাথ মন্দির বিতর্কে নতুন মাত্রা। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২২ ১৫:০৪
Share: Save:

জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে পাওয়া তথাকথিত ‘শিবলিঙ্গে’র কার্বন ডেটিং পদ্ধতিতে বয়স নির্ধারণের আর্জিতে সায় দিল না বারাণসী জেলা আদালত। মসজিদ চত্বরে ওজুখানায় শিবলিঙ্গের উপস্থিতি দাবি করে তার বয়স জানার জন্য ‘কার্বন ডেটিং’ পরীক্ষার যে আবেদন জানানো হয়েছিল সিনিয়র বিচারক অজয়কুমার বিশ্বেশ শুক্রবার তা খারিজ করে বলেছেন, ‘‘শিবলিঙ্গের অস্তিত্ব খোঁজার জন্য জ্ঞানবাপী চত্বরে কোনও রকম বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের কাজ করা যাবে না।’’

বারাণসী জেলা আদালতে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার আবেদনের বিরোধিতা করেছিল ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া (জ্ঞানবাপী) মসজিদ কমিটি’। বিচারক বিশ্বেশ তা মেনে নিয়েছেন। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের অগস্টে পাঁচ হিন্দু মহিলা জ্ঞানবাপীর ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’ (ওজুখানা ও তহখানা নামে পরিচিত) এবং মসজিদের অন্দরের পশ্চিমের দেওয়ালে দেবদেবীর মূর্তির অস্তিত্বের দাবি করে তা পূজার্চনার অনুমতি চেয়ে যে মামলা দায়ের করেছিলেন তারই প্রেক্ষিতে মসজিদের অন্তদের ভিডিয়ো সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বারাণসীর নিম্ন আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকর। এর পরেই হিন্দু পক্ষের তরফে প্রাপ্ত নমুনাগুলির কার্বন ডেটিং পরীক্ষার আবেদন জানানো হয় গত ২২ সেপ্টেম্বর।

সেই সমীক্ষা ও ভিডিয়োগ্রাফির কাজ শেষ হওয়ার পরে গত ২০ মে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মামলার শুনানির দায়িত্ব পায় বারাণসী জেলা আদালত। পর্যবেক্ষক দলের ভিডিয়োগ্রাফির রিপোর্টে মসজিদের ওজুখানার জলাধারে শিবলিঙ্গের মতো আকৃতির যে কাঠামোর খোঁজ মিলেছে, সেটি আসলে ফোয়ারা বলে মুসলিম পক্ষ দাবি করে। অন্য দিকে, হিন্দুপক্ষের তরফে প্রাপ্ত নমুনাগুলির কার্বন ডেটিং পরীক্ষার আবেদন জানানো হয় গত ২২ সেপ্টেম্বর।

গত ৭ অক্টোবর মামলার শুনানি-পর্বে বিচারক বিশ্বেশ দু’টি বিষয়ে আবেদনকারীদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। প্রথমত, ওই ‘শিবলিঙ্গ’কে এই মামলার অংশ করা যায় কি না। দ্বিতীয়ত, কোনও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার নির্দেশ আদালত দিতে পারে কি না। আবেদনকারী হিন্দু মহিলা আবেদনকারীদের মুখ্য আইনজীবী বিষ্ণুশঙ্কর জৈন এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘আমরা দু’টি বিষয়ের উপরে জোর দিয়েছি। প্রথমত, আমরা মন্দির চত্বরে থাকা দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সব বিগ্রহের কাছে প্রার্থনা জানানোর অনুমতি চেয়েছি। সেই সঙ্গে আমরা জানিয়েছি, ওই শিবলিঙ্গ আগে জলের তলায় ছিল। জল সরানোর পরে সেটি দৃশ্যমান বিগ্রহ হয়ে উঠেছে। ফলে সেটি মামলার অংশ হতে পারে।’’

সেই সঙ্গে বিষ্ণুশঙ্কর বলেন, ‘‘দ্বিতীয়ত, আদালতের রায়ে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা হওয়ার পক্ষে আইন রয়েছে। সে দিকেও বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’’ অন্য দিকে, ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া (জ্ঞানবাপী) মসজিদ কমিটি’র আইনজীবী আখলাক আহমেদ আদালতকে জানিয়েছিলেন, তাঁরা এই সব নতুন সওয়ালের জবাব দেওয়ার জন্য সময় চান। এর পর মুসলিম পক্ষকে মত জানানোর জন্য ১১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন বিচারপতি বিশ্বেশ।

‘শিবলিঙ্গে’র বয়স নির্ধারণে কার্বন ডেটিং পদ্ধতির প্রয়োগ নিয়ে অবশ্য ধন্দ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মধ্যে। তাঁরা জানাচ্ছেন, কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে মূলত জীবাশ্ম বা দেহাবশেষের বয়স নির্ধারণ করা হয়। পরিবেশে কার্বনের সবচেয়ে বেশি যে আইসোটোপ পাওয়া যায় তা হল কার্বন-১২। সেই সঙ্গে খুব অল্প পরিমাণ কার্বন-১৪-ও পাওয়া যায়। পরিবেশে এই দুই আইসোটোপের অনুপাত প্রায় স্থির।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, প্রাণী বা উদ্ভিদ পরিবেশ থেকে এই দুই ধরনের কার্বন আইসোটোপই গ্রহণ এবং ত্যাগ করে। মৃত্যুর পরে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। কার্বন-১২ আইসোটোপের ক্ষয় হয় না। কিন্তু কার্বন-১৪ আইসোটোপ তেজস্ক্রিয়। ৫,৭৩০ বছর পরে কার্বন-১৪-এর পরিমাণ অর্ধেক হয়ে যায়। বৈজ্ঞানিক ভাষায় যার নাম ‘হাফ লাইফ’। ফলে প্রাণী বা উদ্ভিদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর পরে কার্বনের এই দুই আইসোটোপের অনুপাত বদলায়। কার্বন ডেটিং পদ্ধতিতে সেই পরিবর্তনের হিসেব করে ওই প্রাণী বা উদ্ভিদের মৃত্যুর আনুমানিক সময় নির্ধারণ করা সম্ভব। কিন্তু শিলার মতো বস্তুর ক্ষেত্রে এ ভাবে বয়স নির্ধারণ কঠিন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE