চন্দ্রযান-২-এর অরবিটরকে খুঁজে পেল বিক্রম। — ফাইল চিত্র।
চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে পড়েছিল আগেই। সফল ভাবে চন্দ্রযান-৩ থেকে রোভার প্রজ্ঞানকে নিয়ে নিষ্ক্রমণ ঘটেছে ল্যান্ডার বিক্রমেরও। এই পরিস্থিতিতে চার বছর আগে চন্দ্রযান-২-এর ব্যর্থ অভিযানে ব্যবহৃত অরবিটরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে ফেলল চন্দ্রযান-৩। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর তরফে সোমবার এ কথা জানানো হয়েছে। ইসরোর তরফে টুইটারে এ কথা জানিয়ে লেখা হয়েছে, ‘‘স্বাগত বন্ধু। চন্দ্রযান-২-এর অরবিটর চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার মডিউলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। স্থাপিত হয়েছে দ্বিমুখী যোগাযোগ।’’ বুধবার ৫টা ২০ মিনিট থেকে ল্যান্ডার বিক্রমের অবতরণের লাইভ সম্প্রচার শুরু হবে বলেও জানিয়েছে ইসরো।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-কে চাঁদের পিঠে নামাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল ইসরো-র চন্দ্রযান-২ মহাকাশযান। সেই অভিযানে পাঠানো অরবিটরটি এখনও চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। তাই এ বারের অভিযানে ইসরো আর কোনও অরবিটার পাঠায়নি চাঁদের কক্ষপথে। চাঁদের মাটিতে নামতে কক্ষপথে থাকা চন্দ্রযান-২ এর অরবিটারেরই সাহায্য নেবে এ বার চন্দ্রযান-৩ এর সঙ্গে যাওয়া ল্যান্ডার আর তার ভিতরে থাকা রোভার। চাঁদের মাটিতে নেমে গবেষণা চালাবে দু’সপ্তাহ। এই পরিস্থিতিতে চন্দ্রযান-২-এর অরবিটরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে ইসরো সূত্রের খবর।
আগামী বুধবার ভারতীয় সময় অনুযায়ী ঠিক সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের মাটিতে পা রাখার কথা বিক্রমের। কিন্তু অবতরণ কোথায় হবে? চাঁদের দক্ষিণ মেরুর দুর্গম খানাখন্দে ভরা মাটিতে বিক্রমের প্রয়োজন অপেক্ষাকৃত মসৃণ জমি। আপাতত সেই সন্ধানেই রয়েছে ইসরো। সোমবার ইসরোর তরফে কয়েকটি ছবি শেয়ার করা হয়েছে। চাঁদের বুকে পা রাখার আগে ঘুরে ঘুরে নিরাপদ অবতরণের স্থান খুঁজছে বিক্রম। তার ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবিগুলিই সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে ইসরো।
টুইটে ইসরো লিখেছে, ‘‘এগুলি চাঁদের অনেক দূরের দিকের ছবি। বিক্রমের মধ্যেকার ল্যান্ডার হ্যাজার্ড ডিটেকশন অ্যান্ড অ্যাভয়েড্যান্স ক্যামেরা (এলএইচডিএসি) দিয়ে এই ছবিগুলি তোলা হয়েছে। এই বিশেষ ক্যামেরা চাঁদের মাটিতে অবতরণের জন্য নিরাপদ স্থান খুঁজতে সাহায্য করে।’’
চাঁদের জমিতে পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে অনেক ছোট বড় গর্ত। উঁচু ঢিবিও প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে। ইসরোর প্রাথমিক লক্ষ্য হল, পাথর বা গর্ত এড়িয়ে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা স্থান আগে চিহ্নিত করা। তার পর সেখানে বিক্রমকে নামানো হবে। বুধবার সন্ধ্যায় রোভার প্রজ্ঞানকে পেটের ভিতর নিয়ে পাখির পালকের মতো চাঁদের মাটিতে নামবে (বৈজ্ঞানীক পরিভাষায় যার নাম ‘সফ্ট ল্যান্ডিং’) চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম। চন্দ্র অভিযানের এই পর্যায়টিই সবচেয়ে কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে। চার বছর আগে এই পর্যায়ে এসে ব্যর্থ হয়েছিল চন্দ্রযান-২। তবে এ বার তেমন সম্ভাবনা নেই বলেই দাবি ইসরোর। বড় কোনও বিপত্তি না হলে চাঁদের মাটিতে শীঘ্রই নামতে চলেছে বিক্রম। সে দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ।
২০১৯ সালের ২২ জুলাই উৎক্ষেপণ করা চন্দ্রযান-২-এর ল্যান্ডার বিক্রম দক্ষিণ মেরুর কাছে ‘সিমপেলিয়াস এন’ এবং ‘ম্যানজিনাস সি’ নামে দু’টি গহ্বরের মাঝখানে অবতরণের চেষ্টা করেছিল (এ বারও অবতরণ হবে দক্ষিণ মেরু অঞ্চলেই)। কিন্তু তা সফল হয়নি। পেটের মধ্যে রোভার প্রজ্ঞানকে নিয়ে অবতরণের তিন মিনিট আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল বিক্রম। মাস তিনেক ধরে বিক্রমের ধ্বংসাবশেষের অনবরত খোঁজ চালিয়েছিল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। কিন্তু কোনও ভাবেই তা চিহ্নিত করতে পারেনি তারা। শেষমেশ ‘লুনার রিকনাইস্যান্স অরবিটার’ (এলআরও)-এর তোলা একটি ছবি শেয়ার করে বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্য চায় নাসা। সেই ছবি দেখে চেন্নাইয়ের এক জন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বিক্রমের ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy