E-Paper

‘জয়’ দেখাতে চায় উভয়েই, বাণিজ্যচুক্তি ঝুলে

প্রশ্ন উঠছে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ২৫% জরিমানার সঙ্গে ও প্রতিটি পণ্যে ২৫% চড়া শুল্ককে কমিয়ে ১৫ শতাংশ যে আমেরিকা রাজি হচ্ছে, বিনিময়ে ভারতের দেওয়ার কী রয়েছে?

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৬:৪৪
(বাঁ দিকে) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

গত মে মাসেই আমেরিকা এবং ভারতের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনায় নয়াদিল্লির পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্কে রাজি হয়ে গিয়েছিল ওয়াশিংটন। কিন্তু সে সময় আরও চাপ দিতে চেয়ে ভারত দাবি করে, তা ১০ শতাংশে নামানোর (ট্রাম্পের শুল্ক জমানার আগে ভারতের অধিকাংশ পণ্যে যা ছিল)। কিন্তু তাতে সময় ক্ষয়ই শুধু হয়নি , আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধের জেদও বেড়েছে। কার্যত থমকে গিয়েছিল আলোচনার অগ্রগতি। আজ তার পাঁচ মাস পর সেই পুরনো জায়গাতেই ফিরে গিয়েছে নয়াদিল্লি। আবারও নতুন করেই ভারতীয় পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্কের দাবি নিয়েই দর কষাকষি চলছে। তবে আলোচনা ইতিবাচক দিকেই এগিয়েছে বলে আজ সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।

প্রশ্ন উঠছে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ২৫% জরিমানার সঙ্গে ও প্রতিটি পণ্যে ২৫% চড়া শুল্ককে কমিয়ে ১৫ শতাংশ যে আমেরিকা রাজি হচ্ছে, বিনিময়ে ভারতের দেওয়ার কী রয়েছে? কৃষিপণ্য রফতানি প্রধান দেশ আমেরিকা চাইছে তাদের ডেয়ারি এবং কৃষিপণ্য কম শুল্কে ভারতের বাজারে ঢোকাতে। সূত্রের বক্তব্য, ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ডেয়ারি পণ্যে আপস তারা করতে পারবে না। কিন্তু কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে আমেরিকার ভুট্টা যদি কম দামে ওয়াশিংটন রফতানি করতে চায়, তাতে নয়াদিল্লির লাভ বই ক্ষতি নেই।

কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, ধানের বদলে ভুট্টা থেকে ইথানল তৈরি করা সব দিক থেকেই লাভজনক। ভারতে যথেষ্ট পরিমাণ ভুট্টার ফলন নেই, তার উৎপাদনও বেশি বাড়ানো সম্ভব নয় কারণ প্রভূত জলের প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি এটাও হিসাবের মধ্যে রাখা হয়েছে যে আমেরিকার উচ্চ প্রযুক্তিতে উৎপাদিত পণ্য (হাই এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং প্রডাক্ট) বিরাট কিছু নেই যা ভারতের উৎপাদন শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যদি তারা বিমান পাঠায় সে ক্ষেত্রেও ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলির লাভই হবে। কারণ, দেশে বিমানের ঘাটতি রয়েছে।

যে বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প বারবার চাপ দিচ্ছেন, তা হল রাশিয়াতে উৎপাদিত তেল কেনায় নিষেধাজ্ঞা। তিনি ফের দাবি করেছেন, রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে রাজি হয়েছে ভারত! তাঁর সাফ বক্তব্য, চলতি বছরের শেষে রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনবে নয়াদিল্লি। বরাবরের মতোই তাঁর এই দাবির জবাব দেয়নি মোদী সরকার। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, ভারত আমেরিকা থেকে আরও বেশি তেল এবং যুদ্ধ সরঞ্জাম কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু তেল কোনও দেশ থেকে কেনার চুক্তি করা হলে কোনও নির্দিষ্ট দাম তখনই বেঁধে দেওয়া হয় না। তা ওঠানামা করে বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। দ্বিতীয়ত, তেল কত দূর থেকে আসছে, তার উপরে খরচ নির্ভর করে। সে ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির বিকল্প পরিকল্পনা রয়েছে— আমেরিকা থেকে তেল কিনে পথিমধ্যে কোনও সমুদ্র উপকূল রাষ্ট্রে বেশি দামে বিক্রি করে লাভ করা।

তবুও এই চুক্তি এখনও ঝুলে রয়েছে কেন? সূত্রের মতে, ট্রাম্প এবং মোদী উভয়েই চুক্তি শেষে নিজ নিজ দেশে, নিজেকে বিজয়ী বলে দেখাতে চাইবেন। চুক্তি ঝুলে রয়েছে— এই বার্তা মোদীর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য তেমন ক্ষতিকর কিছু নয়। অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়তে পারে, তাকে সামলানোরও উপায় রয়েছে। কিন্তু চুক্তির পর ট্রাম্প যদি হোয়াটই হাউসে দাঁড়িয়ে বলেন যে তাঁর শর্তে ভারতকে ঝুঁকতে বাধ্য করা হয়েছে, তা শাসক দলের পক্ষে সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষত যখন বিহার নির্বাচন দোরগোড়ায়।

এ ছাড়া, উত্তর বিহারে ভুট্টার ফলন বেশি। ফলে দেশের ইথানলের স্বার্থে আমেরিকার ভুট্টা আমদানির দরজা ভারত খুললে বিহারের জনতা তা ভালভাবে নেবেন না। তাই সব মিলিয়ে বিহার ভোটের আগে অথবা স্পষ্ট ভাবে ভারতের লাভের বার্তা যতক্ষণ না দেখতে পাচ্ছে মোদী সরকার, তত দিন পযন্ত ভারত-আমেরিকা চুক্তি সই না-ও হতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

India US Trade Donald Trump Narendra Modi Trade War

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy