পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারতের প্রত্যাঘাতের অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনার উদ্দেশে দেশে দেশে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে নয়াদিল্লি। দেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই দলগুলি গঠন করা হয়েছে। ভারতের তেমনই একটি প্রতিনিধিদল ‘ধাক্কা’ খেল দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়ায় গিয়ে। সেখানকার সরকার ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতের হামলায় নিহত পাকিস্তানিদের জন্য সমবেদনা প্রকাশ করেছে। যাতে ‘হতাশ’ শশী তারুরেরা। প্রকাশ্যেই হতাশার কথা তাঁরা জানিয়েছেন।
কংগ্রেস সাংসদ তারুরের নেতৃত্বে যে প্রতিনিধিদল কলম্বিয়ায় গিয়েছে, তাতে আছেন জেএমএম সাংসদ সরফরাজ় আহমেদ, টিডিপি সাংসদ জিএম হরিশ বালযোগী, বিজেপি সাংসদ শশাঙ্ক মানি ত্রিপাঠী, ভুবনেশ্বর কলিতা, তেজস্বী সূর্য, শিবসেনার মিলিন্দ মুরলী দেওরা, এলজেপি সাংসদ শাম্ভবী এবং কূটনীতিক তরণজিৎ সিংহ সান্ধু। তাঁদের গন্তব্যের তালিকায় ছিল আমেরিকা, পানামা, গুয়ানা, ব্রাজ়িল এবং কলম্বিয়া। সম্প্রতি দলটি কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতায় আছে। সেখান থেকেই সাংবাদিকদের সামনে তারুর বলেন, ‘‘কলম্বিয়া সরকারের প্রতিক্রিয়ায় আমরা একটু হতাশ। তারা ভারতের হামলায় নিহত পাকিস্তানের জন্য আন্তরিক সমবেদনা জানালেন। সন্ত্রাসবাদের বলি হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য নয়। আমরা কলম্বিয়ার বন্ধুদের বলতে চাই, সন্ত্রাসবাদ এবং তার প্রতিরোধকারীদের কোনও ভাবেই এক করে দেওয়া যায় না। কেউ আক্রমণ করে, কেউ রক্ষা করে— এদের মধ্যে কোনও সমতা নেই। আমরা আমাদের আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করছি মাত্র। যদি কোথাও কোনও ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকে, তার মীমাংসার জন্য আমরা আছি।’’
আরও পড়ুন:
ভারত সরকার জানিয়েছিল, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে পাকিস্তানে ঘটা করে সন্ত্রাসবাদীদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে উপস্থিত থেকেছেন সেনা ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিরা। ছবি প্রকাশ করে এই দাবির সপক্ষে প্রমাণও দেখিয়েছিল নয়াদিল্লি। কলম্বিয়া সরকারের সামনেও সেই ছবি তুলে ধরেন তারুর। পাশাপাশি তেজস্বী, মিলিন্দরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের নীতি ব্যাখ্যা করেছেন কলম্বিয়ার সরকারের সামনে।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। তাতে ২৬ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছে ভারত। স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি। এর পর গত ৬ মে মধ্যরাতে পাকিস্তানে প্রত্যাঘাতের অভিযান চালায় ভারত। পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় একাধিক জঙ্গিঘাঁটি। পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালায়। টানা চার দিন দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ চলেছে। গত ১০ মে ভারত এবং পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। তার পরেই ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর ব্যাখ্যা নিয়ে দেশে দেশে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে ভারত। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশ-সহ নানা দেশে ভারতের দল গিয়েছে। কোন পরিস্থিতিতে ভারত এই অভিযান চালিয়েছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের অবস্থান কতটা কঠোর, বিভিন্ন দেশে সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়াই প্রতিনিধিদলের কাজ। কিন্তু কলম্বিয়ায় গিয়ে ভারতের প্রতিনিধিরা কিছুটা ‘ক্ষুণ্ণ’ হলেন।