Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
India Lockdown

আশ্রয়, খাবার নেই দিল্লি-হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের

প্রথমে হিংসা। তার রেশ কাটতে না কাটতেই করোনার জেরে লকডাউন। উত্তর-পূর্ব দিল্লির শিব বিহার, ব্রিজপুরী, মুস্তফাবাদ, গোকুলপুরীর অবস্থা যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠেছে।

ত্রাণ বিলি দিল্লিতে। নিজস্ব চিত্র

ত্রাণ বিলি দিল্লিতে। নিজস্ব চিত্র

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৪৬
Share: Save:

বেটা, আপ লোগ ক্যায়সে হো? মুস্তফাবাদ থেকে মাঝে মধ্যেই খোঁজখবর নিতে ফোন করতেন মহিলা। দিল্লিতে হিংসার পর প্রেসিডেন্সি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন-বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা চাঁদা তুলে ত্রাণ বিলি করতে গিয়েছিলেন। সেখানে মহিলার সঙ্গে তাঁদের আলাপ। ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই চার মেয়েকে নিয়ে মুস্তফাবাদের ইদগায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি।

প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী দিল্লির দেবজিৎ ঠাকুর বলেন, “লকডাউনের পরে এক দিন ফোন করলেন। খোঁজ নিতেই কেঁদে বললেন, ‘‘বলতে পারছিলাম না তোমাদের। মেয়েদের নিয়ে পেট চালাতে পারছি না।”

প্রথমে হিংসা। তার রেশ কাটতে না কাটতেই করোনার জেরে লকডাউন। উত্তর-পূর্ব দিল্লির শিব বিহার, ব্রিজপুরী, মুস্তফাবাদ, গোকুলপুরীর অবস্থা যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠেছে। প্রথমে হিংসার জেরে ঘর-বাড়ি পুড়েছিল। কেউ সরকারি শিবির, কেউ ইদগা, কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। রুটিরুজির টানে ঘরে ফিরতে হয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে ইদগা বা সরকারি শিবির বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই পুড়ে যাওয়া ঘরেই আশ্রয় নিতে হয়েছে। কিন্তু খাবেন কী?

আরও পড়ুন: প্লাজ়মা চিকিৎসায় সাড়া, দাবি কেজরীর

শিবপুরীর গদাপুরী চকের এক নম্বর গলির আরজ মহম্মদের বাড়িতে ২৪ ফেব্রুয়ারি আগুন লাগানো হয়। ওই গলিতেই আরও ছয়টি বাড়িতে আগুন লাগায় দুষ্কৃতীরা। পাশের দু’নম্বর গলির চারটি বাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। হামলা হবে খবর পেয়ে আগেই দিল্লির সীমান্ত পেরিয়ে লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের লোনিতে আত্মীয়ের বাড়িতে মা, ভাই, স্ত্রী, চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পাঁচ দিন পরে ফিরে দেখেন, একটা ছোট ঘর ও বারান্দা ছাড়া সব পুড়ে ছাই। আরজ বলেন, “লোকজনের হাতে-পায়ে ধরে পোড়া আসবাব সরিয়ে মেঝেতে বিছানা পেতে রয়েছি। কিন্তু কাজকর্ম বন্ধ।” আরজদের ফোন পেয়ে মাঠে নেমেছেন প্রেসিডেন্সি, যাদবপুরের প্রাক্তনীরা। ‘কোয়রান্টাইনড স্টুডেন্ট-ইয়ুথ নেটওয়ার্ক’ তৈরি করে দেশ-বিদেশে বন্ধুদের থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে। মুম্বই, হায়দরাবাদ, বাংলার নানা জেলাতেও রেশন পৌঁছে দিচ্ছেন। ‘বঙ্গালি লড়কা’-রা মিনি ট্রাকে করে রেশন আনছেন খবর পেয়ে মুস্তফাবাদ, শিবপুরীতে অপেক্ষা করছেন আরজরা। দিল্লির গ্রিন পার্কে চিকিৎসক মহম্মদ ওয়াহিদ খানের বাড়িতে সব মজুত করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: বালিকাকে খাটানো হচ্ছিল লঙ্কাখেতে

রেশন বিলি করতে দেবজিৎদের শুধু একটাই ‘সাবধানবাণী’-র মুখে পড়তে হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব দিল্লির পাড়ায় পাড়ায় মোড়ল গোছের কিছু লোক তাঁদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘দেখবেন, একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের লোকই যেন শুধু রেশন না পায়।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India Lockdown Delhi Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE