টানা ১৬ দিন ধরে লুকোচুরি! মেঘালয়ে ঘুরতে গিয়ে কোথায় উধাও হয়ে গেলেন নবদম্পতি, কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না তদন্তকারীরা। অবশেষে সেই রহস্যের জট খুলল। তাতে তদন্তের মোড়ই ঘুরে গিয়েছে। কোনও দুষ্কৃতীর খপ্পরে পড়েননি নবদম্পতি। মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে স্বামীকে খুন করেছেন তাঁর স্ত্রীই! তিনিই নিয়োগ করেছিলেন তিন ভাড়াটে খুনিকে। কী ভাবে চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হল, তা নিয়ে এ বার প্রকাশ্যে মুখ খুললেন পুলিশকর্তা বিবেক সিয়েম।
বিবেক মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার পুলিশ সুপার। তিনিই মেঘালয়কাণ্ডের তদন্ত করছিলেন। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, পূর্বপরিকল্পিত ভাবেই খুন করা হয়েছে রাজা রঘুবংশীকে। আপাতত যা তথ্যপ্রমাণ মিলেছে, তাতে রাজার স্ত্রী সোনম রঘুবংশী এবং তাঁর প্রেমিক রাজ কুশওয়াহার দিকেই আঙুল উঠছে।
মধ্যপ্রদেশের ইনদওরের বাসিন্দা রাজা এবং সোনম। গত ১৯ মে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। ২০ তারিখেই মধুচন্দ্রিমায় বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। এর পর ২৩ মে থেকে নবদম্পতির আর খোঁজ মিলছিল না। অনেক পরে রাজার দেহ উদ্ধার হলেও সোনম নিখোঁজই ছিলেন। গত রবিবার তিনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
বিবেক বলেন, ‘‘নিখোঁজের তদন্তে নেমে আমরা ভেবেছিলাম, ওদের (রাজা-সোনম) হয়তো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। পুলিশ এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ওদের খোঁজও চালাচ্ছিল। কিন্তু পরে যখন দেহ উদ্ধার হল, আমরা পরিষ্কার বুঝে গেলাম, এটা খুন। কোনও দুর্ঘটনা নয়।’’ পুলিশকর্তা জানান, রাজার দেহ উদ্ধারের পরেই বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়। তারা তদন্তে নেমে একাধিক তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে। তদন্তভার হাতে পাওয়ার সাত দিনের মধ্যেই দু’টি দল পাঠানো হয় উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশে। স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিয়েই অভিযুক্তদের পাকড়াও করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিবেক।
গত ২ জুন রাজার দেহ পাওয়া গিয়েছিল ওয়েইসডং জলপ্রপাতের কাছ থেকে। উদ্ধার হয়েছিল রক্তমাখা একটি কালো বর্ষাতি এবং দা। কিন্তু তাঁর পরনে যে সোনার আংটি এবং সোনার চেন ছিল, সেগুলি পাওয়া যায়নি। রাজার দেহ উদ্ধারের পরেও সোনমের খোঁজ না-পাওয়ায় অনেকেই মনে করেছিলেন, মেঘালয়ে গিয়ে দুষ্কৃতীদের কবলে পড়েন নবদম্পতি। সোনমকে হয়তো অপহরণ করা হয়েছে। পাচার করে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে!
মেঘালয় পুলিশের তদন্ত প্রথম বড় মোড় ঘোরে গত ৭ জুন। স্থানীয় এক ট্যুর গাইড জানিয়েছিলেন, তিনি ২৩ তারিখ সকালে রাজা-সোনমকে দেখেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আরও তিন জন ছিলেন। তাঁরা হিন্দিতে কথা বলছিলেন। অর্থাৎ, স্থানীয় কেউ নন। এর পর খুনের তদন্ত কিছুটা গতি পায়। ওই তিন জনের খোঁজেই ইনদওরে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। রবিবার রাতে সেখান থেকেই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। আর এক জন গ্রেফতার হন উত্তরপ্রদেশে।
এর পর রবিবার রাত ১টা নাগাদ উত্তরপ্রদেশের গাজি়পুরের একটি ধাবায় দেখা যায় সোনমকে। ধাবার মালিক সাহিল যাদব এই সাক্ষাতের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন তদন্তকারীদের। তিনিই পুলিশকে ফোন করে সোনমের খবর দেন বলে দাবি। সাহিল জানিয়েছেন, রাত ১টা নাগাদ কাঁদতে কাঁদতে তাঁর ধাবায় আসেন সোনম। বাড়িতে ফোন করতে চান। সাহিল নিজের ফোন সোনমকে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেন তরুণী। সাহিলের ফোনে সেই নম্বর এখনও রয়ে গিয়েছে। রাতে সাহিল পুলিশকে ফোন করে জানান সোনমের কথা। এর পরেই আত্মসমর্পণ করেন সোনম।