Advertisement
E-Paper

হেমাকে মেরে ফেলার ছক ছিল না, সন্দেহ পুলিশের

কার্ডবোর্ড মোড়া বাক্স থেকে গত শনিবার কান্দিভলিতে পুলিশ যখন হেমা উপাধ্যায় এবং তাঁর আইনজীবী হরিশ ভামভানির দেহ উদ্ধার করছে, তখন সেই এলাকাতেই ঘোরাঘুরি করছে মূল অভিযুক্ত বিদ্যাধর রাজভর।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:২১

কার্ডবোর্ড মোড়া বাক্স থেকে গত শনিবার কান্দিভলিতে পুলিশ যখন হেমা উপাধ্যায় এবং তাঁর আইনজীবী হরিশ ভামভানির দেহ উদ্ধার করছে, তখন সেই এলাকাতেই ঘোরাঘুরি করছে মূল অভিযুক্ত বিদ্যাধর রাজভর।

মুম্বইয়ে জোড়া খুনের মামলার তদন্তে নেমে এমন তথ্যই জানতে পেরেছে পুলিশ। তাদের বক্তব্য, পুলিশ দেহ দু’টি উদ্ধার করেছে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পরেই বিদ্যাধর তার সঙ্গী শিবকুমার ওরফে সাধু রাজভরকে নিয়ে দাদর স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দেয়। ধৃত বাকি তিন অভিযুক্ত বিজয়কুমার, প্রদীপ এবং আজাদ রাজভরের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্যের উপরে ভিত্তি করে খুনের দিন অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর, শুক্রবার হেমা-হরিশকে মারার আগে ও পরের ঘটনাক্রম মোটামুটি সাজাতে সমর্থ হয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি অনুযায়ী, শনিবার রাত ন’টা নাগাদ দাদর স্টেশনে গিয়ে বারাণসীর ট্রেন ধরেন বিদ্যাধর-শিবকুমার।

তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, ‘‘শনিবার সন্ধে নাগাদ নর্দমার পাশ থেকে দেহ দু’টি তুলে আনা হয়। জোড়া লাশ উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে প়ড়েছিল এলাকায়। আমাদের সন্দেহ, বিদ্যাধর নিজেও তখন সেখানেই ছিল। অথবা দেহ সরিয়ে নেওয়ার খবর পেয়েছিল অন্য কারও কাছ থেকে। কী ভাবে সে জানল, সেটা তাকে গ্রেফতারের পরেই জানা যাবে।’’

পুলিশের ধারণা, ধরা পড়ার ভয়ে বিদ্যাধর মুম্বই ছাড়ে। কিন্তু একটি সূত্রে পুলিশ জেনেছে, বারাণসী যাওয়ার পথে বিদ্যাধর হঠাৎ আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে শিবকুমারকে বলে, মুম্বই ফিরে যাবে। আর শিবকুমার বারাণসীর পথে এগিয়ে যাবে। মৃতদের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডও তার কাছেই ছিল। কিন্তু সেই যাত্রাতেই মধ্যপ্রদেশের ইটারসি স্টেশনে বিদ্যাধরের কাছে একটি ফোন আসে। পুলিশের দাবি, ফোনটা করেছিলেন বিদ্যাধরের এক প্রতিবেশী। যাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, বিদ্যাধর ওই ব্যক্তিকে খুন করার কথা জানায়। মুম্বই এসে বিদ্যাধর দোষ কবুল করবে বলেও জানিয়েছিল ওই প্রতিবেশীকে। যদিও সে এখনও পলাতক।

তার মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশনে শেষ দেখিয়েছে ইটারসি স্টেশন। তদন্তকারীরা মনে করছেন, ‘‘মুখে বললেও হয়তো ট্রেন থেকে নামতে ভয় পেয়েছিল বিদ্যাধর। অথবা এটাও তার পরিকল্পনায় ছিল। সে ভেবেছিল, শিবকুমার গ্রেফতার হলে পুলিশকে জানাবে বিদ্যাধর ইটারসিতে নেমে গিয়েছে। পুলিশ সেখানে তাকে খুঁজতে যাবে আর সে ওই সুযোগে অন্যত্র পালিয়ে যাবে।’’ বিদ্যাধরের হাতে কয়েক হাজারের বেশি টাকা নেই। তাই সে আত্মীয় বা বন্ধুদের যোগাযোগ করতে বাধ্য হবে। সেই অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ।

তা হলে শুধু টাকার জন্যই হেমা-হরিশকে খুন হতে হল বিদ্যাধরের হাতে? এখনও পর্যন্ত পুলিশের তেমনটাই ধারণা। তবে প্রাণে মারার কথা সে হয়তো প্রথমে ভাবেনি। হুমকি দিয়ে টাকা আদায় হয়ে যাবে ভেবেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে হেমা বেঁকে বসায়।

মাথায় বিপুল ঋণের বোঝা নিয়ে বিদ্যাধর হেমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। বম্বে হাইকোর্টে চিন্তনের সঙ্গে হেমার বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে, জানত বিদ্যাধর। মামলার সূত্রেই হেমাকে কিছু তথ্য দিয়ে সাহায্য করার নামে চার্কপের স্টুডিওয় ডেকে পাঠায় সে। পুলিশের মতে, এই সময়েই হুমকি দিয়ে হেমার কাছে টাকা চায় বিদ্যাধর। কিন্তু বিচ্ছেদ মামলা সংক্রান্ত কোনও তথ্য না দেওয়ায় হেমার সঙ্গে বাদানুবাদ শুরু হয় বিদ্যাধরের। তর্ক গড়ায় হাতাহাতিতে। বিদ্যাধরকে চড় মারেন হেমা। পাল্টা মারে সে-ও। এর পরেই সে ক্লোরোফর্মে ভেজা কাপড় চেপে ধরে হেমার মুখে। সেখানে উপস্থিত হরিশকে সামলাতে প্রথমে বেগ পেতে হয়েছিল বিদ্যাধরেরর শাগরেদদের। কিন্তু শেষমেশ তাঁকে কাবু করে হাত-পা বেঁধে মুখে টেপ আটকে দেয় তারা।

স্টুডিওয় বিভিন্ন কাজের জন্য ক্লোরোফর্ম মজুত থাকত। কিন্তু কোনও মানুষকে অচেতন করার জন্য তা কতটা ব্যবহার করা উচিত, জানত না বিদ্যাধর। তাই মাত্রাতিরিক্ত ক্লোরোফর্ম মুখে চেপে ধরার ফলেই সম্ভবত হেমার আর জ্ঞান ফেরেনি। যত ক্ষণে বিদ্যাধর বুঝেছে, হেমা বেঁচে নেই, তখন হরিশকে খুন করা ছাড়া তাদের আর উপায় ছিল না। ঠিক কী কারণে হেমার মৃত্যু হয়েছে, তা জানানো হয়নি। ফরেন্সিক সায়েন্সেস ল্যাবরেটরি থেকে রাসায়নিক বিশ্লেষণের পরে সব স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

hema upadhay death mumbai
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy