Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বিপদের উপর বিপদ, বিমান ভাড়া আকাশছোঁয়া

মানুষ বিপর্যস্ত। সেই বিপদকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা লোটার অভিযোগ উঠছে বিমানসংস্থাগুলির বিরুদ্ধে। গত দু’দিন ধরে চেন্নাই বিমানবন্দর বন্ধ। চেন্নাইয়ে আটকে পড়া অন্য রাজ্যের মানুষ যেনতেন প্রকারে বেঙ্গালুরু বা হায়দরাবাদ এসে সেখান থেকে বিমানে করে বাড়ি ফিরতে চাইছেন।

ছবি: পিটিআই

ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৯
Share: Save:

মানুষ বিপর্যস্ত। সেই বিপদকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা লোটার অভিযোগ উঠছে বিমানসংস্থাগুলির বিরুদ্ধে।

গত দু’দিন ধরে চেন্নাই বিমানবন্দর বন্ধ। চেন্নাইয়ে আটকে পড়া অন্য রাজ্যের মানুষ যেনতেন প্রকারে বেঙ্গালুরু বা হায়দরাবাদ এসে সেখান থেকে বিমানে করে বাড়ি ফিরতে চাইছেন। আর এই দুই বিমানবন্দর থেকে গত দু’দিন ধরে টিকিটের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গিয়েছে।

শুক্রবার শেষ মুহূর্তে এসে টিকিট কাটার সময়ে হায়দরাবাদ থেকে কলকাতায় আসার জন্য জেট ন্যূনতম বিমান ভাড়া চেয়েছে ২৫ হাজার টাকা! আর বেঙ্গালুরু থেকে শুক্রবার ইন্ডিগো ১৩ হাজার টাকা নিলেও এয়ার ইন্ডিয়া একটি টিকিটের দাম হাঁকিয়েছে ৩৭ হাজার টাকা!

শুক্রবার ইন্টারনেটে টিকিট কাটতে গিয়ে দেখা যায়, শনিবার বেঙ্গালুরু-কলকাতা রুটে ইন্ডিগোর বিমানের ন্যূনতম ভাড়া ১২ হাজার টাকা। বেঙ্গালুরু থেকে মুম্বই ও ভুবনেশ্বর ঘুরে যাত্রীদের কলকাতা পৌঁছে দেওয়ার জন্য জেট চেয়েছে ৪৩ হাজার টাকা! রবিবার বেঙ্গালুরু থেকে সরাসরি কলকাতায় নিয়ে আসার জন্য স্পাইসজেট ন্যূনতম বিমান ভাড়া চেয়েছে ২৮ হাজার টাকা! অন্য শহর ঘুরে কলকাতা পৌঁছতে চাইলে অন্য সংস্থার উড়ানের টিকিট তুলনায় সস্তায় বিকোচ্ছে। ওই একই দিনে হায়দরাবাদ থেকে কলকাতায় আসার টিকিট পাওয়া গিয়েছে ১০ হাজার টাকায়।

আরও পড়ুন, ছন্দে ফেরার মুখেই আবার বৃষ্টি, বেহাল চেন্নাই

বোঝাই যাচ্ছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যাত্রী চাপ বেড়েছে ওই দুই বিমানবন্দরে। চেন্নাই থেকে নিয়মিত গড়ে যে ১২০টি বিমান অন্য শহরে উড়ে যায়, তাদের যাত্রীরা এখন ভিড় করছেন বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদে। বিমান সংস্থার স্বাভাবিক নিয়মে চাহিদা বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে ভাড়াও বাড়ে। বিমান সংস্থার কর্তাদের যুক্তিও তাই। ওই দুই বিমানবন্দর থেকে প্রায় প্রতিটি বিমান পুরো ভর্তি হয়েই উড়ে যাচ্ছে।

এখন প্রতিটি সংস্থাই একটি উড়ানের জন্য আগে থেকে বিভিন্ন স্তরে ভাড়া নির্ধারণ করে রাখে। তাই অনেক আগে কেউ সেই উড়ানের টিকিট কাটলে যেমন প্রথম স্তরে অনেক সস্তার টিকিট পান, তেমনই শেষ মুহূর্তে কেউ কাটলে অনেক বেশি টাকা দিতে হয়। বিমান সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘এ ভাবেই কম্পিউটারে ভাড়ার বিভিন্ন স্তর আগে থেকে ঠিক করা থাকে। সেটা ইচ্ছা মতো কমানো-বাড়ানো যায় না।’’

পাল্টা প্রশ্ন উঠেছে, এটা তো আর উৎসবের ভিড় নয়। দুর্যোগে পড়ে মানুষ ফিরে আসতে চাইছেন যে যার ঘরে। এই মুহূর্তে তাঁদের পকেট কেটে মুনাফা কেন?

এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, সাধারণ নিয়মেই বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। শেষের দিকের টিকিটের ভাড়া বেশিই থাকে। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি তো অন্য রকম? এই সময় কি শেষের টিকিটগুলোর জন্যও সাধারণের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনা করা যেত না? সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘বেঙ্গালুরু থেকে এখন যাঁরা শেষ মুহূর্তে টিকিট কাটছেন, কী করে জানব তাঁরা চেন্নাই থেকে আসছেন না বেঙ্গালুরু শহর থেকেই আসছেন?’’ একই যুক্তি দিয়েছেন অন্য সংস্থার কর্তা-ব্যক্তিরাও।

বিমান মন্ত্রক সূত্রের খবর, শুক্রবার সকালেই বিষয়টি নিয়ে বিমান পরিবহণের সচিব আর এন চৌবের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বিমানমন্ত্রী গজপতি রাজু। সমস্ত বিমান সংস্থাকে যোগাযোগ করে বেশি ভাড়া না নেওয়ার জন্য সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। কিন্তু সেই নির্দেশের বিশেষ প্রতিফলন পড়েনি ভাড়ায়। বিমানযাত্রীদের সর্বভারতীয় সংগঠনের সভাপতি সুধাকর রেড্ডিও এ ভাবে আকাশছোঁয়া ভাড়া নেওয়ার নিন্দা করেছেন।

জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের যে যুবক-যুবতীরা চেন্নাইয়ে চাকরি বা পড়াশোনার সূত্রে থাকেন, তড়িঘড়ি তাঁরা এখন যে যার ঘরে ফিরতে চাইছেন। অনেকে দু’-এক দিনের জন্য কাজে গিয়েও আটকে পড়েছেন। এই অবস্থায় অসহায় মানুষগুলো বাড়ি ফিরতে চাইছেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই কোনওক্রমে সড়ক পথে বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদ বিমানবন্দরে গিয়ে টিকিট কাউন্টারে পৌঁছনোর পর টিকিটের দাম শুনে অবাক।

চেন্নাইয়ের পরিস্থিতিতে উল্টে যাত্রীদের সাহায্য করার দাবি উঠেছে বিমান সংস্থাগুলি থেকে। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তারা প্রতিদিন হায়দরাবাদ থেকে একটি বিমান নিয়ে যাচ্ছে চেন্নাইয়ের বায়ুসেনা ঘাঁটি রাজালিতে। সেখান থেকে ১২০ জন যাত্রীকে বিনা পয়সায় নিয়ে আসছে হায়দরাবাদে। একই ভাবে শুক্রবার রাজালি থেকে যাত্রীদের তুলে নিয়ে বেঙ্গালুরু পৌঁছে দিয়েছে স্পাইসজেটও। ইন্ডিগোর তরফে জানানো হয়েছে, অন্য সংস্থার তুলনায় তাদের ভাড়া অনেক কম। তা ছাড়া এয়ার ইন্ডিয়ার মতো তারাও চেন্নাই থেকে যাতায়াতের বিমান টিকিট থাকলে বেঙ্গালুরু থেকে বিনা পয়সায় বিমানে উঠতে দিচ্ছে যাত্রীদের। জেট এয়ারওয়েজের তরফে জানানো হয়েছে, তারা টিকিট বাতিলের জন্য কোনও টাকা নিচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE