প্রচারে ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল। নিজস্ব চিত্র
খাড়োরা গ্রামের খিলেশ ওয়ার খিলখিলিয়ে হাসে।
গেল মরসুমে ধান চাষের আগে ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন খিলেশের বাবা। সেটা আর শোধ করতে হবে না। শোধ করার টাকা অবশ্য ছিল না তা নয়। সরকার মাফ করেই দিল যখন, ওই টাকায় গাড়ি কিনে রায়পুরে ট্যাক্সি চালাবে খিলেশ।
রায়পুর শহর থেকে বেরিয়ে বলোদা বাজারের রাস্তায় খাড়োরা গ্রামে একা খিলেশদের নয়, হাজার দুয়েক চাষির ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ মাফ করে দিয়েছে নতুন কংগ্রেস সরকার। ৬,১০০ কোটি টাকা খরচ করে গোটা রাজ্যে ১১ লক্ষ কৃষকের ঋণ মকুব হয়েছে। বিদ্যুৎ বিল অর্ধেক হয়েছে। সেচ ঋণও মকুব হবে। ধান বেচে আগে কুইন্টাল প্রতি ১,৭৫০ টাকা মিলত। এখন মিলছে ২,৫০০। আবেগের ঠেলায় খিলেশ পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমার কৃতিত্বও মুখ্যমন্ত্রীকে দিতে চায়। সেটা দিল্লি থেকে ঠিক হয়, বলায় খিলেশ বলে, ‘‘ও সব জানি না। দেখছি ভূপেশ বাঘেল মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই তেলের দাম কমছে। সেটাই বলব!’’
এই না হলে ‘মধুচন্দ্রিমা পর্ব’! ১৫ বছরের বিজেপি সরকারকে হটিয়ে ছত্তীসগঢ়ে ডিসেম্বরে শপথ নেওয়া কংগ্রেস সরকারের ‘হানিমুন পর্ব’ যে এখনও কাটেনি, রাজধানীতে পা দিলেই তা মালুম হয়। সবাই খুশি। এমনকি ঘোর নরেন্দ্র মোদী-ভক্তরাও মানছেন, বিদ্যুতের বিল অর্ধেক হওয়ায় সুরাহা হয়েছে।
এই লোকসভা ভোটের সেমিফাইনাল ছিল গত বছরের নভেম্বরের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট। তার মধ্যে হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্য— ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে কংগ্রেস বিজেপিকে হারিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। তিন রাজ্যের হাল হকিকত দেখতে বেরিয়ে প্রথম আসা ছত্তীসগঢ়ে। মধ্যপ্রদেশের কমল নাথ বা রাজস্থানের অশোক গহলৌতদের মতো ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল রাজ্যের বাইরে তেমন ওজনদার নাম নয়। কিন্তু তিন রাজ্যের মধ্যে ছত্তীসগঢ়েই সব থেকে বড় জয় পেয়েছিল কংগ্রেস।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বাঘেল হাসেন। বলেন, ‘‘আমি ছোট মানুষ! খেতে কাজ করে, হাল-ট্রাক্টর চালিয়ে বড় হয়েছি, তার সঙ্গে পড়াশোনা। ওই জন্যই সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকি।’’ নিজেকে ‘ছোটা আদমি’ বলাটা যত না বিনয়, তার চেয়েও বেশি কটাক্ষ। কারণ বিজেপির আগের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ তাঁকে ‘ছোটা আদমি’ বলেছেন। টুইটারে নরেন্দ্র মোদীর দেখাদেখি বিজেপি নেতারা নিজের নামের আগে যখন ‘চৌকিদার’ লিখছেন, বাঘেল লিখছেন ‘ছোটা আদমি’।
চাষি পরিবার থেকে উঠে আসা ওবিসি নেতা ভূপেশ রায়পুরে রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্বামী আত্মানন্দের অনুগামী। কিন্তু কংগ্রেসের নেতারা বলেন, বাঘেলের মেজাজ বাঘেরই মতো। ভয়ডর নেই। রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন। সরকার দাবি না মানলে সঙ্গে সঙ্গে
ধর্নায় বসে পড়েছেন। বিজেপি সরকার তাঁর নামে মামলা করেছিল, ভূপেশ জামিন না নিয়ে জেলে চলে গিয়েছিলেন। কংগ্রেস নেতা শৈলেশ নীতিন ত্রিবেদী বলেন, ‘‘এক কালে যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি ছিলেন। ৫৭ বছর বয়স হোক আর মুখ্যমন্ত্রীর গদিতেই বসুন, ভূপেশ বাঘেল এখনও যুব কংগ্রেস নেতাই রয়ে গিয়েছেন।’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে বিধানসভায় কংগ্রেসের ৯০টি আসনের মধ্যে ৬৩টিই নিয়ে এসেছিলেন বাঘেল। ত্রিভুবনেশ্বর সিংহ দেও, তমরধ্বজ সাহুরা দাবিদার হলেও তাই মুখ্যমন্ত্রীর আসনে তিনিই বসেন। কিন্তু গত এক দশকে লোকসভায় ছত্তীসগঢ়ের ১১টি আসনের মধ্যে ১০টিই বিজেপির দখলে। বিজেপি এ বার ১০টি আসনেই নতুন প্রার্থী দিয়েছে। বাঘেলের সামনে চ্যালেঞ্জ, ১১টিতে ১১টিই জিতে নিজেকে ফের প্রমাণ করা।
ছত্তীসগঢ়ের ৩৬ শতাংশ মানুষ ওবিসি। কিন্তু ওবিসি-দের মধ্যে আবার দুটি ভাগ। কুর্মি ও সাহু। বাঘেল কুর্মি। কিন্তু সাহু ভোটে ভাঙন ধরাতে চাইছে বিজেপি। নরেন্দ্র মোদী ছত্তীসগঢ়ে এসে বলেছেন— এ রাজ্যে যারা সাহু, গুজরাতে তারাই মোদী। আর রাহুল গাঁধী সব মোদীকে গালমন্দ করছেন।
মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বাঘেল হাত খুলে দানছত্র করেছেন। নিন্দুকেরা বলেন, রাজকোষ প্রায় ফাঁকা করে ফেলেছেন তিনি। কিন্তু তার পরেও ১১-য় ১১, নিদেনপক্ষে ১০ না হলে ‘মধুচন্দ্রিমা’ মোহ কাটতে বেশি সময় লাগবে না। আর সেটা হলে, বাঘেলও জানেন— মুখ্যমন্ত্রী পদের অন্য দাবিদারেরাও তাঁদের লুকনো বাঘনখ বের করে ফেলতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy