Advertisement
E-Paper

জল ছাড়াই ঝকঝকে থাকবে শৌচাগার, সৌজন্যে এক বাঙালি

এই শৌচাগারে জল খরচ হবে না একটুও। আবার দুর্গন্ধের লেশমাত্রও থাকবে না। অনেকটা সোনার পাথরবাটির মতো শোনাচ্ছে কি? মনে হওয়াটা আশ্চর্যের নয়। তবু এমন ‘অসম্ভব’কেই সম্ভব করলেন এক বাঙালি। তাঁর হাত ধরেই এ বার তৈরি হল পরিবেশবান্ধব এই নতুন শৌচাগার।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৭ ১৫:৪৫

এই শৌচাগারে জল খরচ হবে না একটুও। আবার দুর্গন্ধের লেশমাত্রও থাকবে না। অনেকটা সোনার পাথরবাটির মতো শোনাচ্ছে কি? মনে হওয়াটা আশ্চর্যের নয়। তবু এমন ‘অসম্ভব’কেই সম্ভব করলেন এক বাঙালি। তাঁর হাত ধরেই এ বার তৈরি হল পরিবেশবান্ধব এই নতুন শৌচাগার।

দিল্লি আইআইটির প্রাক্তন ছাত্র উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে একটি স্টার্টআপ সংস্থার অধিকর্তা এবং সিইও তিনি। গত চার বছর ধরে কাজ করছেন স্যানিটেশন নিয়ে। হঠাৎই আইডিয়াটা মাথায় আসে। তৈরি হয় ‘জিরোওডোর’। শৌচাগারে বিপুল পরিমাণ জলের অপব্যবহার ঠেকাতেই এমন অভিনব আবিষ্কার করে ফেলেন উত্তম। ঘটনাটা ঠিক কী?

উত্তম জানাচ্ছেন, ‘‘শৌচাগারে একেকবারের ফ্লাশে ৬-১০ লিটার জল খরচ হয়। সুতরাং খুব সহজেই আন্দাজ করা যায় প্রতি দিন একটি শৌচাগারে কতটা জল খরচ হতে পারে। নতুন ধরনের এই শৌচাগার বছরে ৫০ হাজার থেকে দেড় লক্ষ লিটার জলের অপব্যবহার রোধ করতে পারবে।’’

ঝাড়খণ্ড-পশ্চিমবঙ্গ সীমানায় একটি ছোট গ্রামে উত্তমের জন্ম। ছোট থেকেই চোখের সামনে মানুষকে ভয়ঙ্কর জলকষ্টে ভুগতে দেখেছেন। তখন থেকেই চিন্তাটা দানা বাঁধতে থাকে মাথায়।

আরও পড়ুন: হেল্থ ড্রিঙ্ক বানাতে তিন কোটি টাকা সাহায্য দশম শ্রেণির তিন ছাত্রকে!

জল ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে এই টয়লেট

পড়াশোনায় বরাবরই ভাল ছিলেন উত্তম। বি টেক পাশ করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন নিয়ে দিল্লির আইআইটিতে ভর্তি হন। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি নানান রকম প্রজেক্টে কাজ করতে থাকেন উত্তম। কিন্তু স্যানিটেশন প্রজেক্টে কাজ করতেই বেশি ভালবাসতেন তিনি। আইআইটি’র পাট চুকিয়ে যোগ দিলেন একাম ইকো সলিউশনে। এই সময়ই পাশে পেলেন আইআইটি-র রুরাল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি-র প্রফেসর এবং একাম ইকো সলিউশনের চেয়ারম্যান বিজয়রাঘবন এম চ্যারিয়রকে। দু’জনে মিলে কাজ শুরু করলেন নতুন উদ্যোমে।

শেষ পর্যন্ত দিনের আলো দেখল ‘জিরোওডোর’। তবে শুধুমাত্র জলবিহীন শৌচাগার তৈরিই নয়, এই শৌচাগার উপকারে লাগবে চাষের কাজেও। কী ভাবে?

উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিজয়রাঘবন এম চ্যারিয়র

উত্তম জানালেন, ফ্লাশ করলে জল ও ইউরিন এক সঙ্গে মিশে যায়। তা চাষের কাজে লাগে না। ইউরিনের সঙ্গে জল মিশলেই তৈরি হয় অ্যামোনিয়া। আর এর থেকেই কটূ গন্ধ তৈরি হয়। এমনকী ইউরিনের মধ্যে জল ফ্লাশ করাটা খুব একটা স্বাস্থ্যকরও নয়। নতুন পদ্ধতিতে জল না মেশা ইউরিন পাওয়া যাবে, যা চাষের কাজে ব্যবহার করা যাবে।

কীভাবে জল না দেওয়া সত্ত্বেও দুর্গন্ধমুক্ত থাকে এই টয়লেট? ‘জিরোওডোর’-এর সৃষ্টিকর্তারা জানালেন এর রহস্য। এই বিশেষ টয়লেটে ব্যবহার করা হয়েছে একটি টেকনোলজি। এক্ষেত্রে প্যানের মধ্যে ব্যবহার করা হয় একটি মেকানিক্যাল ভাল্‌ভ। যা নালীর মধ্যে দিয়ে ইউরিন ‘পাস’ করে দেয়, কিন্তু অ্যামোনিয়ার কটূ গন্ধকে ভিতরে আসতে দেয় না। উপরন্তু ইউরিন সরাসরি গিয়ে মেশে জমিতে। যা সার হিসাবে কাজে লাগে। কোনও রকম রাসায়নিক পদার্থ এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ ছাড়াই এটা সম্ভব। ফলে এর রক্ষণাবেক্ষণের খরচও খুব কম। সারা দিনে এক বার শুধু জল দিয়ে ধুয়ে নিলেই কেল্লাফতে।

এরই মধ্যে হায়দরাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব রুরাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পঞ্চায়েতি রাজ এবং চণ্ডীগঢ়ের রোজ গার্ডেনে পরীক্ষামূলক ভাবে জিরোওডোরের কাজ শুরু করা হয়েছে। সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে বিজয়রাঘবন জানালেন, জিরোওডোর তৈরির খরচও খুব কম। সাধারণ মানুষও নিজের ঘরে বা অফিসে এই টয়লেট তৈরি করতে পারবেন।

Waterless and Odourless Urinals Agriculture Zerodor Uttam Banerjee IIT Delhi Prof Vijayaraghavan M. Chariar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy