বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে পদপিষ্টের ঘটনায় বুধবার ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত আরও ৩৩ জন। নিহতদের মধ্যে ফুচকা বিক্রেতার ছেলে, বছর চোদ্দোর স্কুলছাত্রী, সদ্য ভিন্রাজ্যে চাকরিতে যোগ দেওয়া তরুণীও রয়েছেন। কেউ আবার হারিয়েছেন একমাত্র ছেলেকে। এমনই এক তরুণের নাম ভূমিক। বয়স ২১। বাড়ির কাউকে না জানিয়ে বুধবার দুপুরে বন্ধুদের সঙ্গে হইহই করে স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন ওই তরুণ। কিন্তু ঘরে ফেরা হল না তাঁর।
বুধবার সন্ধ্যায় একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছোতেই ভেঙে পড়েছে ভূমিকের পরিবার। বেঙ্গালুরুর ভিত্তল মাল্য রোডের বৈদেহী হাসপাতালে ছেলের দেহ নিতে যান বাবা-মা। তখনও যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না, ভূমিক আর নেই। ছেলেকে জড়িয়ে মা কেঁদে চলেন, ‘‘চিনু, ওঠ। চল বাড়ি যাই!’’ ছেলেকে ছোট থেকে খুবই যত্নে বড় করেছেন বাবা-মা। এমনকি বয়স ২১ হলেও সে যত্নে কখনও কমতি ছিল না, এমনটাই জানালেন বাবা-মা। বুধবার বাড়িতে না জানিয়েই ১০ জন বন্ধুর সঙ্গে দল বেঁধে স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন ভূমিক। ৩৩ হাজার লোকধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামের বাইরে তত ক্ষণে প্রায় দু’লক্ষ মানুষ জড়ো হয়েছেন। স্টেডিয়ামের ছোট গেট খুলতেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। তখনই জনসমুদ্রের জেরে বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান ভূমিক।
আরও পড়ুন:
২১ বছরের ওই কলেজপড়ুয়ার এক বন্ধুর কথায়, ‘‘জানি না কখন, কী ভাবে এমন ঘটে গেল! যখন ওকে খুঁজে পেলাম, তখন ও অচেতন অবস্থায় রাস্তায় পড়েছিল। জামাকাপড় ছিঁড়ে গিয়েছিল। পুলিশকে সাহায্য করতে বললে প্রথমে তারা বিশেষ পাত্তা দেয়নি। পরে পুলিশের গাড়িতে চড়িয়ে তারা আমাদের হাসপাতালে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।’’ সময়মতো চিকিৎসা পেলে হয়তো প্রাণে বেঁচে যেতেন তরুণ, এমনটাই মনে করছেন ভূমিকের বন্ধুরা। ভূমিকের মা-ও দুষছেন কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাকেই। তাঁর কথায়, ‘‘ওই এলাকায় কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তাৎক্ষণিক ভাবে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে এমনটা হত না।’’
একই সুর বিধ্বস্ত বাবার গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘আগে জানলে ওকে যেতেই দিতাম না।’’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ময়নাতদন্ত ছাড়াই ছেলের দেহ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ওই পরিবার। পুত্রহারা বাবার কথায়, ‘‘অন্তত ওর দেহটা আমাদের দিয়ে দিন। দয়া করে ময়নাতদন্ত করে ওর দেহ টুকরো টুকরো করবেন না। এখন মুখ্যমন্ত্রী, উপ-মুখ্যমন্ত্রী যিনিই আসুন না কেন, আমার ছেলেকে তো ফিরিয়ে আনতে পারবেন না!’’ উল্লেখ্য, নিহতদের পরিবার ও আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। হাসপাতালের কর্মীরা মুখ্যমন্ত্রীকে আনতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় নিহতদের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত হয় বলে অভিযোগ।
দীর্ঘ ১৭ বছর অপেক্ষার পর অবশেষে ১৮ তম আইপিএল জিতেছে রয়াল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)। বিরাট কোহলিদের সঙ্গে উৎসবে শামিল হতে বুধবার বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম এবং তার বাইরে লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। সেখানেই ধাক্কাধাক্কিতে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। ১১ জনের মৃত্যু হয়। বুধবারই বেঙ্গালুরুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ‘‘এই মর্মান্তিক মুহূর্তে যাঁরা তাঁদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাঁদের সকলের প্রতি আমার সমবেদনা। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’’