সরাসরি নরেন্দ্র মোদীর নাম তোলেননি। তবে পরোক্ষে তাঁকে নিশানা করেই প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী দলের সাংসদদের বলেছেন, নেতাকে কর্মীরা ভয় পাবে কেন? ‘নেতা’ বলতে তিনি কাকে বুঝিয়েছেন, তা বিজেপির সকলের কাছেই স্পষ্ট। আডবাণীর বক্তব্য, অনুগত হওয়ার অর্থ কিন্তু নেতার সামনে ভীত, সন্ত্রস্ত হওয়া নয়। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেন, অটলবিহারী বাজপেয়ী বা আমিও তো নেতা ছিলাম। সে দিন কি আপনারা আমাদের ভয় পেতেন? ভয় না পেলেও মানতেন তো!
গত কালই লোকসভায় দাঁড়িয়ে স্পিকার সুমিত্রা মহাজন এবং সংসদীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমারকে সম্বোধন করে কার্যত বোমা ফাটিয়েছেন এই প্রবীণ নেতা। সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক হইচই হওয়ায় একই সঙ্গে বিরক্ত ও উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত কাল সরাসরি না মুখ খুললেও ৮৯ বছর বয়সী আডবাণী যদি কোনও ভাবে প্রকাশ্যে মোদী-বিরোধী বক্তব্য রাখেন, তা হলে ঘোর বিপদ। এমনিতেই নোট বদল নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছেন মোদী। সেই সময় আডবাণী মুখ খুললে দল এবং প্রধানমন্ত্রী— দু’জনেই তুমুল অস্বস্তিতে পড়বেন।
আডবাণীকে ঠান্ডা করতে তাই আজ সকাল থেকেই প্রধানমন্ত্রীর দূত হয়ে দফায় দফায় তাঁর সঙ্গে দেখা করেন বেঙ্কাইয়া নায়ডু, অনন্ত কুমার, বিজয় গয়ালরা। আডবাণী তাঁদের বলেন, যে দলটাকে নিজের হাতে গড়েছি, সেই দলটার ধ্বংস দেখতে চাই না। দলের সাংসদদের তিনি বুঝিয়েছেন, প্রকাশ্যে বিরোধিতার কথা বলে এই বয়সে আর যা-ই হোক, ত্রিপুরার প্রয়াত নৃপেন চক্রবর্তীর মতো বিক্ষুব্ধ নেতা হবেন না। তবে দলের সাংসদদের কাছে তাঁর উপদেশ, যেটা মনে করছেন, সেটা সাহসের সঙ্গে নেতাকে বলুন। ভয় পাবেন না। শিরদাঁড়া থাকলে সাহসের সঙ্গে নিজের মতামত জানান।
মোদীর নির্দেশে আজ আডবাণীর সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজনও। বিজেপি সূত্রের খবর, আডবাণী তাঁকে বলেছেন, আমি আপনাকে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করিনি। স্পিকারকে বিজেপির এই প্রবীণ নেতা বলেছেন, বিরোধীরা সংসদ অচল করে ঠিক করছে না। এটা যেমন ঠিক, তেমনই সরকারও সংসদ চালানোর ব্যাপারে কড়া হচ্ছে না। একই সঙ্গে তাঁর পরামর্শ, বিরোধীরা তেমন কোনও আচরণ করলে স্পিকার তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতেই পারেন।
আসলে নোট বদলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই বিজেপির নানা স্তরের নেতা-সাংসদ আডবাণীর কাছে এসে বলেছেন, আপনি মুখ খুলুন। এত বড় একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে মার্গদর্শক মণ্ডলীর সদস্য হিসেবে কেন আপনার মতামত নেওয়া হল না? আডবাণীর বক্তব্য, অন্যের কাঁধে বন্দুক রেখে লড়াই হয় না। রামমন্দির আন্দোলনের সময় হিমাচল প্রদেশের দলীয় বৈঠকে বাজপেয়ীজি তাঁর ভিন্ন মতের কথা জানিয়েছিলেন। সে দিন তাঁর বক্তব্য গৃহীত হয়নি সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন ছিল না বলে। কিন্তু ভিন্ন মত প্রকাশের সেই পরিসর সে দিন ছিল। পরবর্তী কালে বাজপেয়ী দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছেন। বিজেপিতে আজ সেই পরিবেশ ধরে রাখার দায়িত্ব কিন্তু সকলের।
কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব বেশ কিছু দিন থেকেই আডবাণীকে বিদ্রোহ ঘোষণা করার জন্য প্ররোচনা দিচ্ছিলেন। আহমেদ পটেল তাঁর সঙ্গে দেখাও করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আডবাণী রাজি হননি। তার পর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের মিডিয়া উপদেষ্টা, সাংবাদিক হরিশ খারে এক বার দেখা করেন আডবাণীর সঙ্গে। কিন্তু শত প্ররোচনাতেও আডবাণী কংগ্রেসের ফাঁদে পা দেননি। মোদীর কাজে অসন্তুষ্ট হলেও প্রকাশ্যে কখনও বিরোধী বক্তব্য রাখেননি। ললিত-মোদী কাণ্ডে সুষমা স্বরাজ ও বসুন্ধরা রাজের ইস্তফার পক্ষে মত দিয়েছিলেন তিনি। সে বারও সরাসরি না বলে ঘুরিয়ে বলেছিলেন, ‘‘হাওয়ালা কাণ্ডে অভিযোগ ওঠার পরে ইস্তফা দিয়েছি। নির্দোষ প্রমানিত হওয়ার পরেই সংসদে এসেছিলাম।’’
আডবাণীর ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এই নেতা ভাল করেই জানেন যে, মোদী তাঁকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করবেন না। পরের লোকসভা ভোটে বয়সের কারণে মোদীর রাজ্য গাঁধীনগর কেন্দ্র থেকে আর প্রার্থীও হবেন না তিনি। কিন্তু তাঁর ছেলে বা মেয়েকে দলের টিকিট দিতে রাজি নন বিজেপি সভাপতি তথা মোদীর অন্যতম সেনাপতি অমিত শাহ। এই অবস্থায় দলে তাঁর ঘনিষ্ঠেরা বলছেন, বিজেপি নামক দলটির শ্রীবৃদ্ধির অন্যতম রূপকার কিন্তু যে কোনও দিন ক্ষোভে ফেটে পড়তে পারেন। অপেক্ষা সঠিক সময় ও সুযোগের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy