পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কিংবা তৃণমূলনেত্রীর পরিচিতি নয়। মুম্বইয়ে শিল্পপতিদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলাপচারিতা-অনুষ্ঠানের মঞ্চের পিছনের পর্দায় দেখা গেল, তাঁর নামের আগে লেখা রয়েছে, ‘দ্য বেঙ্গল টাইগ্রেস’ (বাংলার বাঘিনী)!
সাধারণত শিল্পপতিদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তাঁরা রাজ্যে শিল্পের জন্য কী কী সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, কী কী সমস্যা রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করেন। কিন্তু তরুণ শিল্পপতিদের সংগঠন ওয়াইপিও-র উদ্যোগে মুম্বইয়ে মমতার সঙ্গে শিল্পমহলের কথাবার্তায় প্রশ্ন এল, তৃণমূলনেত্রীর রাজনৈতিক উত্থানের কাহিনী, ছোটবেলার বাবার মৃত্যুর পরেও তাঁর লড়াই, কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরার মতো হরেক বিষয় নিয়ে। তার আগে, একেবারে শুরুতে মমতাকে প্রশ্নকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিল্পপতি নিরঞ্জন হীরনন্দানি সবাইকে উঠে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে বললেন, “উনি স্ট্যান্ডিং ওভেশন পাওয়ার যোগ্য।” পরে তাঁর দাবি, ‘‘আমার ছেলে দর্শন যখন প্রথম বাংলায় বিনিয়োগের কথা বলেছিল, আমি বারণ করেছিলাম। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা সেই প্রাথমিক আশঙ্কার সঙ্গে মেলেনি।’’
মুম্বইয়ের শিল্পমহল মমতার কাছে আয়কর দফতর, ইডি, সিবিআইয়ের মতো সংস্থাকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানো নিয়ে প্রশ্ন করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই পরিস্থিতি বদলানো নিয়ে তিনি কী ভাবেন? বিশিষ্ট জনদের সঙ্গেও তাঁর বৈঠকে ইউএপিএ-র মতো সন্ত্রাস দমন আইন নাগরিকদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো নিয়ে তাঁর মত জানতে চাওয়া হয়েছিল।
মমতা বিশিষ্ট জনদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছিলেন, সন্ত্রাস দমনে ইউএপিএ-র মতো আইন থাকলেও, তিনি বিরুদ্ধ স্বর দমনে তা প্রয়োগের বিরুদ্ধে। মহেশ ভট্ট, শাহরুখ খানকে নিশানা করার অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, তিনি টাডা আইনেরও বিরুদ্ধে ছিলেন। একই ভাবে শিল্পপতিদের বিরুদ্ধে যে আয়কর দফতরকে কাজে লাগানো হচ্ছে, সে দিকে ইঙ্গিত করে মমতা বলেন, সিবিআই, ইডি-কে আগেও রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানো হয়েছে। তবে এখনকার মতো যথেচ্ছাচার হয়নি।
এসার, গ্যামন, মুকুন্দ, ব্রিটানিয়ার মতো গোষ্ঠীর শিল্পপতিরা মমতার সঙ্গে আলাপচারিতায় হাজির ছিলেন। পাঁচতারা হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েটে আসন না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়েও অনুষ্ঠান শুনেছেন। সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, হর্ষ নেওটিয়া, সি কে ধানুকা, সঞ্জয় বুধিয়া, রুদ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ শিল্পপতিরা হাজির ছিলেন। গোয়েঙ্কা বলেন, তিনি রাজ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা লগ্নি করেছেন। কোনও সমস্যা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গে শ্রমিকদের আন্দোলন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, বাম জমানার মতো সমস্যা আর নেই। লোডশেডিংও নেই।
রাজ্যের হয়ে আজ মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীও পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের সুযোগ তুলে ধরেন। বস্ত্র পার্ক, শিল্প তালুক, ডেউচা-পাঁচামি, গ্যাসের পাইপলাইন, ফ্রেট করিডর, তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের উদাহরণ তুলে ধরে দ্বিবেদী আগামী এপ্রিলে রাজ্যের শিল্প সম্মেলনে (বিজিবিএস) শিল্পপতিদের আমন্ত্রণ জানান।
বাংলার সঙ্গে মহারাষ্ট্রের আত্মিক যোগ বোঝাতে এ দিন ‘লাল-বাল-পালের’ প্রসঙ্গ তোলেন মমতা। উল্লেখ করেছেন মরাঠা বীর শিবাজিকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘শিবাজী উৎসব’ কবিতার কথা। পরে শিবাজি, রবীন্দ্রনাথ এবং সেই কবিতার ছবি এক ফ্রেমে বাঁধিয়ে তা তুলে দিয়েছেন এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের হাতে।