বিতর্কের শুরুতেই কৃষক আন্দোলন নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির এমপি মার্টিন ডে। ছবি: পিটিআই।
ভারতে ‘কৃষকদের সুরক্ষা’ এবং ‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা’ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিতর্কের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানাল নয়াদিল্লি। ওই বিতর্কের নিন্দা করে তাকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ এবং ‘ভুয়ো’ আখ্যা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ভারত সরকারের এই প্রতিক্রিয়া নিয়ে পাল্টা ব্রিটেন জানিয়েছে, দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতে এ বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।
সোমবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দিল্লির কৃষক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা নিয়ে একটি বিতর্ক হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই বিতর্কে ৩ কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দিল্লি সীমানায় আন্দোলনরত কৃষকদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্রিটেনে লেবার পার্টি, লিবারাল ডেমোক্র্যাট এবং স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির একাধিক সদস্য। কৃষক আন্দোলনকে দমাতে ভারত সরকার যে ধরনের পদক্ষেপ করেছে, তা নিয়েও ‘উদ্বিগ্ন’ বলে জানিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি, সংবাদমাধ্যমের উপরেও ভারত সরকারের ‘কড়াকড়ি’ নিয়ে আলোচনা হয়।
তবে বিদেশি আইনসভায় এ ধরনের বিতর্কে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ভারত। লন্ডনে ভারতীয় দূতাবাসের তরফে একটি বিবৃতিতে ভারতের দাবি, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে দু’পক্ষের মতামতের পরোয়া না করেই ভুয়ো দাবির ভিত্তিতে কেবলমাত্র একপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলিকে কালিমা লেপন করা হয়েছে’।
লিবারাল ডেমোক্র্যাট দলের ভারতীয় বংশোদ্ভূত এমপি গার্চ সিংহের আবেদনের ভিত্তিতে পার্লামেন্টে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। অনলাইনে ওই আবেদনের সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পার্লামেন্টে বিতর্কের পক্ষে লক্ষাধিক ব্রিটিশ সায় দিয়েছিলেন।
বিতর্কের শুরুতেই কৃষক আন্দোলন নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির এমপি মার্টিন ডে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ব্রিটেন আগেই সাফ জানিয়েছে যে কৃষি সংস্কার নিয়ে পদক্ষেপের বিষয়টি ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত। সুতরাং আমরা ভারতের কৃষি সংস্কার নিয়ে আলোচনা করছি না। আমরা ওই আইনগুলির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা করছি। (প্রতিবাদীদের দমাতে) জলকামান এবং কাঁদানে গ্যাসের ব্যবহার, পুলিশের সঙ্গে কৃষকদের বার বার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া বা বিক্ষোভস্থলে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করা— এ সবই উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বহু কৃষকও আত্মঘাতী হয়েছেন বলে (সংবাদমাধ্যমের) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।’’ ভারত সরকারের সঙ্গে ব্রিটেনের সুসম্পর্ক থাকলেও এ বিষয় নিয়ে আলোচনা যে তা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সে দেশের এশিয়া বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নাইজেল অ্যাডামস।
বিতর্কে অংহগ্রহণ করে লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবাইনের মন্তব্য, ‘‘যে অভূতপূর্ব প্রতিবাদ হচ্ছে, তাতে একটাই কথা মাথায় আসে, (কৃষি আইনগুলির বিরোধিতায়) কেন এত লোক জমায়েত হয়েছেন?’’
কৃষক আন্দোলনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিক মনদীপ পুনিয়া এবং ধর্মেন্দ্র সিংহকে গত জানুয়ারিতে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশকে হেনস্থার করার অভিযোগ উঠেছিল। সাংবাদিকদের গ্রেফতারির প্রসঙ্গও উঠে আসে ওই বিতর্কে। করবাইন মতে, ‘‘সাংবাদিকদের গ্রেফতারিও উদ্বেগের বিষয়।’’
যদিও এ দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার প্রশ্নই ওঠে না বলেও দাবি ভারতের। বিতর্কের পর ভারতের পক্ষে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিদেশি সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে ব্রিটিশ মিডিয়ার উপস্থিতি রয়েছে এ দেশে। সমস্ত ঘটনাই নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করছে তারা। ফলে সংবাদমাধ্যমে স্বাধীনতার খর্ব করার প্রশ্নই ওঠে না’।
ভারতীয় দূতাবাসের মতে, ‘ভারতীয় দূতাবাস সাধারণত (অন্য দেশের) পার্লামেন্টের ভিতরে তার সদস্যদের আলোচনা নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে। তবে ভারতের উপর যখন কেউ কালিমা লেপন করে, তা সে যতই বন্ধুত্বের দাবি করুক না কেন, তখন কিছু সাফ কথা বলতেই হয়’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy