Advertisement
E-Paper

ঘেঁষাঘেঁষি করে বসা, বালাই নেই গোপনীয়তার! মোদী-জমানার সচিবালয় বাইরে ঝকঝকে, কিন্তু ‘অন্দরে’ অসন্তুষ্ট আমলারা

প্রশাসনিক সংস্কারের লক্ষ্যে তৈরি হওয়া নয়াদিল্লির প্রথম অভিন্ন কেন্দ্রীয় সচিবালয় (সিসিএস) ভবনটির উদ্বোধন গত মাসেই করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভবনটির পোশাকি নাম— ‘কর্তব্যভবন ৩’।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:২৭
কর্তব্যভবন ‘অন্দরমহল’।

কর্তব্যভবন ‘অন্দরমহল’। ছবি: গেটি ইমেজেস।

খোলা জায়গায় গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে বসতে হয় পদস্থ আমলাদের। কেউ কেউ আবার যুগ্মসচিব পর্যায়ের আধিকারিকও। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত গোপন ফাইল নিয়েই তাঁদের কারবার। কিন্তু গোপনীয়তার প্রশ্নে তাঁরাও পড়েছেন ফ্যাসাদে! বাইরে থেকে ঝাঁ-চকচকে হলেও, নয়াদিল্লিতে সদ্যনির্মিত নয়া সচিবালয়ের ‘অন্দরমহল’ নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ আমলাদের একাংশ।

প্রশাসনিক সংস্কারের লক্ষ্যে তৈরি হওয়া নয়াদিল্লির প্রথম অভিন্ন কেন্দ্রীয় সচিবালয় (সিসিএস) ভবনটির উদ্বোধন গত মাসেই করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভবনটির পোশাকি নাম— ‘কর্তব্যভবন ৩’। রাজধানীতে এ রকম আরও ন’টি ভবন গড়ে তোলার কথা রয়েছে।

গত অগস্টে কর্তব্য ভবন ৩-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও, তার দিন কয়েক আগে থেকেই সেখানে কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক-সহ একাধিক মন্ত্রকের কর্মী ও আধিকারিকেরা। এখন এই ভবনটিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, বিদেশ মন্ত্রক, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক, কর্মিবর্গ দফতর, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর বৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতার দফতর রয়েছে।

 গত মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কর্তব্যভবনটির উদ্বোধন করেন।

গত মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কর্তব্যভবনটির উদ্বোধন করেন। ছবি: গেটি ইমেজেস।

সরকারের মতে, সব ক’টি ভবন পুরোদমে চালু হলে সরকারের বাড়িভাড়া বাবদ প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা বাঁচবে। কিন্তু এই নয়া সচিবালয় নিয়ে একগুচ্ছ অভিযোগ রয়েছে আমলাদের। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর দফতর এবং নগরোন্নায়ন মন্ত্রককে চিঠিও দিয়েছেন তাঁরা।

সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস ফোরাম (সিএসএস)-এর তরফে প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে লেখা একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, নতুন ভবনে পদস্থ আমলাদের জন্য আলাদা ঘর বরাদ্দ করা হয়নি। খোলা জায়গায় কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। এটা ভবিষ্যতে গোপনীয়তার প্রশ্নে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। প্রায় ১৩ হাজার কেন্দ্রীয় কর্মচারীর ওই সংগঠন লিখেছে, যুগ্মসচিব পর্যায়ের অফিসারদের কাছে থাকে বিভিন্ন গোপন ফাইল। বিশেষত বিভিন্ন স্পর্শকাতর মামলা সংক্রান্ত ও রাষ্ট্রের সুরক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নিয়েই তাঁদের কাজ। সেগুলি রাখার জন্য ব্যক্তিগত স্থানের প্রয়োজন হয়। কিন্তু নতুন সচিবালয়ের দফতরে সেই অফিসারদেরও খোলা জায়গায় বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে নথিপত্রের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হচ্ছে।

শুধু তা-ই নয়, আমলাদের একাংশের অভিযোগ, এতটাই গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে বসতে হয় যে, ফোন এলে সেখানে বসে কথা বলা যায় না। উঠে বাইরে চলে যেতে হয়, কারণ পাশের লোকের অসুবিধা হবে। অনেক সময় শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে হয় ওই অফিসারদের। তাতেও গোপনীয়তা ভঙ্গের সম্ভাবনা রয়েছে।

ভবনটির পোশাকি নাম— ‘কর্তব্যভবন ৩’। রাজধানীতে এ রকম আরও ন’টি ভবন গড়ে তোলার কথা রয়েছে।

ভবনটির পোশাকি নাম— ‘কর্তব্যভবন ৩’। রাজধানীতে এ রকম আরও ন’টি ভবন গড়ে তোলার কথা রয়েছে। ছবি: গেটি ইমেজেস।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নতুন ভবনটি বাইরে থেকে দারুণ দেখতে। চোখ ধাঁধিয়ে যাবে পথচলতি মানুষের। আমরা যাঁরা ভিতরে কাজ করি, একদম সন্তুষ্ট নই। ফোন এলে বাইরে চলে যেতে হয়। ভাবতে পারেন!’’ আর এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমরা যে কাজ করি, সেই কাজে গোপনীয়তা একটা বড় বিষয়। যাঁরা এই বসার ব্যবস্থা করেছেন, তাঁদের এটা মাথায় রাখা উচিত ছিল।’’ এই পরিস্থিতিতে নয়া ভবনে বসার ব্যবস্থা পাল্টে ফেলা এবং বিশেষত পদস্থ অফিসারেরা যাতে নিজেদের কেবিন পান, তা নিশ্চিত করতে কর্মীদের সংগঠনের তরফে অনুরোধ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব শ্রীনিবাস আর কটিকিতলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। ইমেলে আমলাদের একাংশের অভিযোগ নিয়ে তাঁর মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। এ-ও জানতে চাওয়া হয়েছে, আমলাদের কথা মেনে নিয়ে নয়া সচিবালয়ে আমলাদের বসার ব্যবস্থা পাল্টে ফেলা হবে কি না। এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত সেই ইমেলের জবাব আসেনি। ভবিষ্যতে এলে তা এই প্রতিবেদনে যোগ করা হবে।

Central Government PM Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy