Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Singhu

Singhu Clash: ধৃত আরও ১, অনুতপ্ত নয় সিংঘুর ‘খুনি’

পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে সর্বজিৎ সিংহ নামে ওই নিহঙ্গ শিখ। দায় নিয়েছে সিংঘু সীমানায় ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যাকাণ্ডের।

ফাইল চিত্র

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২১ ০৭:০৫
Share: Save:

নীল পাগড়ি পরা, গলায় গেরুয়া উত্তরীয় জড়ানো লোকটি যখন সাংবাদিকদের সামনে হাজির হল, তখন তার দু’পাশে ছোটখাটো ভিড়। ‘নিহঙ্গ’ গোষ্ঠীর শিখেদের সেই ভিড়েও অন্তত দু’জনের হাতে তলোয়ার। ‘‘আপনি কি অনুতপ্ত?’’— সাংবাদিকদের প্রশ্নটা শুনে নির্লিপ্ত ভাবে নীল পাগড়ি জবাব দিল, ‘‘না।’’ গত কাল এর একটু পরেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে সর্বজিৎ সিংহ নামে ওই নিহঙ্গ শিখ। দায় নিয়েছে সিংঘু সীমানায় ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যাকাণ্ডের।

দিল্লিতে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত কৃষকদের প্রতিবাদ-মঞ্চের অদূরেই গত কাল ভোর ৫টা নাগাদ উদ্ধার হয়েছিল একটি মৃতদেহ। বাঁ হাত এবং ডান পা কাটা অবস্থায় পুলিশের লোহার ব্যারিকেড থেকে ঝুলছিল দেহটি। কাটা হাতটা ঝোলানো ছিল ঠিক পাশেই। পরে জানা যায়, বছর পঁয়ত্রিশের ওই নিহত যুবকের নাম লখবীর সিংহ। পেশায় শ্রমিক, দলিত সম্প্রদায়ের লখবীর কেন সিংঘুতে এসেছিলেন, তার সদুত্তর এখনও মেলেনি। নিহঙ্গ গোষ্ঠীর নেতা পন্থ অকালি বলবিন্দর সিংহ গত কাল দাবি করেছিলেন, লখবীরকে পবিত্র ধর্মগ্রন্থের ‘অমর্যাদা’ করতে দেখেছিলেন নিহঙ্গদের কয়েক জন। এর পরে তাঁকে ‘শাস্তি’ দেওয়া হয়। বেশ কিছু ভিডিয়ো ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে। কোনওটিতে দেখা যায়, রক্তাক্ত লখবীরকে উল্টো করে ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোনওটিতে আবার লখবীরের মরণযন্ত্রণার ভিডিয়ো তুলতে দেখা যায় কয়েক জনকে।

পঞ্জাবের গুরুদাসপুরের বাসিন্দা সর্বজিৎকে আজ সাত দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে স্থানীয় আদালত। সোনীপতের ডিএসপি বীরেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘জিজ্ঞাসাবাদে সর্বজিৎ আরও চার জনের নাম জানিয়েছে। তারাও এই ঘটনায় জড়িত বলে ইঙ্গিত মিলেছে। সর্বজিতের কাছ থেকে খুনের অস্ত্র এবং সেই সময়ে সে যে পোশাকটি পরেছিল, তা উদ্ধার করতে হবে।’’ এ দিকে, আজ অমৃতসরের অমরকোট গ্রামে নারায়ণ সিংহ নামে আরও এক নিহঙ্গ শিখ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। সিংঘুর হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন হিসেবে তাঁরও নাম উঠে এসেছিল। গ্রেফতারির পরে নারায়ণ দাবি করেন, গত দশ মাস ধরে কৃষকদের আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত। তাঁর গোষ্ঠী কৃষকদের জন্য লঙ্গরও খুলেছিল।

সংযুক্ত কিসান মোর্চা যদিও গত কালই দাবি করেছিল, নিহঙ্গ গোষ্ঠী এবং নিহত ব্যক্তির সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। আজ ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েত বলেন, ‘‘যা ঘটেছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের আন্দোলনে এর কোনও বিরূপ প্রভাব পড়বে না।’’ তবে গোটা ঘটনায় অস্বস্তিতে কৃষক নেতারা। বিজেপির প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রতনলাল কটারিয়া বলেছেন, ‘‘সংযুক্ত কিসান মোর্চা এই ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। তালিবানি কায়দায় লখবীর সিংহকে খুন করা হয়েছে।’’ কৃষক নেতারা জানিয়েছেন, বিক্ষোভস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। বাড়ানো হবে স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যাও। আজ সুপ্রিম কোর্টে জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আর্জি জানিয়ে একটি আবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লির সীমানা থেকে সমস্ত বিক্ষোভকারীকে সরিয়ে দেওয়া হোক। স্বাতী গয়াল এবং সঞ্জীব নেওয়ার তাঁদের ওই আবেদনে বলেছেন, ‘‘প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্রাক্টর মিছিল, এক মহিলার ধর্ষণ এবং তা ধাপাচাপা দেওয়া, লখবীর সিংহের খুনের মতো অনেক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে ওই বিক্ষোভ ঘিরে। প্রতিবাদীরা লক্ষ লক্ষ দেশবাসীর জীবন বিপন্ন করছেন। অতিমারি পরিস্থিতিতে এমন টানা বিক্ষোভ চলতে পারে না।’’

বিজেপি নেতা তথা জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী কবীন্দ্র গুপ্ত আবার সিংঘুর ঘটনায় ভারত-বিরোধী ষড়যন্ত্র দেখছেন। তিনি বলেন, ‘‘গ্রেটা থুনবার্গ এবং মিয়া খলিফা (কৃষক আন্দোলন নিয়ে) টুলকিট প্রকাশ করেছিলেন। তার পরে এই ঘটনা ভারতে অস্থিরতা সৃষ্টির নতুন পন্থা হতে পারে। আমাদের সংস্কৃতিতে এ ভাবে কাউকে খুন করা যায় না।’’ বিএসপি নেত্রী মায়াবতী টুইটারে লিখেছেন, ‘‘পঞ্জাবের দলিত মুখ্যমন্ত্রীর উচিত, লখিমপুর খেরির ঘটনার মতো এ ক্ষেত্রেও নিহতের পরিবারের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা।’’

পঞ্জাবের তরণ তারণের চিমা-কলন গ্রামের বাসিন্দা লখবীরের আট, দশ এবং বারো বছরের তিন মেয়ে আছে। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েই দুশ্চিন্তায় পরিবার। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে ছ’মাস বয়স থেকে কাকার কাছে মানুষ লখবীর। তাঁর বোন রাজ কৌর জানান, কাজের সূত্রে লখবীর মাঝে মাঝেই বেশ কিছু দিনের জন্য বাড়িতে থাকতেন না। গত ৬ তারিখে বোনের কাছ থেকে ৫০ টাকা নিয়ে বলেছিলেন, গ্রাম থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে চব্বল নামে একটি জায়গায় যাচ্ছেন। সেই থেকে লখবীরের খবর পায়নি পরিবার। রাজ বলছিলেন, ‘‘তদন্ত হোক, কে ওকে লোভ দেখিয়ে দিল্লিতে নিয়ে গেল?’’ লখবীরের শ্বশুর বলদেব সিংহের দাবি, তাঁর জামাই মাদকাসক্ত ছিলেন। সেই কারণেই পাঁচ-ছ’বছর আগে স্ত্রী যশপ্রীত তাঁকে ছেড়ে চলে যান। স্বামীর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে অবশ্য বাড়িতে ফিরেছেন যশপ্রীত।

গ্রামের কেউ কেউ মনে করেন, লখবীর ধর্মগ্রন্থের অবমাননা করতেই পারেন না। তবু অভিযোগ উঠেছিল, দেহ এলেও লখবীরের শেষকৃত্য করতে দেওয়া হচ্ছে না। জাতীয় তফসিলি জাতি কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয় সাম্পলা পঞ্জাব পুলিশের ডিজি-কে বলেন, শেষকৃত্যে যাঁরা বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। শেষ পর্যন্ত আজ কড়া নিরাপত্তায় নিজের গ্রামে শেষকৃত্য হয় লখবীরের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Singhu Singhu Border hit and run
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE