মণিপুরে ফের নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে ঘরছাড়াদের সংঘর্ষ! সোমবার ইম্ফল পূর্ব জেলার পুখাও ও দোলাইথাবি বাঁধের কাছে ত্রাণশিবিরে অবস্থানরত কয়েকশো ঘরছাড়া মানুষের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বেধে গেল নিরাপত্তাবাহিনীর।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, সোমবার সকালে একৌ, দোলাইথাবি এবং ইয়েংখুমান এলাকার ত্রাণশিবিরগুলি থেকে ঘরে ফেরার জন্য রওনা দেন ঘরছাড়ারা। কয়েকশো মানুষ আশ্রয়শিবির ছেড়ে বেরোতেই নিরাপত্তাবাহিনী তাঁদের পথ আটকায়। পাল্টা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরাও। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়। তাতেও কেউ পিছু হটেননি।
ঘরছাড়াদের দাবি, সংঘর্ষ শেষ হতে না হতেই রাজ্যে ঐতিহ্যবাহী সাঙ্গাই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। অথচ এখনও ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ ত্রাণশিবিরে রয়েছেন। সরকার যখন দাবি করছে, রাজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা হলে তাঁদের ঘরে ফেরার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না কেন? এক মেইতেই বিক্ষোভকারী এস কুমারজিৎ পিটিআই-কে বলেন, ‘‘আমরা বেশিরভাগই কৃষক। যখন আমরা বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলাম, তার পর থেকেই আমাদের রোজগার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন সরকার জানিয়েছে, রাজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। আমরাও এ বার ঘরে ফিরতে চাই। আমরা আর কত দিন ত্রাণশিবিরে বন্দি থাকব?’’
আরও পড়ুন:
উল্লেখ্য, ইম্ফল পূর্ব জেলায় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত একৌ, দোলাইথাবি এবং ইয়েংখুমান এলাকাগুলি মূলত কুকি-অধ্যুষিত কাংপোকপি জেলার সীমান্তবর্তী। ২০২৩ সালে মণিপুরে কুকি-মেইতেই গোষ্ঠীহিংসা শুরু হওয়ার পর থেকেই এই এলাকাগুলি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন মণিপুরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ। ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন শুরু হয় উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে। রাজ্য বিজেপির আপত্তি সত্ত্বেও গত অগস্ট মাসে সে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ আরও ছ’মাস বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। ৬০ সদস্যের মণিপুর বিধানসভা বর্তমানে রাষ্ট্রপতি শাসনের অধীনে ‘সাসপেন্ডেড অ্যানিমেশন’-এ রয়েছে।
এর আগেও ঘরে ফিরতে চেয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন মণিপুরের বাস্তুচ্যুতেরা। চলতি মাসের শুরুতেই কুকি এলাকা চূড়াচাঁদপুর, তোরবুংয়ের শয়ে শয়ে মানুষ বাফার এলাকার ব্যারিকেড ভেঙে নিজ নিজ গ্রামের উদ্দেশে মিছিল করেন। নিরাপত্তা বাহিনী তাঁদের থামাতে গেলে বেধে যায় সংঘর্ষ। দিনদুয়েক আগে বিক্ষোভ ও বয়কটের মধ্যেই ২ বছর পর মণিপুরের ইম্ফলে শুরু হয়েছে সাঙ্গাই উৎসব। সংঘর্ষ শেষ হতে না হতেই উৎসবের আয়োজন করার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাস্তুচ্যুতদের যৌথমঞ্চ। উৎসব বয়কট করার দাবি জানানো হয়েছে।