ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি (কেআইআইটি)-তে এক নেপালি ছাত্রীর রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় বিতর্কের ঝড় উঠেছে নানা মহলে। বিক্ষোভরত নেপালি ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে ‘জাতিবিদ্বেষী’ এবং ‘অপমানজনক’ মন্তব্য করার অভিযোগও উঠেছে। সেই আবহেই এ বার দেশে ফিরে গেলেন শতাধিক নেপালি ছাত্রছাত্রী! সরকারি সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত রক্সৌল সীমান্ত দিয়ে নেপালে ফিরেছেন অন্তত ১৫৯ জন পড়ুয়া।
পারসার সহকারী প্রধান জেলা আধিকারিক সুমনকুমার কার্কি জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত অন্তত ১৫৯ জন পড়ুয়া নেপালে ফিরে গিয়েছেন। এঁরা সকলেই ওড়িশার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। বিভিন্ন সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, দেশে ফেরার পরেও আতঙ্কের রেশ কাটেনি পড়ুয়াদের। কাঠমান্ডুতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তাঁরা জানিয়েছেন, ওই ছাত্রীর মৃত্যুর পর থেকেই তাঁদের সঙ্গেও ‘অমানবিক’ আচরণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অনেকের আবার অভিযোগ, শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কর্মীদের সামনেই তাঁদের মারধর করেন নিরাপত্তারক্ষীরা। কর্তৃপক্ষের তরফে অবিলম্বে তাঁদেরকে হস্টেল খালি করে চলে যেতে বলা হয়। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আশ্বাস’ সত্ত্বেও সেখানে ফিরতে নিরাপদ বোধ করছেন না পড়ুয়ারা।
আরও পড়ুন:
নেপাল থেকে বহু পড়ুয়া উচ্চ শিক্ষার জন্য এ দেশে আসেন। ওড়িশার ওই বিশ্ববিদ্যালয়েও এমন অন্তত হাজারখানেক পড়ুয়া রয়েছেন। তাই এই ঘটনায় তৎপর হয়েছে দুই দেশের প্রশাসন। সে দেশের বিদেশমন্ত্রী আরজু রানা দেউবা ওড়িশার উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী সূর্যবংশী সুরজের সঙ্গে এ নিয়ে কথাও বলেছেন। ওড়িশা সরকারের তরফেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, নেপালি পড়ুয়ারা যাতে নিরাপদ বোধ করেন, সে জন্য সব রকম সাহায্য করা হবে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ওড়িশার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছিল তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া এক ছাত্রীর দেহ। খবর প্রকাশ্যে আসতেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিলেন নেপালি পড়ুয়ারা। অভিযোগ, এর পরেই শুরু হয় বিক্ষোভকারী নেপালি ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে নানা রকমের ‘জাতিবিদ্বেষী’ এবং ‘অপমানজনক’ মন্তব্য। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওই ছাত্রীর ‘প্রেমিক’ তথা বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক ছাত্রকে আটক করে পুলিশ। পড়ুয়াদের জোর করে হস্টেল থেকে বার করে দেওয়ার ঘটনায় কর্তৃপক্ষ এবং নিরাপত্তারক্ষী-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যদিও পরের দিনই তাঁরা জামিন পেয়ে যান। ওড়িশার ওই ঘটনার পর পদক্ষেপ করেছে নেপাল সরকারও। ওড়িশায় আক্রান্ত নেপালি পড়ুয়াদের সাহায্যের জন্য নয়াদিল্লির নেপাল দূতাবাস থেকে দুই আধিকারিককে ওড়িশা গিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখার নির্দেশ দেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি শর্মা। যাঁরা হস্টেলে থাকতে চান কিংবা যাঁরা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে চান, তাঁদের সকলকেই সব রকমের সাহায্য করা হচ্ছে। এ জন্য একটি পৃথক সহায়তা ডেস্ক খোলা হয়েছে বলেও জানিয়েছে সে দেশের শিক্ষা মন্ত্রক।